Advertisement
Advertisement

অপমান আর আগুনের জ্বালায় যে দুর্গে আজও হানা দেন পদ্মিনী!

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ”হিন্দুস্তানে এক ফুল ফুটেছিল- তার দোসর নেই, জুড়ি নেই!” কী কুক্ষণে পিয়ারী বেগমের বাঁদীর এই গান কানে গিয়েছিল বাদশা আলাউদ্দিন খিলজির, কে জানে! গানটা তাঁর ভাল লেগে গিয়েছিল। সঙ্গে গেঁথে গিয়েছিল মাথায় গানের কথাগুলো- ”কার সাধ্য সে রাজার বাগিচায় সে ফুল তোলে!” না কি কথাগুলো ঘা দিয়েছিল তাঁর অহং-এ? বোধ হয় দ্বিতীয়টাই […]

The Haunted History Of Chittorgarh Palace, Rajasthan
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 11, 2016 6:58 pm
  • Updated:June 11, 2016 6:58 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ”হিন্দুস্তানে এক ফুল ফুটেছিল- তার দোসর নেই, জুড়ি নেই!”
কী কুক্ষণে পিয়ারী বেগমের বাঁদীর এই গান কানে গিয়েছিল বাদশা আলাউদ্দিন খিলজির, কে জানে! গানটা তাঁর ভাল লেগে গিয়েছিল। সঙ্গে গেঁথে গিয়েছিল মাথায় গানের কথাগুলো- ”কার সাধ্য সে রাজার বাগিচায় সে ফুল তোলে!”
না কি কথাগুলো ঘা দিয়েছিল তাঁর অহং-এ?
বোধ হয় দ্বিতীয়টাই হবে! শুধুমাত্র রূপে পাগল হয়ে পদ্মিনীকে পেতে চাওয়া এবং ব্যর্থ হলে চিতোরগড় ছারখার করে দেওয়া- প্রেম এতটাও বিধ্বংসী হতে পারে না। বিধ্বংসী হয় কেবল মোহ, অচরিতার্থ কামনা।
আলাউদ্দিন খিলজির সেই অচরিতার্থ কামনার আগুনে যেমন পুড়েছিল চিতোরগড়, তেমনই গড়ের নারীরাও! কাহিনি বলে, রানি পদ্মিনীর সঙ্গে বারো হাজার নারী বরণ করে নিয়েছিলেন আগুনের দুঃসহ তাপ। জহরব্রত করে বিধর্মী শত্রুর লালসা থেকে আত্মসম্মান রক্ষা করেছিলেন তাঁরা।
কিন্তু, তাঁদের আত্মা গড় ছেড়ে কোথাও যায়নি! কোথাও যাননি রানি পদ্মিনীও!

Advertisement

chittor1_web
শুনতে অবাক লাগলেও চিতোরগড় বরাবরই রহস্যে মোড়া! মানুষে যেখানে যেতে পারে না, সেখান থেকে বার বার অনেকেই ঘোরাফেরা করেছেন চিতোরগড়ে। তাঁদের কেউ বা দেবী, কেউ বা অভিশপ্ত প্রেতিনী!
সেই আবির্ভাব প্রথম ঘটেছিল যুদ্ধের সময়ে। আলাউদ্দিন খিলজি পণ করেই এসেছেন, চিতোরকে জনশূন্য করে পদ্মিনীকে তিনি বন্দিনী করে রাখবেন হারেমে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে তখন বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে গড়। এমন সময়েই ঘটে সেই অলৌকিক কাণ্ড!
”হঠাৎ পায়ের তলায় মেঝের পাথরগুলো যেন কেঁপে উঠল; তারপর মহারানা অনেকখানি ফুলের গন্ধ আর অনেক নূপূরের ঝিন-ঝিন শব্দ পেলেন। কারা যেন অন্ধকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে! মহারানা বলে উঠলেন, কে তোরা? কি চাস? চারিদিকে-দেওয়ালের ভিতর থেকে ছাদের উপর থেকে, পায়ের নিচে থেকে শব্দ উঠল- ম্যায় ভুখা হুঁ!”

