সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। কয়েকদিন থেকেই আশঙ্কার মেঘ জমছিল। এবার সেটা রীতিমতো ঘনঘটা হয়ে চেপে বসল দক্ষিণবঙ্গের পুজোর আকাশে। হোঁচট খাওয়া মুখে প্রাক পুজোর প্রস্তুতি। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান লাগোয়া যে নিম্নচাপ ঘিরে এত চিন্তা, সেটি দুদফায় শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছিল হাওয়া অফিস।
[বায়ুসেনা দিবসে ডাকোটার পাশাপাশি আকাশ কাঁপাল মিগ-২৯]
তাদের পূর্বাভাস, বুধবারের মধ্যেই সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। বৃহস্পতিবার নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়তে পারে ওড়িশা ও অন্ধ্র উপকূলে। বঙ্গভূমিতে তার পরোক্ষ প্রভাব বিলক্ষণ পড়তে পারে। পরিণামে প্রতিপদের মহানগরে হালকা থেকে মাঝারি, কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভারী বর্ষণের আশঙ্কা জোরদার। আলিপুর হাওয়া অফিসের প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার প্রতিপদের আকাশ ঢেকে যেতে পারে কালো মেঘে। বৃষ্টি শুরু হবে ওইদিনই। চলতে পারে শনিবার চতুর্থী পর্যন্ত। মাঝখানে বৃহস্পতি ও শুক্র, অর্থাৎ দ্বিতীয়া ও তৃতীয়ায় আকাশভাঙা বর্ষণ ভাসাতে পারে পুজোমুখী জনপদকে। তবে আশার কথা, রবিবার পঞ্চমী থেকে আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে। “প্রাক পুজোর আমেজ মার খেলেও আসল পুজোর দিনগুলিতে প্রকৃতি সদয় থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। আরও দু’দিন গেলে ছবিটা পরিষ্কার হবে।”–জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের উপ-মহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দে্যাপাধ্যায়।
এমতাবস্থায় আমজনতা থেকে ব্যবসায়ী, পটুয়া থেকে উদ্যোক্তা, সবাই প্রমাদ গুনছেন। অনেকের মনে জেগে উঠছে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের অক্টোবরে ধেয়ে আসা দুই ঘূর্ণিঝড়ের (যথাক্রমে ফাইলিন ও হুদহুদ) স্মৃতি। এবারও পুজোর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের রোষ আছড়ে পড়বে কি না তা ভেবে ঘুম ছুটেছে মানুষের। বড় থেকে ছোট, বিভিন্ন পুজোর আয়োজকদেরও বুক দুরুদুরু। পুজোর দিনগুলো শুকনো থাকবে, এ বার্তা স্বস্তি দিলেও প্রাক পুজোর দুর্যোগে এতদিন ধরে সাজিয়ে তোলা মণ্ডপ কতটা টিকে থাকবে, সেই চিন্তা তাঁদের কপালে গভীর ভাঁজ ফেলেছে। নামজাদা বড় বড় পুজো কমিটি আগাম সতর্কতা নিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তোলপাড় করা বৃষ্টি বা উথালপাতাল ঝড়ের মুখে কি সেই ব্যবস্থা আদৌ কাজ করবে?
নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ যেমন, মণ্ডপ ঢাকা হয়েছে স্বচ্ছ চাঁদোয়ায়। তাঁদের দাবি, এতে জল আটকানো যাবে। “জোরদার বৃষ্টি হলেও আমাদের বিশেষ ভয় নেই।”-সোমবার কমিটির তরফে জানালেন বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। তবে, প্রকৃতির লীলার কাছে মানুষ যে অসহায়, সেকথাও তিনি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন। চেতলা অগ্রণীর তরফে সন্দীপ মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “থিমের চাহিদা মেনে মূল মণ্ডপের বেশিটাই ঢাকা। কিছুটা অংশ খোলা রয়েছে। বেশি বৃষ্টি হলে সেটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে।” গত কয়েক বছর ধরেই পুজোর সময় বৃষ্টি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা মাথায় রেখেছে বেহালার নস্করপুর সর্বজনীন। “মণ্ডপ সাজানো হয়েছে হুঁকো দিয়ে। বৃষ্টির জল এড়াতে তার উপরে লোহার আস্তরণ। উপরন্তু রয়েছে বিশেষ মাস্ক, যা জল আটকাবে।”– বলেন, নস্করপুর সর্বজনীনের সদস্য প্রতীক মালি। আবার কসবা বোসপুকুর শীতলামন্দির দুর্গোৎসব কমিটি মাটির কাজ রক্ষা করতে মণ্ডপ ঢেকে ফেলেছে। যদিও লাগামছাড়া বর্ষণের মুখে তা কতটা কাজে দেবে, সে নিয়ে সংশয় থাকছেই।
[এবার বাংলাদেশি ভূখণ্ডে নজর মায়ানমারের, কড়া প্রতিক্রিয়া ঢাকার ]
এ তো গেল আয়োজকদের কথা। আলিপুরের পূর্বাভাস শুনে মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। মহালয়া থেকে ষষ্ঠী–এই সময়টায় পুজোর বাজার তুঙ্গে ওঠে। “ঝড়-বৃষ্টি হলে তো সব মাটি।”–বললেন নিউ মার্কেটের বস্ত্র ব্যবসায়ী ইমতেয়াজ আলি। গড়িয়াহাটের বড় শাড়ি বিপণির মালিক কিংশুক সাহার আক্ষেপ, “এবছর এমনিতেই বাজার একটু মন্দা। তার উপর বৃষ্টি হলে ব্যবসা ভালরকম মার খাবে।” পটুয়াপাড়ায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রতিমা বাঁচানোর তোড়জোড়। কুমোরটুলির এক মৃৎশিল্পীর কথায়, “এতদিনের পরিশ্রম যাতে ধুয়ে না যায়, সে চেষ্টা তো করতেই হবে। প্রকৃতির উপরে কারও হুকুম খাটে না।” বস্তুত, যারা কয়েকদিন পরে মণ্ডপে ঠাকুর নিয়ে যেত, এ পরিস্থিতিতে তাদের অনেকে আগেভাগে প্রতিমা নিয়ে আসতে শুরু করেছে।
আলিপুরের উপগ্রহ চিত্র বলছে, গভীর নিম্নচাপটি রয়েছে কলকাতার ৯০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, ওড়িশার গোপালপুরের দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে বঙ্গোপসাগরের উপর। সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে নাম হবে ‘তিতলি’। পাকিস্তানের দেওয়া এই নামের অর্থ প্রজাপতি। দেখতে হবে, প্রজাপতির ডানার ঝাপটায় বাংলার পুজো বেসামাল হয়ে যায় কি না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.