সুলয়া সিংহ: ঐতিহ্যবাহী ফাটাকেষ্টর কালীপুজোয় এবার বড়সড় চমক। বদলে গেল প্রতিমাশিল্পী। এবার শিল্পী মিন্টু পালের হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমার মুখেও সামান্য বদল হয়েছে। যা বেশ মন ছুঁয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের। প্রতিমা ভক্তদের মন জয় করে কিনা, তারই অপেক্ষায় শিল্পী।
এতকাল শিল্পী মাধব পাল ফাটাকেষ্টর কালীপ্রতিমা তৈরি করতেন। তবে মাধববাবুর দাবি, এবার নাকি তাঁর সঙ্গে ক্লাবের তরফে কেউ যোগাযোগ করেননি। এবার শিল্পী মিন্টু পাল তৈরি করেছেন প্রতিমা। এমন ঐতিহ্যবাহী পুজোর প্রতিমা তৈরি করে আপ্লুত শিল্পী। তিনি বলেন, “ক্লাব কর্তৃপক্ষ প্রতিমা তৈরির প্রস্তাব দিয়ে বলেন মুখের আদল মোটের উপর একইরকম রাখতে হবে। অন্য শিল্পীর মতো পুরো একইরকম রাখা তো পুরোপুরি সম্ভব নয়। তবু চ্যালেঞ্জ নিলাম। কিছু নিজস্ব ঘরানা রেখে প্রতিমা তৈরি করেছি। প্রতিমা দেখে ক্লাব কর্তৃপক্ষের পছন্দ হয়েছে। মনের মতো প্রতিমা হয়েছে বলেছেন ক্লাব সদস্যরা।” তবে প্রতিবারের মতো নীল বর্ণের প্রতিমা। উচ্চতা বেড়েছে কিছুটা। এতদিন ১৪ ফুটের প্রতিমা হত। এবার তা ১ ফুট বেড়েছে হয়েছে ১৫ ফুটের। মুকুট নিয়ে তা ১৭ ফুটের কাছাকাছি।
ফাটাকেষ্টর শুরু করা কালীপুজো যেন তিলোত্তমার অহঙ্কার। জাঁকজমকপূর্ণ পুজোতে সাধারণ দর্শক ভিড় করতো তো বটেই, পাশাপাশি সেকালের মেগাস্টার উত্তমকুমার থেকে অমিতাভ বচ্চনের মতো তারকা-যোগ ছিল এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। অনেকের মতে, ভয়ের কারবার থেকেই সেকালে তারকা সম্মেলন হত ফাটাকেষ্টর পুজোতে। রাজনীতি থেকে মাস্তান দুনিয়া… সব ক্ষেত্রেই কলকাতার সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের ডন কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত ওরফে ফাটাকেষ্টর প্রভাব কতটা ছিল তা একটি ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়।
সেকালে আমহার্স্ট স্ট্রিটের উঠতি কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রর পুজো আর ফাটাকেষ্টর পুজোর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই ছিল। তখন নকশাল আন্দোলনে স্তব্ধ শহর। সোমেনের পুজোর ঠাকুর আটকে যায়। ফাটাকেষ্ট ঠাকুর উত্তাল শহরের ঝঞ্ঝা ডিঙিয়ে নির্বিঘ্নে মণ্ডপে পৌঁছায়। কালের নিয়মেই সেই দাপট স্তিমিত হয়েছে। একটি যুগের অবসান হয়েছে ১৯৯২ সালে। সে বছরই হৃদরোগে মৃত্যু হয় ফাটাকেষ্টর। পুজো অবশ্য বন্ধ হয়নি। বহরে কমলেও শোভাযাত্রা করেই ঠাকুর আনা হয় পুজোর স্থানে। ভাসনও হয় মিছিল করে। সঙ্কল্প পূরণে জাগ্রত দেবীর কাছে মানত করেন বহু মানুষ। আড়ম্বর খানিক কমলেও কলকাতার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফাটাকেষ্টর এই পুজো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.