সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পরিচয় করুন ‘নিশকা’র সঙ্গে। ভারতীয় অর্থনীতিতে স্বর্ণমুদ্রার প্রচলনের ইতিহাস বদলে দিয়েছে বৃত্তাকার, মাঝে ছিদ্রযুক্ত, সোনার তৈরি এই ‘গেমচেঞ্জার’। এতদিন মনে করা হত, ভারতে স্বর্ণমুদ্রার চল হয়েছে কুষাণদের আমলে। ইতিহাস বই ঘাঁটলেও এই তথ্য পাবেন। আবার অতি আধুনিক চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করলেও সে এই মুখস্থবিদ্যাই আওড়াবে। কিন্তু এই সমস্ত ধ্যান-ধারণা বদলে দিয়েছে ‘নিশকা’। ‘নিশকা’-র আবিষ্কারই প্রমাণ করেছে, কুষাণদের রাজত্বের (খ্রিস্টীয় প্রথম-তৃতীয় শতাব্দী) আগেও এদেশে সোনার মুদ্রার ব্যবহার করা হত। কেবল ‘কারেন্সি’ হিসাবে নয়, সম্পত্তির পরিমাপক, ধর্মীয় প্রথা সংক্রান্ত নিবেদন এমনকি সামাজিক মর্যাদারও মাপকাঠি হিসাবে ব্যবহৃত হত স্বর্ণমুদ্রা। যার নাম ‘নিশকা’।
জানা গিয়েছে, কুষাণ আমলেরও প্রায় ৩,০০০ বছর আগে থেকে ভারতে ‘নিশকা’র ব্যবহার হত। অর্থাৎ হরপ্পা সভ্যতার সময় এবং তার পরে বৈদিক যুগেও এই ধরনের মুদ্রার চল ছিল এদেশে। ‘নিশকা’ই হল ভারতের প্রাচীনতম স্বর্ণমুদ্রা। সম্প্রতি প্রমাণ-সহ এই দাবিই জনসমক্ষে এনেছেন দেশের অন্যতম সেরা প্রত্নতত্ত্ববিদ বি আর মণি। আর তাঁর এই দাবির জেরেই এক লহমায় বদলে গিয়েছে দেশের ইতিহাস। বা বলা ভালো, দেশের অর্থনীতির সাবেকি পরিচয়, যেখানে স্বর্ণমুদ্রার প্রচলনের কাহিনি এতকাল ভিন্নরূপ ছিল।
সম্প্রতি নয়াদিল্লির ন্যাশনাল মিউজিয়াম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মণি তুলে ধরেছেন তাঁর ‘আবিষ্কার’-এর বৃত্তান্ত। পদ্মভুষণ-জয়ী কৈলাশনাথ দীক্ষিত থেকে শুরু করে দেশের সেরার সেরা ইতিহাসবিদ, প্রত্নতত্ত্ববিদদের সামনে তিনিই হাজির করেছেন ‘নিশকা’কে। ২০০৩ সালে রামমন্দির জন্মভূমি বলে পরিচিত জমিতে এলাহাবাদ হাই কোর্টের নির্দেশে খনন চালানো প্রত্তত্ত্ববিদদের দলের প্রধান মণির দাবি, ‘নিশকা’কে ‘বিডস’ বা ‘পঁুতি’ হিসাবেও সেই যুগে পরিচয় দেওয়া হত। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে লোথালে খননের সময়ই এরকম অনেক ‘পঁুতি’ পাওয়া গিয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদ এসআর রাও লোথালে খনন চালিয়ে এগুলি আবিষ্কার করেন। এদের বলা হত ‘‘মাইক্রো-বিডস’’। ব্যাস ছিল ০.২৫ মিমি, অর্থাৎ খুবই ছোট।
পরবর্তীকালে মহেঞ্জোদারো (সিন্ধ, পাকিস্তান), রাখিগড়ি (হরিয়ানা)-তে হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন স্থানে খনন চালিয়ে বৃত্তাকার এবং মাঝে গর্তের মতো ছিদ্রযুক্ত বিভিন্ন ওজনের স্বর্ণমুদ্রা মিলেছিল। আবার পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মাণ্ডিতেও একই রকম মুদ্রার অস্তিত্ত্ব পেয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা, হরপ্পা যুগের বলে মনে করা হত সেগুলি। মণির মতে, ‘‘কোনও বিত্তশালী ব্যক্তি ঠিক কতটা বিত্তশালী, নিশকা-র মাধ্যমে (সম্পত্তি ১০০ নিশকা না ১,০০০ নিশকা) তা মাপা হত। মণি বলেন, ‘‘আমাদের সভ্যতার ইতিহাস নিছক কল্পনার উপর ভিত্তি করে রচিত হয়নি। হরপ্পা-পূর্ব সময়ে নানা ভাবে নিশকা-র অস্তিত্ত্বের উল্লেখ মিলেছে। কখনও ঋগ্বেদে, কখনও অর্থর্ব বেদে, কখনও পতঞ্জলীর মাহাভাষে্য, আবার কখনও পাণিণির কাজে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.