Advertisement
Advertisement
Alipore Zoo

অচেতন না করেই বাঘিনীর ইউএসজি, বেনজির পদক্ষেপ আলিপুর চিড়িয়াখানায়

ইউএসজি পরীক্ষার আগে বাঘিনীকে হাতের কাছে পেয়ে উপস্থিত কর্মীদের অনেকেই তার মাথায় ও গায়ে হাত বুলিয়ে দেন।

Alipore Zoo did USG on a Tigress without anesthesia
Published by: Amit Kumar Das
  • Posted:June 23, 2025 2:26 pm
  • Updated:June 23, 2025 2:26 pm   

নিরুফা খাতুন: হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। অ‌্যানাস্থেসিয়াও করতে হয়নি। খাঁচার মধ্যেই বাঘিনীর ইউএসজি পরীক্ষা হল আলিপুর চিড়িয়াখানায়। কর্তৃপক্ষের দাবি, ইউএসজি পরীক্ষার সময় সারাক্ষণই বাধ‌্য মেয়ের মতোই দাঁড়িয়ে ছিল বাঘিনী ‘পায়েল’।

Advertisement

২০১৬ সালে ওড়িশার নন্দনকানন থেকে বাঘ পরিবারের সংখ‌্যাবৃদ্ধির জন‌্য রয়‌্যাল বেঙ্গল বাঘিনী পায়েলকে নিয়ে আলিপুরে নিয়ে আসা হয়েছিল। তখন তার ভরা যৌবন। কিন্তু তারপরও আলিপুর কর্তৃপক্ষকে সুখবর দিতে পারেনি পায়েল। সেদিনের যুবতী পায়েলের বয়স এখন ১৭। ব‌্যাঘ্রকুলের জীবনকাল হিসাবে সে এখন বৃদ্ধা। এই বয়সে প্রজননের ক্ষমতা নেই। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, পায়েলের শরীর বেশ কিছুদিন  ধরে ভালো নেই। খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করছিল না। খাঁচায় খুব একটা নড়াচড়াও করতে দেখা যাচ্ছিল না। বেশির ভাগ সময় শুয়ে থাকত। বাঘেদের খাঁচা দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ‘কিপার’-দের বিষয়টি ভালো ঠেকেনি। তড়িঘড়ি তাঁরা চিড়িয়াখানার চিকিৎসকদের খবর দেন। খবর পেয়ে চিকিৎসকরা এসে খাঁচার বাইরে পায়েলকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারেন দ্রুত চিকিৎসার ব‌্যবস্থা করার প্রয়োজন। তবে, সবার আগে দরকার রোগনির্ণয় করা। যে জন‌্য রক্ত পরীক্ষা থেকে শুরু করে ইউএসজি সবকিছু করতে হবে।

কিন্তু এ তো মানুষ নয়! বাঘের ইউএসজি বলে কথা! ইচ্ছে হলেই গায়ে হাত দেওয়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব নয়। আগে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অ‌্যানাস্থেসিয়া করে অজ্ঞান করতে হবে। তবেই তার গায়ে হাত দেওয়া যাবে। কিন্তু পায়েলের ক্ষেত্রে তা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে খাঁচার মধ্যে রেখে অ‌্যানাস্থেসিয়া ছাড়াই ইউএসজি করা হয়েছে। যাকে পশু চিকিৎসার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ‌্য পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পায়েলের ইউএসজি পরীক্ষার বিষয়টি আগেই ছকে নিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। প্রথমে পায়েলের জন‌্য ‘সুইস খাঁচা’ নিয়ে এসে তাতে ঢোকানো হয় পায়েলকে। ‘কী’ হতে চলেছে প্রথমে বুঝতেই পারেনি ১৭ বছরের বৃদ্ধা বাঘিনী। সুইস খাঁচায় ঢুকেই সে দিব্যি গা এলিয়ে শুয়ে পড়ে। মানুষের ক্ষেত্রে বেডে শুয়েই ইউএসজি করা হলেও বাঘের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়। তাকে তুলে দাঁড় করানো প্রয়োজন। তাই ঠেলে তুলতে সুইস খাঁচার মধ্যে প্রথমে বাঘিনীকে একটি কোণে ঠেসে ধরা হয়। নিরুপায় হয়ে উঠে পড়ে বাঘিনি। খাঁচার জায়গা এতটাই সংকীর্ণ করে দেওয়া হয় যে চারপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর জায়গাটুকু ছিল না। কোনও ক্রমে সে দু পায়ে দাঁড়িয়ে পড়ে খাঁচা ধরে। নড়াচড়ার কোনও জায়গা নেই। ওইভাবে তাকে দাঁড় করিয়ে রেখে তবেই ইউএসজি করেন চিকিৎসকরা।

চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, ইউএসজি পরীক্ষার আগে বাঘিনীকে হাতের কাছে পেয়ে উপস্থিত কর্মীদের অনেকেই তার মাথায় ও গায়ে হাত বুলিয়ে দেন। সেই স্নেহ-ভালোবাসার স্পর্শে বৃদ্ধা বাঘিনী বাধ‌্য মেয়ের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। হুংকার গর্জন কিছুই ছিল না তার। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা অরুণ মুখোপাধ‌্যায় বলেন, পায়েলের জেনিটাইল অরগান সমস‌্যা রয়েছে। আলিপুরে চিকিৎসকদের পাশাপাশি বাইরে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছে। আগে খেতে পারত না। এখন খাওয়াদাওয়া করছে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