Advertisement
Advertisement

Breaking News

Mamata Banerjee

শহিদ তর্পণ করে বিজেপিকে ছুড়ে ফেলার ডাক, একুশের মঞ্চে ছাব্বিশের ন্যারেটিভ সাজালেন মমতা

ইস্যু ধরে ধরে বিজেপিকে তোপ, কর্মীদের হাতে একাধিক অস্ত্র তুলে দিলেন মমতা।

21 July: Mamata Banerjee sets the narrative for 2026 assembly Elections
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:July 21, 2025 3:53 pm
  • Updated:July 21, 2025 5:32 pm  

অনুরাগ রায়: একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে জনসমুদ্র হবে, লক্ষ লক্ষ তৃণমূল কর্মী ধর্মতলা প্রাঙ্গণে জড়ো হবেন, সেসব বরাবরই প্রত্যাশিত। এবারও ব্যতিক্রম হল না। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, দূরদুরান্তের জেলা থেকে যে নেতা কর্মীরা এলেন, তাঁরা নেতৃত্বের কাছ থেকে সঠিক বার্তা পেলেন তো? এক কথায় বলতে গেলে, সেই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ। একুশের মঞ্চ থেকে জননেত্রী জনতার উদ্দেশে ছাব্বিশের বার্তা স্পষ্ট করে দিলেন। ভোটের দামামা বাজিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মীদের হাতে তুলে দিলেন একাধিক অস্ত্র।

Advertisement

ছাব্বিশের নির্বাচনে তৃণমূলের মূল অস্ত্র যে হতে চলেছে বাঙালি অস্মিতা সেটা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এদিনের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ছাব্বিশের নির্বাচনের ফল বেরনো পর্যন্ত ভাষা নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। বাংলা ভাষার উপর কোনওরকম সন্ত্রাস বরদাস্ত করা যাবে না। সেই মতো কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন মমতা। তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, ভাষার অপমান হলে দরকারে ফের ভাষা আন্দোলন হবে। এবং সেই আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হবে দিল্লি পর্যন্ত। আসলে তৃণমূল নেত্রী ভালোই জানেন, মাতৃভাষার প্রতি মানুষের আবেগের চেয়ে বড় কোনও আবেগ বা নির্বাচনী ইস্যু হতেই পারে না।

একুশের মতো সভা সাধারণত ন্যারেটিভ তৈরির মঞ্চ হিসাবে কাজ করে। মমতা বন্দ্যোপধ্যায়ও সেই ন্যারেটিভ সাজিয়ে দিলেন। বাংলা বনাম বহিরাগত ইস্যু শাসকদলকে একুশ এবং চব্বিশে সাফল্য এনে দিয়েছে। ছাব্বিশে সেই ন্যারেটিভকে আরও এগিয়ে মমতা বানিয়ে দিলেন, বাংলা এবং বাংলাভাষার শত্রুদের সঙ্গে বঙ্গবাসীর লড়াই। তবে সেই লড়াইয়ে হিন্দিভাষীরাও ব্রাত্য নন। এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, “বাংলায় হিন্দিভাষীরা হিন্দিতে কথা বললে সমস্যা নেই। অতীতে মহারাষ্ট্রে যখন হিন্দি বিরোধী আন্দোলন হয়েছে তখন এই বাংলাই প্রতিবাদ করেছিল।”

সেই সঙ্গে মমতার সংযোজন, ভিনরাজ্যে বাঙালিদের উপর অত্যাচার যেমন সহ্য করা হবে না, তেমনই ভোটার তালিকায় কোনওরকম কাটাছেঁড়া করলে জোরালো আন্দোলন হবে। দরকারে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও হবে। আসলে নির্বাচন কমিশন বিহারে যে নিবিড় সংশোধনের কাজটা করছে, সেটাকে তৃণমূল আগেই ঘুরপথে এনআরসির চেষ্টা হিসাবে দেখিয়েছে। আসলে বিহারের নিবিড় সংশোধনে অনেক সংখ্যালঘু, প্রান্তিক এবং গরিব মানুষের নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই আশঙ্কা এ রাজ্যের প্রান্তিক শ্রেণির ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে। সেই ভীতিকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি চেষ্টা এদিনের সভা থেকে করে গেলেন মমতা। সংখ্যালঘুদের মধ্যেকার এনআরসি ভীতি আগেও ডিভিডেন্ট দিয়েছে তৃণমূলকে। এবার সেই এনআরসি ভীতি বাসা বাঁধা শুরু করেছে রাজবংশী এবং মতুয়াদের মধ্যেও। সৌজন্যে, ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে মতুয়া ও রাজবংশীদের আক্রান্ত হওয়া। এবং কোচবিহারের বাসিন্দা উত্তম কুমার ব্রজবাসীর এনআরসি নোটিস পাওয়া। এই দুই অস্ত্রে সুকৌশলে একুশের মঞ্চ থেকে আরও একবার এনআরসি ভীতি উসকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

