রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বাংলায় দলের গোষ্ঠীকোন্দল ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা দিল্লির বিজেপি নেতৃত্ব ভালোই জানে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও তা অজানা নয়। রবিবার শাহর সভাতেও দলের ভাঙাচোরা সংগঠনকে জোড়াতালি দিতে মরিয়া হতে দেখা গেল বিজেপি নেতাদের। সভা থেকে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে অমিত শাহকে বলতে হল, “দিনরাত এক করে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিটা ভোটদাতার কাছে বিজেপির বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।”
আবার শাহর উপস্থিতিতেই নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার মারের পাল্টা মারের নিদান দিয়েছেন। বলেছেন, “কেউ মারতে এলে পালটা মারুন। আমি রাজ্য সভাপতি বলছি।” তারপর বললেন, “ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী পছন্দ হোক বা না হোক, তাঁকে জেতাতেই হবে। বিজেপির প্রতীকে কলাগাছ দাঁড়ালেও জেতাতে হবে।” গোষ্ঠীকোন্দল এমন জায়গায় গিয়েছে যে, দলের প্রার্থী নিয়ে যাতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ না হয় সেটা শাহর মঞ্চ থেকেই বার্তা দিতে হচ্ছে রাজ্য সভাপতিকে। উল্লেখ্য, এই সভা বাংলায় ঝিমিয়ে পড়া বিজেপি নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য ছিল বলেই মত পদ্ম শিবিরের। আর শাহের প্রত্যয়ী মনোভাব, সেই কাজ কিছুটা হলেও করতে পেরেছে। এমনই দাবি রাজ্য বিজেপি নেতাদের।
ছাব্বিশ যে বিজেপি নেতৃত্বের কাছে পাখির চোখ, সংগঠন যে শক্তিশালী করতে হবে। বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বার্তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের সাধারণ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে, এদিনের সভা থেকে বারংবার তা বলতে হয়েছে শাহকে। তাঁর ভাষণের শুরু থেকে শেষ, প্রতি মুহূর্ত পর্যন্ত উঠে এসেছে বাংলা জয়ের কথাই। আবার বিজেপির নিচুতলায় সংগঠনের দূরবস্থার বিষয়টি কার্যত উঠে এসেছে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসলের কথায়। বনসল বলেন, ”নিচুতলায় সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে।” জুন মাসের মধ্যে বুথ কমিটি গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কেন্দ্রীয় সরকারের ১১ বছরের সাফল্য-সহ সারা জুন মাস ব্যাপী জেলা ও মণ্ডলস্তরে সাংগঠনিক কাজকর্ম এবং কর্মসূচির গাইডলাইন এদিন দিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী।
সূত্রের খবর, শনিবার রাতে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এবং সুকান্ত মজুমদার ও শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করেন শাহ। রবিবার সকালেও একপ্রস্থ বৈঠক হয়। সেখানে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বঙ্গ বিজেপির সভাপতির বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে রাজ্য সভাপতি পদে ফের সুকান্তই থাকতে পারেন বলে খবর। আর শুভেন্দুর গুরুত্ব আগামী দিনে আরও বাড়বে বলেই স্পষ্ট করেছেন শাহ। উত্তরবঙ্গের বাড়তি দায়িত্ব পড়তে পারে শুভেন্দুর উপর। শুভেন্দুর ভাষণেও এদিন খুশি দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। এদিন শাহর সভায় হিন্দুত্বের লাইনে হেঁটেই দলকে চাঙ্গা করতে চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
বঙ্গ বিজেপির পরবর্তী রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা ঝুলে রয়েছে। ফলে সাংগঠনিকভাবে দলের ছন্নছাড়া অবস্থা। ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আর কয়েকমাস বাকি। এখনও পর্যন্ত ৪৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৯টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের নাম ঘোষণা হয়েছে। ৬০ শতাংশ বুথেও শক্তিশালী কমিটি নেই। ১৩০০ মণ্ডলের মধ্যে অধিকাংশ মণ্ডলেই সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে। তাই এদিন শাহকে সামনে রেখে সংগঠনকে জোড়াতালি দিতে মরিয়া চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতাদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.