Advertisement
Advertisement
PM Modi

৭৫-এ মোদি, ফের চর্চায় অবসর জল্পনা, কী চলেছে বিজেপির অন্দরে?

বিজেপির অনেক নেতাই ৭৫-এর পর সক্রিয় থেকেছেন।

Truth behind PM Modi's retirement buzz on his 75th Birthday

ফাইল চিত্র।

Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:September 18, 2025 9:59 am
  • Updated:September 18, 2025 9:59 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বুধবার পঁচাত্তরে পা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর জন্মদিন ঘিরে বিজেপির তরফে দেশজুড়ে উৎসবের আবহ তৈরি করার চেষ্টা হলেও, একই সঙ্গে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে, পঁচাত্তরে পৌঁছনোর পর এবার কি তিনি লালকৃষ্ণ আডবানী বা মুরলী মনোহর জোশীর মতো ‘মার্গদর্শকমণ্ডলী’তে চলে যাবেন, না কি আরও কয়েক বছর সক্রিয় রাজনীতির মঞ্চেই নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন? বিজেপি ও আরএসএস শিবিরে বহুদিন ধরেই ঘুরেফিরে প্রশ্ন উঠছে, প্রবীণ নেতাদের কি নির্দিষ্ট বয়সসীমা পেরোলেই অবসর নেওয়া উচিত? এদিন সেটিই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

Advertisement

কিছু দিন আগে, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত ৭৫-এ অবসরের ইঙ্গিত দিয়ে মোদির উপর চাপ বাড়িয়েছিলেন। ছ’দিন আগে ভাগবত নিজে ৭৫-এ পা দিয়েছেন। জন্মদিনের আগে অবশ্য সংঘপ্রধান নিজের অবসরের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। তাতে খুশি হয়ে মোদি ভাগবতের জন্মদিনে বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিশাল নিবন্ধ লেখেন। সংঘপ্রধান নিজের অবসরের সম্ভাবনা এড়ালেও মোদির অবসর নিয়ে জল্পনা বিজেপিতে এবং সংঘে বন্ধ হয়নি।

বস্তুত, এই বিতর্কের সূত্রপাত ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়। মোদিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলে বিজেপির অনেক প্রবীণ নেতা দলের এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হন। সেই সময় থেকেই প্রচার হতে থাকে, ৭৫ বছর বয়সের পরে নেতারা সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াবেন। যদিও বিজেপির সংবিধানে এ নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক নীতি নেই। প্রবীণ সাংবাদিক ডি কে সিং জানিয়েছেন, দলীয় মুখপাত্ররা অফ দ্য রেকর্ড এই প্রসঙ্গ তুললেও তা কখনওই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। সেই সময় আডবানী, জোশী-সহ বেশ কয়েকজন বর্ষীয়ান নেতাকে ‘মার্গদর্শকমণ্ডলী’তে স্থান দেওয়া হয়, যদিও তাঁদের কার্যত কোনও সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। বলা যেতে পারে, জোর করে প্রাজ্ঞ দুই রাজনীতিককে ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাসে’ নির্বাসিত করা হয়। কমবয়সি প্রধানমন্ত্রী মোদির সামনে আডবানী, জোশীদের মতো প্রবীণ নেতারা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন। তাঁদের উপস্থিতিতে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে মোদির সমস্যা হতে পারে। সে কারণেই মোদির প্রধানমন্ত্রী পদকে দলেই নিরঙ্কুশ করতে এহেন সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এবার নিজের ক্ষেত্রে ‘৭৫-এ অবসর’ মেনে ক্ষমতা থেকে সরতে চাইবেন কি মোদি? কংগ্রেসের এক নেতা সোমবারই প্রশ্ন তুলেছিলেন যে বুধবার ৭৫ পূর্ণ করে মোদি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন কি না। এদিন, কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “নরেন্দ্র মোদি যতদিন রাজনীতিতে থাকবেন ততদিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই থাকবেন। এবং মোদির স্বেচ্ছাবসর হবে। মোদি অপরাজেয়।” শমীকের এই দাবি নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরে।

আসলে বিজেপির ভেতরেও অনেকেই মনে করেন, এটি আসলে ‘ভুয়ো বিতর্ক’। কারণ দলে এরকম কোনও বাধ্যতামূলক নিয়ম নেই। এক প্রাক্তন সাংসদের কথায়, প্রবীণদের মধ্যে কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ হলে তাঁদের টিকিট দেওয়া হয়েছে, আবার কারও ক্ষেত্রে দেওয়া হয়নি। সবটাই পরিস্থিতি নির্ভর। তবে তরুণ নেতাদের মতে, অবসরের একটা নির্দিষ্ট বয়স থাকা উচিত যাতে নতুন প্রজন্ম সুযোগ পায়। তবে, আনন্দীবেন প্যাটেল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ার সময় স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, তিনি ৭৫ পূর্ণ করছেন বলেই সরে যাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্যে তখনই বার্তা গিয়েছিল, দলে একপ্রকার বয়সসীমার প্রথা কার্যকর হচ্ছে। বাস্তবে দেখা গিয়েছে, তা সব সময় মেনে চলা হয়নি। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা ৭৮ বছর বয়সে পদ ছাড়েন, আবার অনেকে বয়সসীমা অতিক্রম করেও সক্রিয় ভূমিকা বজায় রেখেছেন। ফলে এই ‘নিয়ম’ কতটা প্রযোজ্য, তা রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অদিতি ফড়নবিস মনে করেন, ৭৫ বছরে অবসর নেওয়ার বিষয়টি নিছক প্রতীকী। তাঁর কথায়, কখনও প্রবীণ নেতাদের সরিয়ে নতুন মুখ আনার প্রয়োজন হলে এই যুক্তি খাড়া করা হয়েছে, আবার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় ব্যতিক্রমও দেখা গিয়েছে। সাংবাদিক সুনীল গাতাড়ের মতে, এটি ছিল আসলে প্রবীণ নেতাদের সম্মানজনকভাবে সাইডলাইন করার নরম নির্দেশিকা, কঠোর নীতি নয়। বিজেপির শীর্ষনেতৃত্বের বক্তব্য সম্পূর্ণ আলাদা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির সংবিধানে ৭৫ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি পূর্ণ দায়িত্বে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement