অর্ণব আইচ: “বাড়িতে পড়াতে যেতাম। কথা হত সবার সঙ্গেই। কখনও বুঝতে পারিনি যে, পরিবারে কোনও অভাব রয়েছে বা অশান্তি চলছে।” হতবাক প্রিয়ংবদা ও প্রতীপের গৃহশিক্ষিকা স্নিগ্ধা খামরাই। আদরের ছাত্রী প্রিয়ার মৃত্যু, আর দুর্ঘটনায় প্রতীপের আহত হওয়ার খবর শোনার পর থেকে চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি ওই শিক্ষিকা। লকডাউনের সময় থেকেই স্নিগ্ধা পড়াচ্ছেন ট্যাংরার অতুল সুর রোডের দে পরিবারের দুই ভাই-বোনকে। মূলত বাংলা ও হিন্দি পড়ান তিনি।
স্নিগ্ধা জানান, পরিবারের বড় ছেলে প্রণয় দে-র ছেলে প্রতীপ ট্যাংরারই একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। পড়াশোনায় ভালো। খুবই বাধ্য। তার উপর ভালো দাবাও খেলে ওই ছাত্র। পরিবারের ছোট ছেলে প্রসূন দে-র মেয়ে প্রিয়ংবদা মধ্য কলকাতার বউবাজারের একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। আদর করে স্নিগ্ধা তাকে ‘প্রিয়া’ বলে ডাকতেন। পড়াশোনায় খুবই ভালো প্রিয়া গান শিখত। ভালো ব্যাডমিন্টনও খেলত বলে দাবি শিক্ষিকার।
দুজনেরই স্কুলের পরীক্ষা চলছে। গৃহশিক্ষিকা জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার কারণে তিনি গত ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ বাড়িতে পড়াতে এসেছিলেন। কিছুদিন আগে তাঁর সঙ্গে প্রিয়ংবদার মা রোমি দে-র সঙ্গে ফোনে কথা হয়। রোমি তাঁকে বলেন, দুই ভাই-বোনের বাংলা ও হিন্দি পরীক্ষার আগে পড়াতে আসতে হবে। কিন্তু তার আগেই প্রিয় ছাত্রী ও তার দিদির মতো ‘সুদেষ্ণাদি ও রোমিদি’র মৃত্যুর খবর শুনবেন, তা কখনওই ভাবতে পারেননি।
স্নিগ্ধা খামরাই জানান, গৃহশিক্ষিকা হওয়ার সুবাদে তিনি বাড়ির ভিতর যেতেন। কখনও বাড়ির কর্তা প্রসূন দে তাঁর ও পরিবারের কুশল সংবাদ জিজ্ঞাসা করতেন। প্রায়ই বাড়ির দুই কর্ত্রী সুদেষ্ণা ও রোমি দে-র সঙ্গে গল্প করতেন। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যে, বাড়ির কর্তারা দেনার দায়ে ডুবে রয়েছেন বা তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। অথচ, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনও কার্পণ্য করতে দেখেননি তিনি। পরিবারের কারও কোনও অভাব ছিল, এমন কিছুও বাইরে থেকে তিনি বুঝতে পারেননি। পরিবারের প্রত্যেকের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল বলেই জানতেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.