কৃষ্ণকুমার দাস: গড়িয়া-বাঁশদ্রোণী-টালিগঞ্জ এলাকার আদিগঙ্গার তীরে বসে এবার সত্যি সত্যিই পেয়ে যাবেন লন্ডনের টেমসের অনুভূতি। শুধুমাত্র ব্রিটিশ স্থাপত্যে ঘেরা ভিক্টোরিয়ান যুগের গরিমাময় অভিনব চেয়ার বা সবুজ পার্কের পরিবেশ নয়, থাকছে দেশি-বিদেশি খাবারে ঠাসা কাফেও। সবুজ অরণ্যের মাঝে বসে ফুচকা-আইসক্রিম খেতে খেতে শুনতে পাবেন নিধুবাবুর টপ্পা, পুরাতনী বা আব্বাসউদ্দিনের ভাটিয়ালি। দুধসাদা পাথরে বাঁধানো নদীর ঘাটে পুজোর সময়ে কলাবউ স্নান করাতে নামতে পারবেন ভবানীপুর বা কুঁদঘাটের মহিলামহল। আবার উৎসবের দিনে ইচ্ছে করলে ভেনিসের মতো জলবিহারের সুযোগও পাবেন ভ্রমণবিলাসী বাঙালি।
কালীঘাট মন্দিরের পর এবার আদিগঙ্গার দুই তীর সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু করছে কলকাতা পুরসভা। পুজোর পরই আদিগঙ্গার বিভিন্ন অংশে লোহার বেড়া বসানোর মধ্য দিয়ে কল্লোলিনীর গর্বকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু হচ্ছে। প্রকল্পটিতে মনসামঙ্গল কাব্যে বর্ণিত পুণ্যতোয়া আদিগঙ্গার অতীত ঐতিহ্য ও নানা পৌরাণিক অ্যাখ্যানকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলকাতার মেয়র ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আদিগঙ্গায় জবরদখল রুখে ছয় ফুট উঁচু বিশেষ ডিজাইনের লোহার ফেন্সিং তৈরি ও সৌন্দার্যায়নের সম্পূর্ণ টাকাই পুরসভা নিজের তহবিল থেকে দেবে।
আদিগঙ্গার দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার নির্দেশের জেরে নতুন করে টালি নালার সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু করতে চাইছে পুরসভা। গঙ্গাকে প্লাস্টিক ও জঞ্জালমুক্ত করার পাশাপাশি খাটাল-সহ যাবতীয় জবরদখল উচ্ছেদ করতে বলে ট্রাইবুন্যাল। বস্তুত সেই নির্দেশের জেরে সৌন্দর্যায়ন ও টালি নালায় ফেন্সিং শুরু হচ্ছে। বুধবার এমনটাই জানিয়েছেন প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার। তাঁর কথায়, “মহানগরের নোংরা ও দূষিত জল যাতে আদিগঙ্গায় না পড়ে সেজন্য ব্রিজি, কুঁদঘাট লাগোয়া ওয়্যারলেস মাঠ এবং গলফ ক্লাবে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হচ্ছে। দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন ওয়ার্ডের নালা দিয়ে আসা নোংরা জল পরিশোধনের পর তবেই টালি নালায় পড়বে।” তবে প্রথমেই যে সমস্ত জায়গা এখনও জবরদখল হয়নি সেখানে প্রায় ছ ফুট উঁচু লোহার ফেন্সিং দিয়ে জবরদখল আটকানোর কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। দেবব্রতবাবু জানান, মিলেনিয়াম পার্কের চেয়েও অনেক বেশি আকর্ষণীয় হবে আদিগঙ্গার তীরে প্রস্তাবিত পরিবেশ বান্ধব বিনোদন পার্ক।
কলকাতার ইতিহাস বলছে, একসময় দলে দলে পুণ্যার্থী কালীঘাটে পুজো দেওয়ার আগেই পুণ্য অর্জনের লক্ষ্যে আদিগঙ্গায় ডুব দিতেন। কিন্তু এখন দূষিত জলে ডুব দিলে চর্মরোগ অনিবার্য বুঝেই তা করেন না। তাই আদিগঙ্গার জল পরিশোধনের কাজ শুরু করেছে পুরসভা। আদিগঙ্গার দুই তীর লোহার ফেন্সিংয়ের পাশাপাশি প্লাস্টিক ও ভাসমান জঞ্জাল আটকাতে ফাইবারের নেট বসছে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষার লক্ষ্যে কালীঘাট ব্রিজের কাছে টালি নালার একদিকে প্রায় দেড়শো মিটার দীর্ঘ বুলেটপ্রুফ লোহার পাতলা নেটও বসানো হচ্ছে। মেয়র পারিষদের কথায়, “জঞ্জাল আটকাতে গঙ্গার মাঝে মাঝে ফাইবারের নেট থাকছে। পুজোর সামগ্রীর পাশাপাশি দু’পাশের নানা গাছের পাতাও ভেসে আসে। টালি নালার উপরে যে সমস্ত ব্রিজ আছে, সেখানে দাঁড়িয়েও অনেকে কাগজ ও নোংরা ফেলেন। তাও পুরসভা তুলে ফেলছে। নাগরিকরা সচেতন হলে আদিগঙ্গাকে বছর দুয়েকের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি দূষণমুক্ত করা সম্ভব হবে। ফের পুণ্যতোয়া হবে আদিগঙ্গা, তীরে থাকবে নগরজীবনের সুবিধা ও বিদেশি ধাঁচে পার্ক,বসার চেয়ার।”
কলকাতা পুরসভার পরিকল্পনা, প্রথম ধাপে গড়িয়া পর্যন্ত আদিগঙ্গার হাল ফেরাবে, আর তারপর বোড়াল-রাজপুর-বারুইপুর-মগরাহাট পর্যন্ত সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু করেছে সেচ দপ্তর। ইতিমধ্যে বারুইপুর অংশ ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই তীর বাঁধিয়ে স্বচ্ছ জলধারা ফিরিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.