সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কূটনৈতিক পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে, নিমিশার মৃত্যুদণ্ড আটকানোর এখন একমাত্র উপায় ‘ব্লাড মানি’। তবে সেখানেও প্রতি পদে আসছিল বাধা। এহেন পরিস্থিতিতেই কেরলের বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়াকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলিম ধর্মগুরু কান্দাপুরম এপি আবুবকর মুসলিয়ার। ইয়েমেনের ধর্মীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন তিনি। নিমিশাকে বাঁচানোর এটাই শেষ উপায় বলে মনে করা হচ্ছে।
আগামী ১৬ জুলাই ইয়েমেনে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা কেরলের বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়ার। গত সোমবার শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিয়েছে, ‘যা ঘটছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু আমাদেরও কূটনৈতিক পন্থা অবলম্বনের একটা সীমা রয়েছে। তার বাইরে সরকার যেতে পারে না।’ আদালতে কেন্দ্রের তরফে আরও জানানো হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে নিমিশার প্রাণরক্ষার একমাত্র উপায় হল মৃতের পরিবারকে ‘ব্লাড মানি’ বা ‘রক্তের দাম’ নিতে রাজি করানো। যদিও সেক্ষেত্রে অর্থের পরিমাণ কত হবে তা আলোচনা করতে হবে দুই পরিবারকে। উল্লেখ্য, ইয়েমেনে ফাঁসির বিকল্প হিসেবে ‘ব্লাড মানি’র নিয়ম চালু রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। সেক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কত হবে তা চূড়ান্ত করবে মৃতের পরিবার। মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকা নিমিশার পরিবারের কাছে এটাই একমাত্র আশা। তবে সেখানেও নানা বাধার মুখে পড়তে হচ্ছিল মৃতের পরিবারকে। এবার সেই পথেই নিমিশাকে বাঁচাতে মাঠে নামলেন ধর্মগুরু মুসলিয়ার।
জানা গিয়েছে, ৯৪ বছর বয়সি মুসলিয়ার ভারতের মুফতি ই আজম উপাধি ধারন করেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বিশাল। তিনি ইয়েমেনের ইসলামি নেতৃত্বের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। যাকে খুনের অপরাধে নিমিশার মৃত্যুদণ্ড সেই তালাল আবদো মেহেদির পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছেন। মুসলিয়ারের লক্ষ্য যে কোনও পথে মৃতের পরিবারকে ব্লাড মানি নিতে রাজি করানো।
উল্লেখ্য, এক ব্যক্তিকে হত্যার অপরাধে ২০১৭ সাল থেকে ইয়েমেনের জেলে বন্দি রয়েছেন নিমিশা। ২০১৮ সালে এই মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় ইয়েমেনের আদালত। তাঁর প্রাণ বাঁচাতে এত বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে এসেছে নিমিশার পরিবার। প্রবাসী ভারতীয় ওই যুবতীর প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছলে তা খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট রশিদ মহম্মদ আল আলিমি। এই পরিস্থিতিতে প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড রদ করতে তৎপর হয় বিদেশমন্ত্রক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত সরকারের সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
কেরলের পালাক্কড় জেলার বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া ২০০৮ সাল থেকে ইয়েমেনের এক হাসপাতালে কাজ করতেন। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী ও কন্যা ভারতে ফিরে এলেও নিমিশা সেখানে থেকে যান। উদ্দেশ্য ছিল ইয়েমেনে ক্লিলিক খোলা। সেখানে তালাল আবদো মেহদি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। দুজন মিলে সেখানে এক ক্লিনিক খোলেন। পরে এই ক্লিনিকের অংশীদারিত্ব নিয়ে অশান্তি বাধে দুজনের মধ্যে। নিমিশার পাসাপোর্ট কেড়ে নেয় সে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে কোনও ফল না হওয়ায়। অন্য পথে হাঁটেন তিনি। ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ওই ব্যক্তিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন নিমিশা প্রিয়া। উদ্দেশ্য ছিল, অভিযুক্ত ঘুমিয়ে পড়লে পাসপোর্ট উদ্ধার করবেন। তবে ওষুধের ওভারডোজের কারণে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। এই অবস্থায় অন্য একজনের সাহায্য নিয়ে মেহদির দেহ টুকরো করে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন নিমিশা। এবং ইয়েমেন থেকে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান। বিচারপর্বে ২০১৮ সালে ইয়েমেনের আদালত নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তাঁর প্রাণরক্ষায় সবরকম চেষ্টা করেন নিমিশার মা প্রেমা কুমারী। ভারত সরকারও তাঁর পাশে দাঁড়ায়। এমনকি সাজার বিরুদ্ধে বিগত কয়েক বছর ঘরে অনেকগুলি আন্তর্জাতিক সংগঠন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.