সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত বছরও ভোট দিয়েছিলেন, তবে এবার ভোটার তালিকা সংশোধনে নাম কাটা গিয়েছে আবদুলের (নাম পরিবর্তিত)। শুধু আবদুল নন, ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন এমন অজস্র নাম বাদ দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। এবার নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভোটার তালিকা সংশোধনে বিহারে বাদ পড়তে পারে অন্তত ৩৫ লক্ষ নাম। এই তথ্য সামনে আসতেই কমিশনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বিরোধী শিবির।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। যাকে বলা হচ্ছে ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী- সহ অযোগ্য ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন। তারা বলেছে, যাতে শুধুমাত্র যোগ্য ভারতীয় নাগরিকরাই ভোটদানের অধিকার পান সেটা নিশ্চিত করতেই এই সংশোধনী। সেই পক্রিয়া শুরু হতেই ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার দশা। কমিশনের দাবি, এখনও অবধি প্রায় ৮০ শতাংশ নাম গণনা সম্পূর্ণ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ লক্ষের বেশি ভোটারের নাম বাদ পড়তে চলেছে। এর মধ্যে ১২.৫ লক্ষ ভোটার মৃত, কিছু ভোটার অনেক আগে বিহার ছেড়েছেন অথচ নাম রয়ে গিয়েছে তালিকায়। কমিশন সূত্রের জানা গিয়েছে, এই ভুয়ো ভোটার বাছতে গিয়েই ভূরি ভূরি বিদেশি ভোটারের হদিশ মিলছে। এদের অধিকাংশই বাংলাদেশ বা নেপালের বাসিন্দা। কেউ কেউ রয়েছেন মায়ানমারের।
এই ঘটনায় বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটার তালিকায় যদি বহিরাগতদের নাম থেকে থাকে তবে তারা এল কীভাবে? কার অঙ্গুলিহেলনে এইসব বহিরাগতদের নাম উঠে এল ভোটার তালিকায়? এই ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিকে নাম ছাড়াই বাছাই করতে গিয়ে বহু নাগরিকের নামও বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। যাঁদের বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। তেমনই আবদুল নামে এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমকে জানান, ”গত বছরেও আমি ভোট দিয়েছিলাম। এবার আমার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।” অভিযোগ, শুধুমাত্র পুর্ণিয়া জেলায় ৪০০ মুসলিমের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের ঘটনায় বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছে বিরোধী দলগুলি।
জানা যাচ্ছে, তালিকাভুক্ত ভোটার বা নতুন আবেদনকারীদের বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনের সময় বুথ স্তরের অফিসাররা একটি ফর্ম দিচ্ছেন। সেই ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে। এর পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকত্বের সেলফ অ্যাটেস্টেট ঘোষণাপত্রও জমা দিতে হবে। সমস্যা হল কমিশন যে নথিগুলিকে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হিসাবে চাইছে সেই নথিগুলি জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমজনতাকে। নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হিসাবে মোট ১১টি নথির তালিকা দিয়েছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ১১টি নথির তালিকায় রয়েছে- সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পরিচয়পত্র, ১ জুলাই ১৯৮৭-র আগে জারি হওয়া কোনও সরকারি নথি, জন্ম সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, স্থায়ী বাসিন্দা সার্টিফিকেট, বনপালের সার্টিফিকেট, কাস্ট সার্টিফিকেট, এনআরসি অন্তর্ভুক্তি, পারিবারিক রেজিস্টার এবং জমির দলিল। কিন্তু অনেক ভোটারের কাছে এই ১১ নথির কোনওটিই নেই। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বা রেশন কার্ডকে বৈধ নথি হিসাবে এই তালিকায় যুক্ত করা যায় কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে। কিন্তু সে বিজ্ঞপ্তি এখনও দেয়নি কমিশন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.