Advertisement
Advertisement

Breaking News

Rupashree

মমতার দেওয়া শাড়ি পরেই বিয়ে করলেন ‘রূপশ্রী’ মিতা

এমন খুশি মেয়ের চোখেমুখে এনে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের ছিল না।

Girl from burdwan mita maji wears saree gifted by CM Mamata Banerjee at her wedding ceremony
Published by: Kousik Sinha
  • Posted:September 4, 2025 9:14 am
  • Updated:September 4, 2025 11:09 am  

অশোক মজুমদার:  লাল টুকটুকে রঙের বেনারসিটা মিতা মায়ের হাতে দিয়ে বলল, “মা এটা মুখ্যমন্ত্রী দিদি দিয়েছে… আমায় ভালো লাগবে বলো?” মায়ের তখন চোখ ঝাপসা এমন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তিতে…. কী বলবে মেয়েকে? এমন খুশি মেয়ের চোখেমুখে এনে দেবার ক্ষমতা তাদের ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী আজ সেই আনন্দ এনে দিয়েছেন। ঘটনাটি গত ২৬ আগস্ট বর্ধমানে সরকারি সভার….. মিতা মাঝি ও তার হবু স্বামীর হাতে রূপশ্রী প্রকল্পের পঁচিশ হাজার টাকার চেক, বেনারসি শাড়ি আর ধুতি-পাঞ্জাবি তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমি ছবি তুলতে তুলতেই লক্ষ্য করলাম মেয়েটি মুখ তুলতেই পারছে না, চোখে জল কিন্তু কিছু বলতে চায়…. কিন্তু তাড়াহুড়োয় কিছুই বলতে পারল না। স্টেজ থেকে নামতেই দুজনকে বললাম, “তোমরা বোসো। তোমাদের সঙ্গে একটু কথা বলব। প্রোগ্রামটা শেষ হোক।”

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে যেতেই মিতাদের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, অত্যন্ত দারিদ্রের সঙ্গে তাদের দিনযাপন। গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করে তার বাবা। মা বাড়িতেই থাকে। বড়ভাই টুকটাক কাজ করে। ছোটভাই স্কুলে পড়ে। অভাবের সংসারে খাওয়াদাওয়াটুকু ছাড়া আর কিছুরই সংস্থান নেই। তাই কলেজে ভর্তি হয়েও মিতাকে টাকার অভাবে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছে। এই অবস্থায় মিতার বিয়ের ঠিক হয়। স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যে রূপশ্রী প্রকল্পে আবেদন করেন মিতার বাবা বাপন মাঝি। কারণ আয়োজন অনুষ্ঠান তো দূরের কথা, সামান্য সাজিয়ে গুছিয়ে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাবে সেই উপায়ও তাদের নেই।

বাপন মাঝির সেই আবেদন মঞ্জুর হয়। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে শুধু প্রকল্পের চেক নয়, মেয়ের বেনারসি, জামাইয়ের ধুতি পাঞ্জাবি পেয়ে তারা আপ্লুত। রূপশ্রীর পঁচিশ হাজার টাকাতেই মিতার মা-বাবা বুকে বল পেয়েছেন, মেয়েটাকে একেবারে শূন্য হাতে পাঠাতে হবে না। সত্যিই তো, কোন বাবা-মায়ের ইচ্ছে হয় না যে মেয়েকে বিয়েতে একটু সোনা দেবে? আজ আশীর্বাদ স্বরূপ ওই টাকার মধ্যেই সামান্য সোনার জিনিস এবার তারা মেয়ে-জামাইকে দিতে পারবে!! মিতার কথায়, “বাবা মাছ বিক্রি করে। আমাদের গ্রামের দিকে ডোবা-পুকুর আছে। বিক্রিবাটা ভালো হয় না। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকেই মা-বাবা দুশ্চিন্তায় থাকত। এই টাকাটা পেয়ে আমাদের খুব উপকার হয়েছে। দিদি আমাদের মতো মানুষের কাছে ভগবানের মতো। আমি কী বলে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেব জানি না। দিদির জন্যই মা-বাবা আমার বিয়ে দিতে পারছে।”
বুঝতে পারলাম, সমাজ যতই আধুনিক হোক না কেন, কন্যাদায় যে কোনও বাবার কাছে বড় চিন্তা। কিন্তু আজও মেয়ের যাতে শ্বশুরবাড়িতে অমর্যাদা না হয় তার ব্যবস্থা করে ওঠাটাও অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। সেই জায়গাতে এই রূপশ্রী প্রকল্প মিতার বাবা মায়ের মতো লক্ষাধিক পরিবারকে ভরসা জুগিয়েছে।

মিতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। আজ ৩ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যার লগ্নে ওর বিয়ে। সামনেই একটা মন্দিরে নমো নমো করে বিয়েটা হবে। আমার বিয়েতে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মিতার কথার আড়ষ্টতায় বুঝলাম, আমি গেলে ওদের অসুবিধা হবে। তাই আজকের দিনে ওদের আর বিড়ম্বনায় ফেললাম না। অন্য কোনও একদিন নিশ্চয়ই যাব। দেখে আসব ওদের নতুন সংসার। মঙ্গলকোটের মিতার মতো লাখ মেয়েদের জীবনের এই দিনটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলোয় রাঙিয়ে দিয়েছেন রূপশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে….নিন্দুকরা যতই ভিক্ষা ভাতা বলে কটাক্ষ করুক, সব মা-বাবারই মনের আশা থাকে মেয়ের বিয়েটা যেন ভালোভাবে দিতে পারে। রূপশ্রী সেই অসহায় মা-বাবার কাছে একটি নিশ্চিন্ততা।

শহরের চাকচিক্যের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে বসে সরকারি সাহায্যকে দান-খয়রাতি বলাই যায়। কিন্তু এইটুকুই যে মানুষকে কত সাহায্য করছে তা এই মিতারা জানে। এই পঁচিশ হাজার টাকা তাদের কাছে লাখ কোটি টাকার সমান মূল্যবান। আজ মিতার মা যখন চোখের জল আঁচলে মুছে বলেন, “দিদি আমাদের মত গরিব মানুষের পাশে না দাঁড়ালে আমরা ভেসে যেতাম।”….এ কথাটা শুধু ভরসা নয়, একটা বিশ্বাস। আর ওই চোখের জল এক অনাবিল আনন্দের প্রতিফলন। আমি নিজেই তো দেখেছি বাম আমলে সামান্য ত্রিপলও ঠিক বেছে বেছে বামকর্মীরাই পেত। যত হতদরিদ্রই হোক না, কংগ্রেস করলে তার জুটত না। আজ সেখানে পাহাড় থেকে সমতল অবধি প্রতিটি সরকারি পরিষেবা দিতে রং দেখা হয় না। আজ ভাবি, যদি এই টিভি সোশাল মিডিয়া নামক বস্তুগুলো তখন থাকত, বাম সরকার দশ বছরও টিকে থাকত না। চৌত্রিশের রেকর্ড তো দূরের কথা।

এ রাজ্যে তো একটি শিশু জন্মানোর পর থেকে বৃদ্ধ বয়স অবধি প্রকল্পের সুবিধা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। আসলে গোটা বাংলার প্রান্তিক মানুষের অন্তরে পাশে থাকার বিশ্বাসটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গড়ে তুলেছেন আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটকে অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিচার করে, এই অসামান্য অবদান মিতাদের দুশ্চিন্তাকে খুশিতে বদলে দিয়েছে। মিতা বলেছে, সে এই বেনারসি শাড়িটা বিয়েতে পরার পর আমি যত্ন করে রেখে দেব। আমার ছেলেমেয়েকে দেখাব, এটা আমাদের মুখ্যমন্ত্রী দিদি দিয়েছেন। তিনি দরদ দিয়ে আমাদের কথা ভাবেন বলেই আজ আমরা একটু ভালো থাকতে পারছি।

বুধবার বিকেলে ফোন করে মিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, “হ্যালো মিতা, কী করছ? সাজগোজ হয়ে গেল?” খিলখিলিয়ে উঠে মিতা বলল, “এই তো সাজছি….”মিতার এই খুশি, এই আনন্দই শাশ্বত হোক প্রতিটি মেয়ের জীবনে। এভাবেই বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ুক মমতার আলো। মিতা সদ্য স্কুল শেষ করে কলেজে পা দিয়েছিল, কিন্তু অভাব তাকে বাধ্য করেছে পড়ায় ইতি টানতে। স্বামীও তার ভিনরাজ্যে কাজ করতে চলে যাবে। কিন্তু মিতা পড়তে চায়। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। তার সেই ইচ্ছাপূরণ করতে যথাসম্ভব সরকারি ও শুভানুধ্যায়ীদের দ্বারা চেষ্টা করা হবে। ভালো থেকো মিতা। তোমাদের ভালো থাকাতেই বাংলা সুবাসিত থাকবে মমতায়।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement