সুলয়া সিংহ: আজ, বৃহস্পতিবার, বিজয়া দশমী! উৎসব শেষে মন ভারী হয়ে আসার দিন। একে একে নিভে আসবে আলো, খোলা হবে হোর্ডিং। ছুটি শেষে কাজে ফেরার পালা। নতুন করে আবারও একটা বছরের অপেক্ষা। তবে মায়ের বিদায়ের দিন থেকেই নতুন করে ‘উৎসবে’ মেতে ওঠেন পুজো উদ্যোক্তারা। এ যেন ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’। পুজো উদ্যোক্তাদের মতে, আগামী বছর কোন ভাবনাকে সামনে রেখে পুজো মণ্ডপ তৈরি হবে, সেই পরিকল্পনা তৈরি হয়ে যায় পুজো শেষেই। এমনকী কোন শিল্পীকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সবটাই থাকে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে। শহরের এই হেভিওয়েট পুজোগুলি আগামী বছরেও এবারের শিল্পীদের উপরেই ভরসা রাখছে। পুজোগুলি হল কাশী বোস লেন, হিন্দুস্থান পার্ক, চালতা বাগান, দমদম তরুণ দল-সহ তালিকায় রয়েছে আরও।
কাশী বোস লেনের পুজো এবার ৮৮ বছরে পা দিয়েছে। তাদের ভাবনা ছিল পাকদণ্ডী। শিশুসাহিত্যে লীলা মজুমদারের যে অবদান, তাকেই থিমের মাধ্যমে কুর্নিশ জানিয়েছে শহরের অন্যতম বড় এই ক্লাব। শিল্পী অনির্বাণ দাসের হাতেই সেজে উঠতে দেখা গিয়েছে মণ্ডপ। যা ছিনিয়ে নিয়েছে একাধিক পুরস্কার। পেয়েছে দর্শনার্থীদের ভালোবাসা। তাই আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালেও শিল্পী অনির্বাণ দাসের উপরেই ভরসা রাখছেন কাশী বোস লেনের পুজো উদ্যোক্তারা। ইতিমধ্যে ‘২৬শে অনির্বাণ’ নামে একটি কার্ডও সামনে আনা হয়েছে।
তালিকায় আছে দমদম তরুণ দল। এবার অর্থাৎ ২০২৫-এ তাদের থিম ছিল ‘ছাপ’। মণ্ডপ জুড়ে থাকা সূক্ষ্ম কাজ এবং শিল্পীর ভাবনা মুগ্ধ করেছে সকলকে। এই ভাবনার পিছনে যিনি ছিলেন, তিনি শিল্পী পূর্ণেন্দু দে। আগামী বছরও তাঁর উপরেই ভরসা রাখছেন ক্লাব কর্তারা। ইতিমধ্যে ক্লাবের অফিসিয়াল সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে সেই ঘোষণাও করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘অম্লান থাক সাফল্যের ছাপ/ প্রবীণ ভাবনায় প্রাক-সুবর্ণ ধাপ। ৪৯তম বর্ষ, আবার পূর্ণেন্দু দে।’
অন্যদিকে চালতাবাগান সর্বজনীনও শিল্পীর নাম জানিয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরেও চালতাবাগানের সর্বজনীনের মণ্ডপ ভাবনায় থাকবেন শিল্পী প্রদীপ্ত কর্মকার। এবার ২০২৫ সালেও তাঁর হাতেই মণ্ডপসজ্জা হয় চালতাবাগানের। তাদের ভাবনা ছিল ‘আমি বাংলায় বলছি’।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাঙালিদের আক্রান্ত হওয়া বা বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশিদের ভাষা’ বলা নিয়ে বিতর্ক এখন খবরের শিরোনামে। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে চালতাবাগানের এমন পুজো ভাবনা বেশ নজর কেড়েছে। যদিও সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিল্পী প্রদীপ্ত কর্মকার আগেই জানিয়েছিলেন, ”ঠিক তা নয়। আসলে পুজোর থিম অনেক আগেই ঠিক হয়ে যায়। এবারের পুজো ভাবনা গত বছরের নভেম্বরেই মাথায় এসেছিল। এই পুজোটা হয় ডিএল রায় স্ট্রিটে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়েরর বাড়ি এখানে। উলটো দিকে স্বামীজির বাড়ি। কাছেই জোড়াসাঁকো। এগুলোই আমাদের বাংলা ভাষা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছিল।”
শহরের বিগ বাজেটের পুজোগুলির তালিকায় আছে হিন্দুস্থান পার্ক। ২৬-এর পুজোয় তারাও এবারের থিমমেকার মলয় রায় এবং শুভময় সিনহার উপরেই আস্থা রাখছেন। ইতিমধ্যে হিন্দুস্থান পার্কের তরফে এক বার্তায় তা জানানো হয়েছে। ঘোষণায় লেখা, ‘২৬ এর মলয় সমীরণে আগমনী হোক শুভময়’। এই বছর অর্থাৎ ২০২৫-এ হিন্দুস্থান পার্কের ভাবনা ছিল লোকজ। বাংলার লোক-সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয় মণ্ডপে। পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় বঙ্গের যে ঐতিহ্য অর্থাৎ আদিবাসী মানুষদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়।
এর পাশাপাশি বাগুইআটি দক্ষিণপাড়া দুর্গোৎসব কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, আগামী বছর শিল্পী দেবাশিস বারুইকেই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই বছরের মতোই রাজডাঙা নবউদয়ের পুজোও তাঁর কাঁধেই। হাতিবাগানের নলীন সরকার স্ট্রিট সর্বজনীনে আগামী বছর দেখা যাবে সনাতন দিন্দাকেই। দক্ষিণ কলকাতার কেন্দুয়া শান্তি সংঘে হ্যাটট্রিক করতে চলেছেন সুশান্ত শিবানী পাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.