সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় যান্ত্রিক ত্রুটি, নাশকতা থেকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব– প্রশ্ন সব নিয়েই। শেষটি প্রমাণিত হলে কেন্দ্র কি দায় এড়াতে পারে?
অাহমেদাবাদের সাম্প্রতিক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনাটির মতো ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা দেশে ইতোমধে্য ঘটেনি। উপরন্তু, ‘ড্রিমলাইনার’-এর মতো উড়ানের ক্ষেত্রে এটি বিশ্বের প্রথম দুর্ঘটনা। মার্কিনি বোয়িং কোম্পানির ড্রিমলাইনার সিরিজের উড়ানগুলিকে সবচেয়ে সুরক্ষিত বলে দাবি করা হয়। অবশ্য পরিসংখ্যান বলছে, ড্রিমলাইনার চালু হওয়ার পর এসব উড়ানে পৃথিবীজুড়ে মোট ৩০৪ বার নানা ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা গিয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়ার ‘বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার’ উড়ানটি কেন দুর্ঘটনায় পড়ল তা স্পষ্ট নয়। অাকাশে ওড়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধে্য এবং সামান্য ৬২৫ ফুট উচ্চতায় উড়ানের এইভাবে অাছড়ে পড়ার ঘটনা বিরল। এই অল্প সময়ের মধে্য যে বিমানটিতে কোনও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি তা স্পষ্ট। দু’টি ইঞ্জিন বিকল হয়েই এই দুর্ঘটনা, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা। বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স’ উদ্ধার হয়েছে। সেখানকার তথ্য উদ্ধার করে হয়তো দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। বিমানটির দু’টি ইঞ্জিন একসঙ্গে কেন বিকল হল, তার সম্ভাব্য কারণগুলি নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। গোড়ায় মনে করা হচ্ছিল পাখির ধাক্কায় হয়েছে; তদন্ত কিছুটা এগতেই অবশ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে সেই তত্ত্ব খারিজ করছেন। তবে টেক অফের পরের মুহূর্ত থেকেই পাইলটরা অার বিমানটিকে উপরে তুলতে পারছিলেন না। অর্থাৎ, যে কোনও কারণেই হোক বিমানের ইঞ্জিন দু’টি বন্ধ হয়ে যায়। এর পিছনে বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবজনিত সমস্যা থাকতে পারে। অন্তর্ঘাত বা নাশকতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গোয়েন্দা এজেন্সিগুলি তদন্ত শুরু করেছে। অাবার পাইলট বা গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার-সহ রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের কোনও ভুলেও ইঞ্জিন বিকল হতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে ঘটনাপ্রবাহ থেকে রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটির বিষয়টিই প্রবলভাবে সামনে অাসছে।
বিমানটি সকালে প্যারিস থেকে দিল্লি ফিরেই অাহমেদাবাদে এসেছিল। দু’-ঘণ্টার মধে্য লন্ডনের পথে উড়েছিল। ১২ বছরের পুরনো বিমানকে এত অল্প সময়ের মধে্য ঠিকভাবে ওড়ার জন্য প্রস্তুত করা গিয়েছিল কি না প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। এক ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ‘ভাইরাল’ হয়েছে। তঁার দাবি, দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ অাগে তিনি ওই বিমানেই দিল্লি থেকে অাহমেদাবাদে আসেন। পথে তিনি উড়ানটিতে একাধিক ত্রুটি লক্ষ করেন। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে ইঞ্জিন দু’টি বিকল হওয়ার সম্ভাবনাও সামনে এসেছে। অাহমেদাবাদ এয়ারপোর্টে ঠিকভাবে জ্বালানি ভরা হয়েছিল কি না, প্রশ্ন উঠছে। বিমানটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ‘ফিট’ সার্টিফিকেট পেয়েছিল কি না, ধোঁয়াশা তা নিয়েও। রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকলে সরকারের দায় এড়ানো অসম্ভব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.