অর্ণব আইচ: ভুটান বেড়ানোর জন্য তৈরি পরিবারটি। হাসিমুখে পরিবারের সদস্যরা পৌঁছলেন বিমানবন্দরে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা পৌঁছে যাবেন পারো। সেখান থেকে যাবেন থিম্পু। কিন্তু টিকিট দেখিয়ে বোর্ডিং পাস নিতে গিয়েই মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল পুরো পরিবারের। এই পিনআর নম্বরে যে কিছুক্ষণ আগেই বোর্ডিং পাস নিয়েছেন অন্য কয়েকজন। আর তাঁদের নামই নথিভুক্ত রয়েছে ভুটানের বিমান সংস্থায়। বিমান সংস্থার পক্ষে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁদের কাছে থাকা টিকিট তথা টিকিটের পিএনআর নম্বরই জাল। অথচ পরিবারটি টিকিট কিনেছে একটি নামী বেসরকারি পর্যটন সংস্থা থেকে।
বেসরকারি পর্যটন সংস্থাকে বিষয়টি জানানোর পর তাঁরাও হতবাক। কারণ, তাঁরাও বেড়ানোর মরশুমে একসঙ্গে অনেক টিকিট সংগ্রহ করেছেন এমন একটি সংস্থা থেকে, যারা নিজেদের ভুটানের দু’টি বিমান সংস্থারই অনুমোদিত এজেন্ট বলে পরিচয় দেয়। এই ব্যাপারে তদন্ত শুরু করতেই উঠে এলে সোয়া পাঁচ কোটি টাকার জালিয়াতি। শুধু বিমানের পিএনআর নম্বর জাল করেই ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র, যেটির মাথায় রয়েছেন এক দম্পতি, এমনই অভিযোগ আসে পুলিশের কাছে। এই ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। পুলিশের দাবি, এভাবে কলকাতা-সহ সারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলার কয়েকশো বাসিন্দার কাছ থেকে এই কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তদন্তের সূত্র ধরেই হুগলির চুঁচূড়া থেকে লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার হলেন সমিত রায়চৌধুরি, যিনি এই চক্রের মাথা বলেই দাবি পুলিশের। এ ছাড়াও এই চক্রে আরও অন্তত ৬ জন রয়েছেন বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার কসবায় ওই পর্যটন সংস্থাটির অফিস। বিভিন্ন মরশুমে সংস্থাটির পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গা ও বিদেশে ভ্রমণের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তাতে সাড়া দেন কলকাতা, বিভিন্ন জেলা, এমনকী ভিনরাজ্যের পর্যটনপ্রেমীরা। তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশ পছন্দ করেন ভুটানে যাওয়া। মূলত কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমানে করে সরাসরি পারোয় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। সেখান থেকে থিম্পু ও অন্য জায়গায়। ভ্রমণের শেষে পারো হয়েই কলকাতায় ফেরা। যেহেতু একসঙ্গে অনেকেই যান, বা তাঁদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়, তাই কসবার ওই সংস্থাটি একসঙ্গে গুচ্ছ বিমানের টিকিট সংগ্রহ করে। সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ হয় সমিত রায়চৌধুরির সংস্থার। সমিত নিজেকে ভূটানের দু’টি এয়ারলাইন্সের এজেন্ট বলে পরিচয় দেন। কিছু নথিও দেখান। পুলিশের অভিযোগ, প্রথমে কয়েকটি টিকিট পাঠানো হয়। এর পর চাপ দিতে পর পর বিমানের টিকিট ও টিকিটের পিএনআর নম্বর পাঠাতে শুরু করে সমিতের সংস্থা। সেগুলি পর্যটকদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পর্যটকদের একটি অংশ বিমান সংস্থার ওয়েবসাইটে সেই পিএনআর নম্বর মেলাতে গিয়েই বাধা পান। কাউকে জানানো হয় যে, ওই পিএনআর নম্বর অন্যের টিকিটের। আবার কাউকে বলা হয়, ওই পিএনআর বা টিকিটের কোনও অস্তিত্ব নেই। আর বাকি পর্যটকরা বিমানবন্দরে গিয়ে জানতে পারেন যে টিকিটগুলি জাল। একের পর এক অভিযোগ আসতে শুরু করায় ওই পর্যটন সংস্থাটি কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তারই ভিত্তিতে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের প্রতারণা দমন শাখার আধিকারিকরা তদন্ত শুরু করেন। পুলিশের অভিযোগ, প্রথমে ভুটানের বিমান সংস্থার এজেন্টের কাজ করলেও পরে অভিযুক্ত সমিত রায়চৌধুরির সংস্থা একসঙ্গে গুচ্ছ টিকিট সংগ্রহ করার বদলে জাল পিএনআর পাঠাতে শুরু করে। তার বদলে ওই পর্যটন সংস্থার কাছ থেকে তুলতে থাকে টাকা। অভিযোগ, এভাবে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা তোলা হয়। ওই টাকা ভুটানের বিমান সংস্থাকে দেওয়ার বদলে কুড়িটিরও বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টগুলি মূলত অভিযুক্ত সমিত রায়চৌধুরি ও তাঁর স্ত্রীর নামে। এভাবে ওই কয়েক কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ধৃতকে জেরা করে কতজন পর্যটককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হয়েছে, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.