বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার অভিযোগ ছিল, কমিশনের ওই আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে এনআরসি চালু করার অভিযোগও করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর সেই অভিযোগ যে নেহাত মুখের কথা ছিল না, হাতেনাতে তার প্রমাণ মিলল। মনোজ আগরওয়াল একজন দুর্নীতিগ্রস্থ আমলা, রাজ্যের কোনও তদন্তকারী সংস্থা নয়, সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ করেন দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদের উচ্চপদস্থ এক কর্তা। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি বিপুল দুর্নীতি করেছেন। দিল্লির একটি সংবাদসংস্থা জানাচ্ছে, দিল্লির প্রাক্তন ভূমি কমিশনারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। বর্তমান মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক, তাঁর স্ত্রী রুমা ও শ্বশুর এমপি গর্গের আয় বর্হিভুত সম্পত্তিরও হদিশ পায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
১৯৯০ সালের বেঙ্গল ক্যাডারের আইএএস অফিসার মনোজ আগরওয়াল। বিভিন্ন সময় তিনি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্ব সামলেছেন। বর্তমানে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। সম্প্রতি কোলাঘাটের একটি গেস্ট হাউসে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বন্ধ ঘরে বৈঠক করেন মনোজ আগরওয়াল। এই বৈঠকের পরেই তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আইএএস অফিসার দুর্নীতিগ্রস্ত এবং তথ্য প্রমাণ রাজ্য সরকারের কাছে আছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। পালটা মনোজের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের প্রমাণ দাবি করে বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগের প্রমাণ দেওয়ার আগেই মনোজের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে সরগরম সমাজমাধ্যম। যদিও সংবাদ প্রতিদিন এর সত্যতা যাচাই করেনি।
সমাজমাধ্যমে মনোজ আগরওয়ালের ছবি দেওয়া একটি ভাইরাল পোস্টে লেখা হয়েছে, সিবিআইয়ের চার্জশিটেই উল্লেখ করা হয়েছে, দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সঙ্গে যুক্ত থাকাকালীন এই অফিসার প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রয় করেন। যা তার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সিবিআই চার্জশিটে জানায, কোটি কোটি টাকা মূল্যের ছ’টি জমি কেনেন তিনি। দ্বারকায় তিনটি ছাড়াও গুরগাঁও, নয়ডা ও কলকাতার অভিজাত এলাকায় সম্পত্তি ক্রয় করেন। এর অধিকাংশই স্ত্রী রুমা আগরওয়ালের নামে কেনা হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করে সিবিআই। নয়ডার এক প্রোমোটারের সাহায্যে তিনটি জমি বা ফ্ল্যাট কেনেন। সিবিআই চার্জশিটে জানায়, ৯০ সালের ২০ আগস্ট থেকে ২০০৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তিনি ও তার স্ত্রী ৪৫.৮০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি কেনেন। যদিও তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মতি দেয়নি। ফলে তদন্ত থমকে যায়।
এবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বিরুদ্ধে সরব হতেই বিষয়টি সামনে আসে। এমন একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক রাজ্যের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে তা কতখানি স্বচ্ছ হবে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক কারবারিরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.