21 July: Mamata Banerjee sets the narrative for 2026 assembly Elections

গোটা দেশে বিজেপির সবচেয়ে বড় শক্তি হিন্দুত্ব এবং জাতীয়তাবাদ। মুখ্যমন্ত্রী এদিন এই দুই ইস্যুতেই গেরুয়া শিবিরকে বিঁধেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, অসমে কেন কালী মন্দির ভেঙে দেওয়া হয়? তুলে ধরলেন বাংলায় কীভাবে একের পর এক ধর্মীয় স্থান তৈরি হয়েছে। মমতার বক্তব্যে উঠে এল পুরীর জগন্নাথ ধাম। কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বরের স্কাই ওয়াক, জল্পেশ মন্দিরের স্কাইওয়াকের মতো ধর্মীয় স্থানের সংস্কারের প্রসঙ্গ। মমতা ঘোষণা করলেন, এবার দুর্গা অঙ্গন তৈরি হবে। দিন কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্গাপুরের সভায়, মা দুর্গা এবং মা কালীর নাম জপ করে গিয়েছেন। মমতা এদিন মোদির সেই ‘ব্যর্থ’ চেষ্টাকেও কটাক্ষ করে গেলেন। মঞ্চ থেকে মমতা বললেন, “টেলি প্রম্পটারে দু’লাইন বাংলা লিখে এনে বলে দিলেই বাঙালি হওয়া যায় না।’ আসলে একই সঙ্গে ধর্ম এবং বাংলার আবেগ অস্ত্রে মোদিকে বিঁধে গেলেন মমতা। জাতীয়তাবাদ ইস্যুতে মমতার বক্তব্য, “অপারেশন সিঁদুরে পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করা গেল না কেন? আসলে প্রধানমন্ত্রী মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় চলছেন।” এদিন সভামঞ্চে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী শহিদ জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ এবং পহেলগাঁও হামলায় মৃত বিতান অধিকারীর পরিবারের সদস্যদের হাজির করে তাঁদের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিলেন, সেটা এক কথায় মাস্টারস্ট্রোক।

এ তো গেল ইস্যু ধরে আক্রমণ। এই ধরনের সভা থেকে কর্মীদের চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে বক্তার বলার ধরণ এবং শরীরী ভাষাও গুরুত্বপূর্ণ। আর এই দুই ক্ষেত্রেই যে জননেত্রী ‘চ্যাম্পিয়ন’ সেটা আলাদা করে বলার দরকার পড়ে না। এদিনের সভাতেও আগাগোড়া চেনা রণংদেহী মেজাজে দেখা গেল মমতাকে। সঙ্গে মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মতো ভাষণ। নেত্রী কখনও বললেন, ছাব্বিশে আরও বেশি আসন পেতে হবে। উত্তরবঙ্গ যে তাঁর পাখির চোখ সেটা আরও একবার স্পষ্ট করে দিয়ে তিনি বলে গেলেন, এবার উত্তরে ৪০ আসন চায়। এসবের মাঝে আবার বাংলার বঞ্চনা ইস্যুও তুলে ধরেছেন তিনি। জোর গলায় তৃণমূল নেত্রীকে বলতে শোনা গেল, “বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাটি। শহিদের রক্তে তর্পণ করে বলছি, যতদিন দিল্লি থেকে উৎখাত না কর‍তে পারছি, ততদিন শান্ত হব না।” লড়াইয়ের মঞ্চে তিনি যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন সেটা কর্মীদের বোঝাতে ‘প্রিয় দিদি’ বললেন, “আমি একাই ১০ জনের সঙ্গে লড়ে নেব।” মমতা বোঝালেন, ছাব্বিশের লড়াইয়ে তিনি প্রস্তুত। বাঙালি অস্মিতা, এনআরসি, ভোটার তালিকার সংশোধন, কেন্দ্রের ব্যর্থতা, বাংলার বঞ্চনার মতো গুচ্ছ হাতিয়ার রয়েছে তাঁর হাতে। এবার কর্মীদেরও লড়াইয়ে নামতে হবে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement