শুভঙ্কর বসু: স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগ ছিল। দোষ প্রমাণিতও হয়েছিল। সাজা ছিল যাবজ্জীবন। সাজার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল তো করেছিলেন। কিন্তু মামলা লড়ার টাকা ছিল না। বছরের পর বছর অন্ধকার গারদে বসে হয়তো মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন বিমলেন্দু মণ্ডল। স্বপ্ন সার্থক হল প্রায় ১৩ বছর পর, সাজার মেয়াদ পেরিয়ে। সোমবার বাঁকুড়ার বিমলেন্দু মণ্ডলকে বেকসুর খালাস করল হাই কোর্ট। খোঁজ পড়ল তাঁর। মুক্তি দিতে হবে তো! কিন্তু কোথায় তিনি? বাঁকুড়া জেলা আদালত থেকে জেল তোলপাড় করে খোঁজা হল। নেই! বিমলেন্দুর শরীর মুক্ত হয়ে গিয়েছে জাগতিক জগতের এই বিচার থেকে। প্রায় বছর দেড়েক আগেই মৃত্যু হয়েছে বাঁকুড়ার বাসিন্দার। খবর শুনেই এজলাসে শোরগোল।
[জালিয়াতি রুখতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আরও কড়া হওয়ার নির্দেশ ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের]
বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার কনকবেড়িয়ার বাসিন্দা বিমলেন্দু। স্ত্রী অনিমা ঘোষের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলা লেগে থাকত। ২০০২ সালের ১৩ অগস্ট ভোরে বাড়ির পাশেই একটি পুকুরে অনিমার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জানায়, বুকে ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পাকস্থলিতে রয়েছে বিষ। মৃতার ভাই শিবেন্দ্র ঘোষ থানায় জামাইবাবুর নামে দিদিকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। বাঁকুড়া আদালত ২০০৪ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর স্ত্রীকে খুনের দায়ে বিমলেন্দুর যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করে। সাজার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেছিলেন বিমলেন্দু। কিন্তু উকিলকে দেওয়ার মতো টাকা ছিল না। শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে বিষয়টি হাই কোর্টের নজরে আসে। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শুরু করতে বলে হাই কোর্ট। আইনজীবী অপরেশ বসুকে আদালত বান্ধব নিযুক্ত করা হয়। যার চূড়ান্ত শুনানি ছিল সোমবার, বিচারপতি মমতাজ খান ও বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে। ডিভিশন বেঞ্চ বিমলেন্দুকে খালাসের নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ দেওয়ার পর এদিনই তা কার্যকর করতে বলে। বাঁকুড়া জেলা আদালত ও জেলে তা পাঠাতে বলা হয়। সেইমতো নির্দেশ জেলেও পৌঁছায়। নির্দেশ পেয়ে খোঁজ করতেই দেখা যায়, বছর দেড়েক আগেই মারা গিয়েছেন বিমলেন্দু।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে বিমলকে ভরতি করানো হয়েছিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর সেখানেই তিনি মারা যান। কিন্তু বেকসুর খালাস হওয়ার পর প্রশ্ন উঠল কেন এই সাজা তাঁকে পেতে হল? এতটা বছর কেন তিনি বিনা কারণে গারদের পিছনে কাটালেন? আপাতত প্রশ্নের উত্তর শিকেয় তোলা থাকল। কারণ ‘আসামী’ আর বেঁচে নেই। ঈশ্বরের আদালতে অনেক আগেই খালাস হয়ে গিয়েছেন বিমলেন্দু।
[এবার কসবার এটিএমে স্কিমার, গ্রাহকের তৎপরতায় বানচাল জালিয়াতির ছক]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.