ফাইল ছবি
অর্ণব আইচ: নাগাল্যান্ডের পর এবার মণিপুর। উত্তর পূর্ব ভারতের অস্ত্র এজেন্টদের নজর এবার মণিপুরের উপর। মণিপুরের বেশ কয়েকটি শহর ও জেলা সদর থেকে অনেকটা নাগাল্যান্ডের আদলেই এজেন্টরা অস্ত্রের লাইসেন্স সংগ্রহ করছে, এমন তথ্য এসেছে কলকাতা ও রাজ্যের গোয়েন্দাদের কাছে। যে পদ্ধতিতে ওই অস্ত্রের লাইসেন্স জোগাড় করা হয়েছে, তা দেখে গোয়েন্দা পুলিশের অভিমত, ওই লাইসেন্সগুলি ভুয়ো। তাই এবার মণিপুরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্রের উপরও নজর কলকাতা ও রাজ্যের গোয়েন্দাদের।
সম্প্রতি একের পর এক পুলিশি অভিযানে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলা থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও বুলেট। আসানসোল ও মুর্শিদাবাদ থেকে প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার করেছে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। কলকাতা পুলিশের এসটিএফের আধিকারিকরা ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড ও হলদিয়া থেকে মোট দু’জনকে গ্রেপ্তার করে উদ্ধার করেছেন ১২৭টি বুলেট। এর মধ্যে যেমন রয়েছে ৮ এমএম বুলেট, তেমনই রয়েছে ৭.৬৫ এমএম বুলেটও। এ ছাড়াও এর আগে পুলিশের হাতে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। বসিরহাটের শেখ শাহজাহান থেকে শুরু করে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি-সহ বিভিন্ন জেলার এমন বহু ব্যক্তি, যাদের হাতে অস্ত্র থাকার কথা নয়, তাদের কাছে নাগাল্যান্ডের একাধিক লাইসেন্সে এসে পৌঁছয় অস্ত্র। আবার বেআইনি অস্ত্রের তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত হয় যে, ভিনরাজ্যের লাইসেন্সই এই ধরনের বিপুল অস্ত্র ও বুলেট সংগ্রহের পিছনে রয়েছে।
নাগাল্যান্ডের লাইসেন্স ব্যবহার করে অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি নিয়ে সারা এই রাজ্য-সহ দেশজুড়েই হইচই হয়। এমন অবস্থা হয় যে, নাগাল্যান্ডের লাইসেন্সের ভিত্তিতে পারমিট থাকলেও অনেক দোকান অস্ত্র বা বুলেট বিক্রি করতে নারাজ হয়। ক্রমে মোডাস অপারেন্ডি পাল্টাতে থাকে উত্তর পূর্ব ভারতের অস্ত্র এজেন্টরা। নাগাল্যান্ডের বদলে তারা এবার মণিপুর থেকে অস্ত্র লাইসেন্স জোগাড় করতে শুরু করেছে। গোয়েন্দাদের কাছে খবর, মণিপুরে ইম্ফল ছাড়াও নোনে, উখরুল, থোউবাল, তামেংলং-সহ কয়েকটি ছোট শহর তথা জেলা শহর থেকেও জোগাড় করা হচ্ছে অস্ত্রের লাইসেন্স। সাধারণভাবে যাঁর নামে অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া হয়, তাঁকে সেই শহর বা রাজ্যের অন্তত ৬ মাস থাকতে হয়। সেখানকার ঠিকানায় থাকতে হয় পরিচয়পত্র।
অভিযোগ, নাগাল্যান্ডের পদ্ধতিতে মণিপুরের ক্ষেত্রেও এজেন্টরা ক্রেতাদের নামে ওই রাজ্যের ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরির ব্যবস্থা করছে। নাগাল্যান্ডের ক্ষেত্রে একই ঠিকানায় ২০ থেকে ৩০ জনের ভুয়ো আধারকার্ড তথা পরিচয়পত্র তৈরি হয়েছিল। এভাবে মণিপুরেও এজেন্টরা ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করছে, আর তারই ভিত্তিতে অস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদন জানানো হচ্ছে। লোক বুঝে ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকার প্যাকেজে টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাই এবার মণিপুরের লাইসেন্সেও ‘অনভিপ্রেত’ ব্যক্তিদের হাতে অস্ত্র পৌঁছে যেতে পারে ও এর পর সেই অস্ত্র বা বুলেট পাচার হতে পারে, এমন সম্ভাবনা পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। তাই এবার থেকে মণিপুরের লাইসেন্সে অস্ত্র ও বুলেট কিনলেও ওই ব্যক্তির উপর নজর রাখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ‘আর্মস রুটে’র উপরও রয়েছে নজর। কোন পথে ভুয়ো লাইসেন্সের অস্ত্র প্রবেশ করছে বাংলায়, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.