chittor2_web
রাণা লক্ষ্মণসিংহকে যিনি দেখা দিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন চিতোরের কুলদেবী উবরদেবী! তবে, পদ্মিনীর স্বামী খোদ রাণা ভীমসিংহর মন থেকে সন্দেহ যায়নি। রাজপুত বীরেরা যখন যুদ্ধে যাচ্ছেন, তখন আবার দেখা দিয়েছিল সেই মূর্তি। ভীমসিংহের মনে হয়েছিল, তিনি দেবী না পদ্মিনী?
রাণার যা-ই মনে হোক, যুদ্ধের খবর কিন্তু খারাপই আসতে থাকে গড়ে। নিজের জলমহলে বসে শোনেন পদ্মিনী কেবল তাঁকে রক্ষার জন্য হাসিমুখে প্রাণ দিচ্ছে রাজপুতানা! অবশেষে যখন তিনি বুঝতে পারেন, আর আশা নেই, তখন তৈরি হন।
”চিতোরের মহাশ্মশানের মধ্যস্থলে চিতোরেশ্বরীর মন্দিরে বারো-হাজার রাজপুত সুন্দরীর জহর-ব্রত আরম্ভ হল।… বারো হাজার রাজপুতের মেয়ে সেই অগ্নিকুণ্ডের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে গাইতে লাগল- লাজ হরণ! তাপবারণ! হঠাৎ একসময় মহা কল্লোলে চারিদিকে পরিপূর্ণ করে হাজার-হাজার আগুনের শিখা মহা আনন্দে সেই সুড়ঙ্গের মুখে ছুটে এল। প্রচণ্ড আলোয় রাত্রির অন্ধকার টলমল করে উঠল। বারো হাজার রাজপুতানীর সঙ্গে রানী পদ্মিনী অগ্নি-কুণ্ডে ঝাঁপ দিলেন- চিতোরের সমস্ত ঘরের সোনামুখ, মিষ্টি কথা আর মধুর হাসি নিয়ে এক-নিমেষে চিতার আগুনে ছাই হয়ে গেল।”

chittor3_web
কিন্তু, কোথাও গেল না! তারা অশরীরে, সবার অলক্ষ্যে থেকে গেল চিতোরেই!
আজও রাত নামলে চিতোরগড়ে সেই বারো হাজার রমণীর বিলাপের শব্দ শোনা যায়। তাঁরা কেঁদে কেঁদে অপমানের প্রতিকার চান!
বিশ্বাস না হলেও অনেকে চিতোরগড়ে দেখা পেয়েছেন রানি পদ্মিনীরও! রাজকীয় পোশাকে, অপূর্ব অলঙ্কারে শোভিতা এক নারী মাঝে মাঝেই দেখা দেন। ঠিক যেমনটা দেখেছিলেন রাণা ভীমসিংহ আর লক্ষ্মণসিংহ। কিন্তু, বর্তমান সময়ে যাঁরা দেখেছেন, চোখে পড়েছে সেই রমণীর মুখ আগুনে ঝলসানো! সেই রূপ সহ্য করা যায় না! পদ্মিনীর এই মর্মান্তিক দগ্ধ রূপ দেখেই অনেকে ভয়ে প্রাণত্যাগ করেছেন।

chittor4_web
তাই রাত নামলে কেউ চিতোরগড়ে যাওয়ার স্পর্ধা দেখান না! যে রূপ একসময়ে বিনাশ ডেকে এনেছিল চিতোরের, সেই রূপের দগ্ধাবশেষেই চিতোরকে অনুপ্রবেশকারীর হাত থেকে রক্ষা করতে চান পদ্মিনী! এমনটাই কাহিনি বলে!
তাঁর প্রতি সম্মানে আমাদেরও তাই সেখানে রাত নামলে না যাওয়াই উচিত হবে!

উদ্ধৃতি: রাজকাহিনী, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement