এদিন ভারচুয়াল বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: চলতি মাসেই এসআইআর শুরু হতে পারে রাজ্যগুলিতে। এই মর্মে প্রতিটি রাজ্যে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যেই বাংলার একাধিক নাগরিককে এনআরসির নোটিস পাঠাচ্ছে বিজেপিশাসিত অসম সরকার। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে অত্যাচারের বড়সড় অভি্যোগ উঠেছে। সেই আবহেই দলের সাংসদ, বিধায়ক, জেলাস্তরের নেতাদের নিয়ে ভারচুয়াল বৈঠক করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এইসব ইস্যুতে আরও বেশি করে বিজেপি বিরোধিতায় শান দেওয়ার কথা বললেন তিনি। তাঁর নির্দেশ, বিজেপি নেতাদের দেখলে জয় বাংলা বলুন। ২৬-এর আগে দলে একতা বজায় রাখতে সর্বস্তরের নেতাদের সতর্ক করে বললেন, “আমি-তুমির রাজনীতি চলবে না।”
বিজেপি নেতারা ‘জয় বাংলা’ শব্দবন্ধের বিরুদ্ধে। বিজেপি নেতাদের দেখলে এবার থেকে সেই ‘জয় বাংলা’ বলার নির্দেশ দিলেন অভিষেক। নির্বাচন কমিশনকে কাজ চালাচ্ছে বিজেপি। বিএলও-দের ভূমিকা নিয়েও তিনি সন্দিহান। রাজ্যের ৮০ হাজার বুথে ছোট ছোট সভা করে মানুষের কাছে পৌঁছনোর বার্তা দিলেন তিনি। দলের মধ্যে রাজনীতি নয়। সকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই চলবে। সেই বার্তাও এদিন দিয়েছেন অভিষেক।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বাংলার পাওনা টাকা আটকে রেখে দিয়েছে। তারপরও রাজ্য সরকার নিজেদের টাকায় মানুষের জন্য উন্নয়নের কাজ করছে। সেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এসআইআর ইস্যু-সহ বাংলা ভাষার উপর বিজেপির আক্রমণের বিরুদ্ধেও প্রচার ও গর্জে উঠতে হবে। সেই নির্দেশও অভিষেক এদিন দিয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল, সোমবারই কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক, নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। উত্তরের জেলাগুলিতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করতে হবে। সেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। আজ, ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ দলের সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলর ও অন্যান্য নেতাদের নিয়ে ভারচুয়াল বৈঠক করেন। প্রায় নয় হাজার দলীয় নেতৃত্ব এদিন এই ভারচুয়াল বৈঠকে যোগ দেন। সেখানেই একাধিক বিষয়ে বার্তা দিলেন অভিষেক।
আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এখন থেকেই রাজ্যে ভোটের উত্তাপ বাড়তে শুরু করেছে। আরও নিবিড়ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছতে বার্তা দিলেন অভিষেক। বিহারে এসআইআর-এ ৬৫ লক্ষ মানুষের নাম ভোটার তালিকায় বাদ গিয়েছে। বাংলাতেও এসআইআর হবে খবর। বিজেপি বাংলায় হেরে ভোটার তালিকা থেকে মানুষের নাম বাদ দিতে নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগাচ্ছে। এদিন ফের সেই অভিযোগ করেছেন অভিষেক। দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “বিজেপি নেতারা বলছে ১ কোটি নাম বাদ যাবে। আমি বলছি ১ জনের বাদ দিয়ে দেখাক। তারপর কত বড় বিজেপি নেতা আছে, বাংলায় পা দিয়ে দেখাক। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে।”
রাজ্যে একের পর এক এনআরসি নোটিস পাঠানো হচ্ছে। কোচবিহারের মাথাভাঙার আরও একজন বাসিন্দা এদিন এনআরসি নোটিস পেয়েছেন বলে খবর। সেই ইস্যুতেও এদিন সরব হয়েছেন অভিষেক। তৃণমূলের নেতৃত্বকে আরও বেশি করে মানুষের পাশে থাকতে হবে। এনআরসি, এসআইআর ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করতে হবে বলে অভিষেক নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের নেতৃত্বকে এই বিষয়ে তিনি নজর দিতে বলেছেন। তিনি বলেন, “কে নাগরিক, সেটা ঠিক করবে বিজেপি? উত্তরবঙ্গের লোকেরা দেখুন বিজেপি কী করছে, আপনারা তো সাপোর্ট করেছেন। আমাদের সরকার দিচ্ছে, বিজেপি কেড়ে নিচ্ছে। অঞ্চল সভাপতিরা ৩০-৪০ জন করে লোক নিয়ে সভা করুন। মানুষকে বোঝান। বুথে বুথে সভা করুন। বিজেপিকে জবাব দিতে হবে।” বাংলা ভাষা বিরোধী হয়ে উঠছে বিজেপি। বাংলা নয়, বাংলাদেশি ভাষা বলে দিল্লি পুলিশ মন্তব্য করেছে। সেই বিষয়কে বিজেপি নেতৃত্ব সমর্থন করছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলার মানুষকে আরও বেশি করে একজোট করতে হবে। সেই কথাও এদিন বৈঠকে বলেছেন অভিষেক।
কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার পাওনা ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি হাজার টাকা এখনও আটকে রেখেছে। তারপর রাজ্যের উন্নয়ন থমকায়নি। বাংলার সরকার মানুষের উন্নয়নের জন্য নিজেদের অর্থে কাজ করছে। ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ নতুন এই প্রকল্প মানুষের উন্নয়নের জন্য ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। সেই কথাও এদিন জানিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। তিনি বলেন, “আমরা তো পেরেছি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ১৮ থেকে ১২ তে নামাতে। তাহলে এবার বিধানসভায় কেন ৭৭ থেকে ৪০-এর নিচে নামিয়ে আনতে পারব না?” “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল ইঞ্জিন সরকার অনেক শক্তিশালী।” সেই কথাও বলেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.