Advertisement
Advertisement

Breaking News

Medical College

মৃত্যুর পরও শিক্ষক! মেডিক্যালে ‘ডাক্তারি শেখায়’ ৫ বছরের শৌভিক

ছোট্ট খুদের দু’চোখে স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার।

Corpse of 5 year old Shouvik is used in medical college lessons
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:July 3, 2025 4:33 pm
  • Updated:July 3, 2025 4:52 pm  

অভিরূপ দাস: বেঁচে থাকলে এই ২০২৫-এ তার বয়স হত বত্রিশ। পৃথিবীতে মাত্র পাঁচটা বসন্ত দেখার সৌভাগ‌্য হয়েছিল তার। আসানসোলের হটন রোডের শৌভিক সামন্তর কঙ্কাল ফি বছর ডাক্তারি পড়ায় এমবিবিএসের ছাত্র-ছাত্রীদের। তাঁর কঙ্কাল দিয়েই শরীরের ‘অ‌্যানাটমি’ শেখান অধ‌্যাপকরা।

১৯৯৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জন্ম শৌভিকের। পাঁচ বছরের ছোট্ট শৌভিক অসুস্থ অবস্থায় প্রথমবার কলকাতায় আসে ১৯৯৮ সালে। আটানব্বইয়ের ৩০ সেপ্টেম্বর জীবনে প্রথম কলকাতায় আসার পথে পাঁচ বছরের খুদে ভালোবেসে ফেলে এই শহরটাকে। সেদিনের তিলোত্তমা ছোট্ট মনে এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিল বাবার কাছে খুদের আবদার ছিল ‘‘বাবা আমি কলকাতাতেই থাকব।’’ তা আর হল কই।  বাম আমলে এসএসকেএম এর ব্লাড ব‌্যাঙ্কের কিছু স্বাস্থ‌্যকর্মীর অমানবিকতায় মৃত‌্যু হয় শৌভিকের। শৌভিকের পরিবার নীলরতন সরকার মেডিক‌্যাল কলেজে প্রয়াত ছেলের সমন্ধে যে শংসাপত্র দিয়েছেন তাতে লেখা রয়েছে সে কথা।

ছোট্ট শৌভিক শেষ নিশ্বাস ত‌্যাগ করে ১৯৯৮-এর ২৯ অক্টোবর। মাঝে কেটে গিয়েছে সাতাশটা বছর। তবে প্রিয় শহর ছেড়ে যেতে হয়নি শৌভিককে। নীলরতন সরকার মেডিক‌্যাল কলেজের অ‌্যানাটমি বিভাগে এখন ডাক্তারি ছাত্রদের পড়াশোনার কাজে ব‌্যবহৃত হয় শৌভিকের অস্থিচর্মসার দেহটা। কাচের বাক্সে ঢাকা শৌভিকের সে কঙ্কালের উপর টাঙানো রয়েছে পাঁচ বছরের সবুজ সতেজ উজ্জ্বল চোখের ছবি। এই শহরের প্রতি তাঁর যেমন টান ছিল তেমনই দু’চোখে স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। শৌভিকের সেই ভালোলাগাকে মর্যাদা দিতেই তার ভগ্নহৃদয় পরিবার চিরঘুমন্ত শৌভিককে তুলে দিয়েছিল নীলরতন সরকার মেডিক‌্যাল কলেজের হাতে। মরণোত্তর দেহদান নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালাচ্ছে স্বাস্থ‌্য দপ্তর। যেখানে বলা হচ্ছে, মৃত‌্যুর পরেও কাজে লাগতে পারে আপনার প্রিয়জনের দেহ। শৌভিক তার একটা মস্ত বড় প্রমাণ।

মৃতদেহ থেকে কীভাবে তৈরি হয় কঙ্কাল? কলকাতা মেডিক‌্যাল কলেজের অ‌্যানাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কল‌্যাণ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, অনেক সময় মৃতদেহ নিয়ে আসতে একটু দেরি হয়। তাতে অল্প পচন ধরে। তখন সেই দেহগুলো দিয়ে স্কেলিটন তৈরি করা হয়। ‘ন‌্যাচারাল ডিকম্পোজড’ উপায়ে তৈরি হয় এই স্কেলিটন। প্রথমে প্লাস্টিকে ঢেকে মাটির নিচে একটি চেম্বারে পুঁতে রাখা হয়। মাস দুয়েক পরে মাটির তলায় মৃতদেহের মাংসগুলো মিশে হাড়গুলো আরও বেরিয়ে আসে। তখন সেটাকে তুলে আনা হয়। ডা. কল‌্যাণ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, হাড়ে একটু-আধটু মাংস লেগেই থাকে। সেগুলো হাতেকলমে পরিষ্কার করতে হয়। তার জন‌্য সবকটা হাড় ‘লুজ’ করে তা পরিষ্কার করতে হয়। এর পর ধাতব একটা পাত্রে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড দিয়ে হাড়গুলো ফোটানো হয়। তাতে হাড়গুলো চকচকে হয়। তারপর তা প্রস্তুত হয় ডাক্তারি পড়াশোনার জন‌্য। ডা. কল‌্যাণ ভট্টাচার্য‌ জানিয়েছেন, ধন‌্যবাদ সেই সমস্ত পরিবারকে, যাঁরা মৃত‌্যুর পরেও প্রিয়জনের দেহ দান করছেন ডাক্তারি পড়াশোনায়।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement