গোবিন্দ রায়: ইতিহাস এখানে কথা বলে। ১৮৯০ সালে শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের পুত্র পূর্ণচন্দ্র দাঁ ও শিবকৃষ্ণের সহধর্মিণী কাদম্বিনী দাসীর হাতে তৈরি বেলুড়ের রাসবাড়ির ৪০ ফুট উঁচু নবরত্ন মন্দির, রাসমঞ্চ ইত্যাদি আজও ইতিহাস বয়ে নিয়ে চলেছে। এছাড়া ২৪ ফুট উঁচু ছ’টি শিবমন্দির, নাটমন্দির, নহবতখানা, ভোগঘর ও বাগান জুড়ে বর্ধিষ্ণু ঐতিহ্যের স্বাক্ষর। জোড়াসাঁকোর শিবকৃষ্ণ দাঁ লেনের দাঁ বাড়ির এই সম্পত্তি ঘিরে আজ চলছে দড়ি টানাটানি।
অভিযোগ, রাসবাড়ির নিজস্ব স্নানের ঘাটে জবরদস্তি ছটপুজোর আয়োজন হয়। ফি বছর ছটের সময় প্রচুর লোক সমাগমের কারণে রাসবাড়ি প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়, দূষণের মাত্রা বাড়ে। গঙ্গা সংলগ্ন পাঁচিল ও মাঠ-বাগান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, এটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি (প্রাইভেট প্রপার্টি), না কি জনগণের সম্পত্তি (পাবলিক প্রপার্টি)? আর তা নিয়েই এবার মামলা গড়াল কলকাতা হাই কোর্টে। উচ্চ আদালতের পুজো অবকাশকালীন বেঞ্চের বিচারপতি ওম নারায়ণ রাইয়ের এজলাসে আজই শুনানির সম্ভাবনা।

শিবকৃষ্ণের দেবোত্তর স্টেটের আদালত নিযুক্ত রিসিভার তথা হাই কোর্টের আইনজীবী দ্বিজদাস চক্রবর্তীর অভিযোগ, প্রতি বছর ছটপুজোয় ওখানে বেআইনিভাবে পাঁচিল, গেট টপকে ঢুকে পড়ে প্রচুর লোক, সম্পত্তির যথেচ্ছ ক্ষতিসাধন করে। বাধা দেওয়া হলে জোর করে সেবাইতদের দিয়ে গেট খোলানো হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিবার ছটের সময় স্থানীয় ছট কমিটি দাঁ বাড়ির সম্পত্তিকে ‘পাবলিক ট্রাস্ট’ হিসাবে দাবি করে স্থানীয়দের নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করে। যা নিয়ে ২০২২ সালে মামলাও দায়ের হয়েছিল।
এবারও একই অভিযোগ। বলা হচ্ছে, স্থানীয় ছট কমিটির রুজু করা মামলাটিতে সেবায়েত বা দাঁ পরিবারের কাউকে পক্ষভুক্ত করা হয়নি। ফলে আদালতে সেবাইত বা পরিবারের কেউ নিজেদের বক্তব্য পেশ করতে পারেননি। সমাধানসূত্রও মেলেনি। এবছর আগামী ২৫ অক্টোবর ছটপূজা। তাই তার আগেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে শিবকৃষ্ণ দেবোত্তর স্টেট।
প্রসঙ্গত, বেলুড়ের রাসবাড়ির পত্তনের অনেক পরে হাওড়ায় বেলুড় মঠের প্রতিষ্ঠা। শ্রীরামকৃষ্ণের তিথিপুজো উপলক্ষে গঙ্গাতীরের এই রাসবাড়িতে একসময় রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের পদার্পণ ঘটেছিল। এর চত্বরে রাসের মেলা বসত, তা থেকেই ‘রাসবাড়ি’ নামকরণ। আইনজীবীর দাবি, বালি পুরসভা রাসের মেলার জন্য দাঁ পরিবারের থেকে কর দাবি করে। দেবোত্তর ট্রাস্টের অর্থে কোনওক্রমে ধর্মীয় প্রথাগুলি চালানো গেলেও পুরসভাকে কর দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই মন্দির প্রাঙ্গণে মেলা বন্ধ হয়েছে। উপরন্তু পরিবারের অভিযোগ, বৃষ্টির জল গঙ্গায় ফেলতে বালি পুরসভার রাসবাড়ির মধ্য দিয়ে সুড়ঙ্গ কাটে। তা দিয়ে বয়ে যাওয়া নিকাশির জলে রাসবাড়ির শিবমন্দিরগুলোর একাংশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে বালি পুরসভাকে অবহিত করলেও তাদের হোলদোল নেই বলে অভিযোগ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.