গোবিন্দ রায়: একজন মা তাঁর সন্তানকে বুক দিয়ে আগলে রাখেন। নিজের কথা ভুলে সন্তানের যত্ন নেন। কথায় বলে, কুুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কখনও নয়। তবে বাস্তবের মাটিতে যেন ঘটল তার ব্যতিক্রম। বাবার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি। ছোট্ট সন্তানকে রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান মা। জন্মদাত্রীর সঙ্গে সেই থেকে আর কোনও সম্পর্ক নেই। খুদে বেড়ে ওঠে মামাবাড়িতে। বর্তমানে পেশায় নাবিক ছেলে। আর সেই সন্তান ফেলে যাওয়া পক্ষাঘাতগ্রস্ত মায়ের ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম। ছেলের কাছে ভরণপোষণের দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধা। নাবিক ছেলে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য বলে আগেই জানায় আদালত। তবে ১০ হাজার টাকা নিতে নারাজ মা। দিনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত টাকা দেওয়ার দাবি তাঁর। মহকুমা শাসককে ছেলে ও বৃদ্ধার সঙ্গে মধ্যস্থতা করে টাকার পরিমাণ বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ বিচারপতি অমৃতা সিনহার। এদিন মামলার নিষ্পত্তিও করে দেন তিনি।
মাঝে কেটে গিয়েছে ১৫ বছর। মায়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না তাঁর। সে কারণে প্রথমে বৃদ্ধা মায়ের কোনও দায়িত্ব নিতে চাননি ছেলে। তবে বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, ছেলে আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং বৃদ্ধা মায়ের আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন, তাই তাঁকে দেখা সন্তানের কর্তব্য। তবে আইনজীবী তার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, “ছোট্ট সন্তানের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মায়ের। বেড়ে ওঠার সময় মাকে পাননি সন্তান। তিনি শুধুই জন্মদাত্রী। আর কিছুই নন। শুধু জন্ম দিলেই কি মা হওয়া যায়?”
বর্তমানে পেশায় নাবিক ছেলে আটলান্টিক মহাসাগরের জাহাজে। প্রথম থেকে তাই হাই কোর্টের শুনানিতে তাঁর তরফে রয়েছেন স্ত্রী। বুধবার আদালতে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধার সন্তানের আইনজীবী জানান, কলকাতা হাই কোর্টের ট্রাইবুনালের নির্দেশ মেনে তাঁর মক্কেল মাসে ১০ হাজার টাকা দিতে পারেন। তাতে তাঁর আপত্তি নেই। তবে বিরোধিতা করেন বৃদ্ধার আইনজীবী। তিনি বলেন, “কোনও পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হবে না। তবে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত টাকা দেওয়া উচিত।” ছেলের থেকে যেহেতু ভরণপোষণের খরচ চান মা, তাই পুত্রবধূ নয় ছেলেই সরাসরি বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলুন তা চায় হাই কোর্ট। তাই ভারচুয়ালি দু’পক্ষের উপস্থিতিতে কত টাকা দিতে হবে ছেলেকে তা মহকুমা শাসককে বেঁধে দিতে বলেছে হাই কোর্ট। আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০০৭ সালের প্রবীণ নাগরিকদের ভরণপোষণ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে মহকুমা শাসককে। মামলার নিষ্পত্তি করে দেন বিচারপতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.