সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৩১ জুলাই, ২০২৪। প্রকৃতির রুদ্ররোষে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল ‘ঈশ্বরের আপন দেশ’ কেরলের ওয়েনাড়ে। ভূমিধসে মৃত্যু হয়েছিল ২৭৬ জনের, নিখোঁজের সংখ্যা ছিল দুশোর বেশি। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার জঙ্গলঘেরা গোটা চারেক গ্রাম কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল রাতারাতি। এক বছর পর ভয়ংকর প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেশের আরেক প্রান্তে। উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে প্রলয়-রূপ নিল পাহাড়ি নদী ক্ষীরগঙ্গা। হড়পা বানে কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে ধারালি নামের একটি গ্রাম। কাছেই হর্ষিল সেনাছাউনির ১১ জন সেনাকর্মী নিখোঁজ হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা পাঁচে আটকে রইলেও নিখোঁজ ৫০ জনের বেশি। তাঁদের বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখন প্রশ্ন উঠছে, কেরল হোক দেবভূমি, কেন বারবার পাহাড়ের বসতি এলাকায় নেমে আসছে বিপর্যয়?
আসলে উত্তরকাশীতে বিধ্বংসী চেহারা নিয়েছে অতিভারী বারিধারা, ওরফে মেঘভাঙা বৃষ্টি। আবহাওয়া দপ্তরের সংজ্ঞা অনুয়ায়ী, ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এক ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হলে তাকে মেঘভাঙা বৃষ্টি বলে। এই বৃষ্টি থেকেই ক্ষীরগঙ্গায় জন্ম হয় হড়পা বাণের। তারপরই মঙ্গলবার দুপুরের রাক্ষুসে কাণ্ড। জলস্রোতের সঙ্গে কাদা ও পাথরের ধেয়ে আসা তীর বেগে। জলে ভেসে গিয়ে, পলি ও পাথারে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় স্থানীয়দের। আসলে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলটি গাড়োয়াল হিমালয়ের কোলে অবস্থিত। যেখানে পাহাড়ের খাড়াই ঢাল, অস্থির শিলাস্তর এবং হিমবাহ-নির্ভর একাধিক খড়স্রোতা নদীর শিরা-উপশিরা বহমান। এমন ভূপ্রকৃতির কারণে ধারালী, হরসিল এবং গঙ্গোত্রীর মতো অঞ্চলগুলি ভূমিধস তৎসহ বন্যাপ্রবণ।
দেবভূমের এই অঞ্চলে ভাগীরথী, অলকানন্দা, মন্দাকিনী, ধৌলিগঙ্গা এবং যমুনার মতো নদীগুলি উপত্যকার মধ্য দিয়ে রাজ্যজুড়ে প্রবাহিত। হিমবাহ দ্বারা পুষ্ট এই নদীগুলি বর্ষাকালে তীব্র বৃষ্টিপাত এবং হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে ফুলেফেপে ওঠে। এর সঙ্গে বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস, পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ তৎসহ অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন। ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক ভঙ্গুরতাও ঘন ঘন দুর্যোগের দিকে পরিচালিত করে। ভারতে হিমালয়ের পাদদেশের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিরূপ, বায়ুপ্রবাহ এবং উচ্চতাভেদে তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে প্রায়ই মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে হিমাচল প্রদেশ, সিকিম, উত্তরাখণ্ড-সহ হিমালয়-সংলগ্ন রাজ্যগুলিতে বিপর্যয় লেগেই থাকে।
২০১৩ সালের ১৬ জুন কেদারনাথে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছিল। মৃত্যু হয়েছিল অন্তত চার হাজার মানুষের। ২০২৪-এও হড়পা বান হয়েছে উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশে। প্রতি বছর বর্ষা এলেই তাই কাঁটা হয়ে বসে থাকে দেশের পাহাড়ের গ্রামগুলি। সভ্যতার অহঙ্কারি ভুল আর প্রকৃতির রুদ্ররূপের এই মৃত্যুচেতনা থেকে মানুষের যেন মুক্তি নেই!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.