সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইয়েমেনের জেলে মৃত্যুর প্রমাদ গুণছেন ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়া। আগামী ১৬ জুলাই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে চলেছে তাঁর। কেরলের বাসিন্দা নিমিশার প্রাণ বাঁচাতে এবার প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন কংগ্রেস মহাসচিব কেসি বেণুগোপাল। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠি লিখে তাঁর আর্জি, ইয়েমেনে বিচারের নামে প্রহসন হচ্ছে। নিমিশার মৃত্যুদণ্ড আটকাতে হস্তক্ষেপ করুন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠি এদিন এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন কংগ্রেস নেতা। একইসঙ্গে লিখেছেন, ‘নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড ন্যায়বিচারের চরম অবমাননা। বিদেশের মাটিতে তিনি অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা এবং ঘরোয়া নির্যাতনের শিকার। তাঁকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এই ফাঁসি আটকাতে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছি।’ একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উদ্দেশে চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আগামী ১৬ জুলাই কেরলের নিমিশার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। অবিলম্বে এই মৃত্যুদণ্ড আটকানোর জন্য আপনার কাছে আর্জি জানাচ্ছি। চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, ‘ইতিমধ্যেই অ্যাকশন কাউন্সিল এবং তার পরিবার ‘ব্লাড মানি’ স্বীকার করার জন্য ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে যা তাঁর প্রাণরক্ষা করতে পারে। তবে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ ও আভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এই আলোচনার পথে বাধা সৃষ্টি করছে।’ এরপরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর অনুরোধ এই বিষয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করুন এবং যাবতীয় কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিন।
The death sentence against Nimisha Priya is a grave travesty of justice. She is a victim of unimaginable cruelty and domestic abuse on foreign soil, driven to the brink.
She doesn’t deserve to die.
I’ve written to the PM seeking urgent intervention to prevent her execution.
— K C Venugopal (@kcvenugopalmp)
উল্লেখ্য, এক ব্যক্তিকে হত্যার অপরাধে ২০১৭ সাল থেকে ইয়েমেনের জেলে বন্দি রয়েছেন নিমিশা। ২০১৮ সালে এই মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় ইয়েমেনের আদালত। তাঁর প্রাণ বাঁচাতে এত বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে এসেছে নিমিশার পরিবার। প্রবাসী ভারতীয় ওই যুবতীর প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছলে তা খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট রশিদ মহম্মদ আল আলিমি। এই পরিস্থিতিতে প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড রদ করতে তৎপর হয় বিদেশমন্ত্রক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত সরকারের সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
কেরলের পালাক্কড় জেলার বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া ২০০৮ সাল থেকে ইয়েমেনের এক হাসপাতালে কাজ করতেন। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী ও কন্যা ভারতে ফিরে এলেও নিমিশা সেখানে থেকে যান। উদ্দেশ্য ছিল ইয়েমেনে ক্লিলিক খোলা। সেখানে তালাল আবদো মেহদি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। দুজন মিলে সেখানে এক ক্লিনিক খোলেন। পরে এই ক্লিনিকের অংশীদারিত্ব নিয়ে অশান্তি বাধে দুজনের মধ্যে। নিমিশার পাসাপোর্ট কেড়ে নেয় সে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে কোনও ফল না হওয়ায়। অন্য পথে হাঁটেন তিনি।
এর পর ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ওই ব্যক্তিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন নিমিশা প্রিয়া। উদ্দেশ্য ছিল, অভিযুক্ত ঘুমিয়ে পড়লে পাসপোর্ট উদ্ধার করবেন। তবে ওষুধের ওভারডোজের কারণে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। এই অবস্থায় অন্য একজনের সাহায্য নিয়ে মেহদির দেহ টুকরো করে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন নিমিশা। এবং ইয়েমেন থেকে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান। বিচারপর্বে ২০১৮ সালে ইয়েমেনের আদালত নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তাঁর প্রাণরক্ষায় সবরকম চেষ্টা করেন নিমিশার মা প্রেমা কুমারী। ভারত সরকারও তাঁর পাশে দাঁড়ায়। এমনকি সাজার বিরুদ্ধে বিগত কয়েক বছর ঘরে অনেকগুলি আন্তর্জাতিক সংগঠন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.