রমেন দাস: ‘পালকি চলে, পালকি চলে…!’ পৃথিবীর বুকে কান পাতলে আজও শোনা যায় প্রাচীন যুগের পালকির গান। কিন্তু আজ এই কুশীলবরা পালকি বয়ে নিয়ে যান না, বরং দূর-দূরান্ত থেকে শহর কলকাতায় ভিড় জমান জীবনের জয়গানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কুমোরটুলির অলিগলিতে ঢুঁ মারলেই পুজোর আগে দেখা মেলে ওঁদের। সপরিবারে দুর্গাকে মণ্ডপে অথবা বনেদি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভরসা ওঁরাই। পুজোর অঙ্গনে শক্তি দিয়েই জীবন চালান। সংসারের সুখের জন্য প্রতিমা বাহকের কাজ করেন দূর থেকে আসা বহু মানুষ।
মূলত, মহালয়ার দিন থেকে ডাক পড়ে ওঁদের। কুমোরটুলির এক একটি ঠাকুর গড়ার ঘরে চক্ষুদানের পর প্রতিমা নিয়ে তুলে দেওয়া হয় চারচাকার গাড়িতে। আর এই কাজই করেন একাধিক মানুষ। যাঁরা ‘কুমোরটুলির কুলি’ নামেই পরিচিত। তাঁদের কেউ এসেছেন সুদূর সুন্দরবন থেকে, আবার কেউ আসেন বাসন্তী থেকে। এরা প্রত্যেকেই প্রতিমা বয়ে নিয়ে যান মণ্ডপের দিকে আবার কখনও বারোয়ারি কোনও বাড়িতে। রেললাইনের কাছেই চলে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া। রাস্তার ধারের ঝুপড়িতেই এক টুকরো সংসার পাতেন ওঁরা।
দুর্গা বহনে সুখ খোঁজার দলে রয়েছেন সুশান্ত মণ্ডল, বসুদেব, আনন্দ সাঁপুইরা। প্রায় একই কাজে এসেছেন পরিতোষ শিকারিও। প্রতিমা বাহক সুশান্ত মণ্ডল বলছেন, ‘সারা বছর অন্য কাজ করি। চাষবাস, দিনমজুরের কাজ। কিন্তু মহালয়া থেকে পঞ্চমী এবং বিসর্জনের সময় কলকাতা আসি। কুলির কাজ করি। ষষ্ঠী থেকে নবমী পরিবারের সঙ্গেই গ্রামের বাড়িতে থাকি।’ কী পান এই কাজে? কেন এত কষ্টের কাজ? প্রতিমা বাহক আনন্দ সাঁপুই জানান, ‘‘কষ্ট না করলে রোজগার হবে কীভাবে! বহু বছর এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। আসি, যত বেশি কাজ তত, পুজো ভালো কাটে আমাদের!’’
সত্যিই পুজো ভালো কাটে? পরিতোষ শিকারি বলছেন, ‘‘বাড়িতে থাকলেও এই সময়টা আমরা এই কাজ করেই আনন্দ খুঁজি! কষ্ট হয়! রেললাইনের কাছে রান্না করতে হয়। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে এসেও কাজটা করতে চাই রোজ।’’ ওঁরা কাজ করেন। শক্তসমর্থ শরীরেই প্রত্যেক মুহূর্তে সংসার চালানোর তাগিদে জোটবদ্ধ হন ওঁরা। তপ্ত রাস্তায় প্রতিমা বহনে যেন বলে চলেন এগিয়ে যাওয়ার কথাই!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.