সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঠিক যেভাবে ইরানের পরমাণু শক্তিধর হওয়ার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইজরায়েল, ৮০-র দশকের শুরুর দিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ঠিক একই নীতি নেওয়া হয়েছিল। কাহুটায় পাকিস্তানের পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ধ্বংস করতে তৈরি ছিল হামলার ব্লুপ্রিন্ট। শত্রুকে তছনছ করতে ভারতকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল ইজরায়েলও। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার। ইরানের মাটিতে ইজরায়েলের হামলার পর দীর্ঘ বছরের পুরনো সেই অতীত খুঁড়লেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
ইরান ও ইজরায়েলের ভয়াবহ যুদ্ধের মাঝে গত ১৫ জুলাই অজানা সেই ইতিহাস তুলে ধরে হিমন্ত লিখেছেন, ‘ক্ষণিকের কূটনৈতিক স্বস্তির জন্য ভারত দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার ঐতিহাসিক সেই সুযোগ নষ্ট করে।’ তিনি জানান, সেই সময় ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ নিশ্চিত করেছিল কাহুটাতে ইউরেনিয়ান সমৃদ্ধকরণ কার্যকলাপ শুরু করেছে পাকিস্তান। নিশ্চিত খবর পাওয়ার পর, পাকিস্তানের ওই ঘাঁটি ধ্বংস করতে তৎপর হয় ভারত। নয়াদিল্লিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ইজরায়েল। কীভাবে, কোথায়, কখন হামলা চালানো হবে তারও ব্লুপ্রিন্ট সাজিয়ে ফেলা হয়। ঠিক ছিল ইজরায়েলের এফ-১৬ ও এফ-১৫ যুদ্ধ বিমান ভারতের আকাশসীমা ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালাবে। এমনকী প্রাথমিকভাবে এই হামলার অনুমোদনও দিয়ে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, গুজরাটের জামনগর বায়ুসেনা ঘাঁটি ব্যবহার করে চালানো হবে এই হামলা।
শর্মার দাবি অনুযায়ী, ইন্দিরা গান্ধী এই হামলায় শিলমোহর দিলেও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে ভারত। এরপর ১৯৮৪ সালে তাঁর পুত্র রাজীব গান্ধী ক্ষমতায় এলেও বিশ্ব নেতাদের চাপের মুখে পড়ার ভয়ে, তিনিও এই পরিকল্পনাকে পুরোপুরি ঠাণ্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেন। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ওই সময় পাকিস্তানের পরমাণু শক্তিধর হওয়ার ঘটনাকে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিপজ্জনক হিসেবে দেখছিল ইজরায়েল। ফলে পাক ঘাঁটি ধ্বংস করতে ভারতের সঙ্গে মিলে এই হামলার ছক কষে তারাও। ১৯৭৯ সালে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়ে সতর্ক করে একটি চিঠি লেখেন। যেখানে পাকিস্তান লিবিয়ায় পরমাণু অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। মধ্যপ্রাচ্য পরমাণু শক্তিধর হলে ইজরায়েলের অস্তিত্ব সংকট তা বেশ বুঝতে পারেন তেল আভিভের শাসক। যার জেরেই ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৈরি হয় হামলার পরিকল্পনা।
কিন্তু কেন সেই সময় এই হামলা থেকে পিছু হঠে ভারত। জানা যায়, আশির দশকে ভারতের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না। তখন পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করে সদ্য বাংলাদেশ গঠন হয়েছে। পশ্চিমে খলিস্তানিদের দাপাদাপি তখন মারাত্মক আকার নিয়েছে। উত্তরে জম্মু ও কাশ্মীরেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সন্ত্রাসবাদের রক্তবীজ। রাজনৈতিকভাবেও অশান্ত ছিল গোটা দেশ। শুধু তাই নয়, সেই সময়ে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল আমেরিকা। ওয়াশিংটনের স্বার্থ ছিল, পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে আফগানিস্তানে নিজেদের অধিকার ফলানো। ফলে ভারতের আশঙ্কা ছিল, এই ধরনের হামলা হলে আমেরিকা নয়াদিল্লির উপর পালটা পদক্ষেপ নিতে পারে। তাছাড়া ১৯৭৪ সালের ১৮ মে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতে প্রথম পরমাণু বোমা পরীক্ষা ‘অপারেশন স্মাইলিং বুদ্ধ’র পর মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর কড়া নজর ছিল ভারতের উপর। ফলে গোটা পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে হামলার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে ভারত। যার ফল, নির্ঝঞ্ঝাটে কাহুটাতে পরমাণু বোমা তৈরি করে ফেলে পাকিস্তান। এরপর বালোচিস্তানের রাস কো পাহাড়ি অঞ্চলে ১৯৯৮ সালের ২৮ মে পরিমাণু বোমার সফল পরীক্ষা করে তারা। তার আগেই অবশ্য ওই বছরের ১১ ও ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে পোখরানে সফল পরমাণু বোমার পরীক্ষা করেছিল ভারত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.