সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই লক্ষ্যে গত এক বছরে ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের জঙ্গল অধ্যুষিত প্রত্যন্ত এলাকায় লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী। মঙ্গলবার কমিউনিস্ট অফ ইন্ডিয়া (মাওবাদী) স্বীকার করল, এই দমন অভিযানে বড়সড় ক্ষতি হয়েছে নকশালপন্থী গেড়িলা বাহিনীর। মৃত্যু হয়েছে ৩৫৭ জন দলীয় সদস্যের। ‘কৌশলগত ব্যর্থতার’ জেরে সরকারের ‘অপারেশনে কাগ্গার’ সফল হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
সূত্রের খবর, গত ২৩ জুন মাও কেন্দ্রীয় কমিটি একটি সার্কুলার প্রকাশ করে। সেখানে পুলিশ-সিআরপিএফের অভিযানে তাদের ব্যাপক ক্ষতি এবং কৌশগত ব্যর্থতার কথা মেনে নিয়েছে তারা। সব থেকে বড় আঘাত এসেছে ২১ মে, যেদিন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন দলের সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু। পুলিশকর্তাদের দাবি, বাসবরাজুর মৃত্যুর পরে দলের অন্দরে বৈঠক হয়। এর পরেই ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিয়ে সার্কুলার জারি করা হয়। মাও নেতৃত্ব এই ব্যর্থতার জন্য “গোপন কার্যপদ্ধতি, গেরিলা যুদ্ধের নিয়ম এবং কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রণীত কৌশলের অনুপযুক্ত বাস্তবায়ন”কে দায়ী করেছে।
মাও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশিত সার্কুলারের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ৩৫৭ জন মাও সদস্য নিহত হয়েছেন। এদের মধ্য়ে মহিলা ১৩৬ জন। রাজ্য ভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী ছত্তিশগড়ে ২৮১, তেলেঙ্গানায় ২৩, ওড়িশায় ২০, অন্ধ্র-ওড়িশা বিশেষ অঞ্চলে ৯ পশ্চিমঘাট এলাকায় ১ এবং পাঞ্জাবে ১ জন নিহত হয়েছেন। মাও সংগঠনটির দাবি, এদের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে অসুস্থতার কারণে, একজন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
গেড়িলা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সার্কুলারে আরও জানানো হয়েছে, মৃতদের মধ্যে ১৬ জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ২৩ জন জেলা কমিটির সদস্য়, ৮৩ জন আঞ্চলিক কমিটির সদস্য, ১৩৮ জন সাধারণ সদস্য। এছাড়াও ১৭ জন পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মির (পিএলজিএ) সদস্য। যৌথ বাহিনীর অবশ্য জানিয়েছে, কমিউনিস্ট অফ ইন্ডিয়া (মাওবাদী)-র দাবির চেয়ে বেশি মাও নেতা-কর্মীর মৃত্যু হয়েছে গত দেড় বছরে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি অবধি ৪৬০ জনকে খতম করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার বার্তা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপর থেকেই ছত্তিশগড়, ঝড়খণ্ডের মতো মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে মাওবিরোধী অভিযান ব্যাপক গতি পেয়েছে। গোয়েন্দাদের মতে, বর্তমানে ছত্তিশগড় তেলেঙ্গানা সীমানাবর্তী কারেগুট্টা পাহাড়ি এলাকা মাওবাদীদের অন্যতম শক্তঘাঁটি। এই এলাকা থেকে মাওবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে প্রায় ৩ হাজার আধাসেনাকে নামানো হয়েছে। ২১ এপ্রিল থেকে ওই অঞ্চলে শুরু হয়েছে অভিযান। এখনও পর্যন্ত ওই এলাকাজুড়ে অভিযান চালিয়ে ৩১ জনের বেশি মাওবাদীকে হত্যা করা হয়েছে। ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানা সীমানা ঘেঁষা পাহাড় ও জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়ে থাকা ১০০০ মাওবাদীকে ধরতে নামানো হয়েছে প্রায় ২০ হাজারের বেশি যৌথ বাহিনীকে। অভিযানে ইতিমধ্যেই খতম করা হয়েছে মাওবাদীদের সাধারণ সম্পাদক বাসবরাজুকে, যার মাথার দাম ছিল ১.৫ কোটি টাকা। নিরাপত্তরক্ষীদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয়েছে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুধাকরেরও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.