Advertisement
Advertisement
Kolkata Durga Puja

‘আদর করি আমার ক্ষুধাকে’, বেহালার এই পুজো মেলাবে গাজা ও তেতাল্লিশের মন্বন্তরকে

ক্লাবটির ২০২৫-এর শারদ আয়োজনের থিম 'নবান্ন'।

Kolkata Durga Puja: Gaza's poet are also part of the Puja ideas of Behala Friends Club
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:September 12, 2025 6:24 pm
  • Updated:September 13, 2025 12:10 pm   

সুলয়া সিংহ ও বিশ্বদীপ দে: ‘আজ পুজোতে আলো জ্বলে, কিন্তু ক্ষুধার অন্ধকার ভুলে যাওয়া যায় না।’ এভাবেই সমকালীন অথবা চিরকালীন এক অন্ধকার মিশে গিয়েছে ‘বেহালা ফ্রেন্ডস’-এর হীরকজয়ন্তীর বর্ষের পুজো ভাবনায়। উৎসবের আলোর রোশনাইয়ের ভিতরে, দেবীর আরাধনার নেপথ্যে যেন চালচিত্রের মতো জেগে রয়েছে এই ভাবনা- ‘দুর্গা মানে শুধু আনন্দ নয়, দুর্গা মানে প্রতিরোধ’। এই সব পঙক্তিগুলি ২০২৫-এর শারদ আয়োজনের থিম ‘নবান্ন’-কেই প্রতিফলিত করছে। আর এমন সব উচ্চারণের সমান্তরালে যুক্ত হয়েছে গাজার নামা হাসানের কলমের স্পর্শও। বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার স্রোত যেন এভাবেই মিশিয়ে দিয়েছে এই বাংলার তেতাল্লিশের মন্বন্তর ও আজকের দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজাকে।

Advertisement

কথা হচ্ছিল শিল্পী প্রদীপ দাসের সঙ্গে। এবারের পুজোর ভাবনা, পরিকল্পনা ও নির্মাণ তাঁরই। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে তিনি জানাচ্ছেন, ”দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন যে মন্বন্তর হয়েছিল বাংলায়, তার ছবি ধরা আছে বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ নাটকে। সামান্য সময় পরেই সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখছেন, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়/ পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ আবার চিত্তপ্রসাদ, জয়নাল আবেদিনরা ছবি আঁকছেন একই বিষয় নিয়ে। এটাই আমাদের পুজোর থিম। যুদ্ধ আমরা কীভাবে দেখছি এখন, আর দুই প্রজন্ম আগে যুদ্ধ কেমন ছিল সেটাই দেখানোর চেষ্টা করেছি।”

 

আর সেটা করতে গিয়েই অবধারিত ভাবে এসে পড়েছে আজকের গাজা। লাগাতার ইজরায়েলি সেনার হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা শহরটা। যারা রয়েছে, তাদের পেটে জ্বলছে খিদের অনন্ত উনুন। রাষ্ট্রসংঘ ঘোষণা করেছে দুর্ভিক্ষের। এহেন পরিস্থিতিতে সমাজকর্মী নামা হাসান লিখেছেন একটি কবিতা। নিজের চোখে দেখেছেন যুদ্ধ ও ক্ষুধার হাহাকারের করুণ ছবি। এই মুহূর্তে সাতটি শিশুকে নিয়ে অন্যত্র চলে গেলেও ছেড়ে আসা গাজার ভয়াবহ ছবি তিনি এঁকেছেন তাঁর কবিতায়। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়- ‘সামনা-সামনি/ আমি আদর করি আমার ক্ষুধাকে/ আমি অনুকরণ করেছিলাম একগুচ্ছ শিষকে/ তার নৃত্যে/ আমি চুমু খেয়েছিলাম এক চড়ুইয়ের ঠোঁটে/ যে ভোরে আমার লতাগৃহে আসে/ কিন্তু আমি রুটি হতে পারিনি/ রুটির আলাদা এক আচার আছে/ যা দেশ থেকে ফুরিয়ে গেছে/ প্রেমিক হতে চাইলে/ তোমার মুখ ধুয়ে নাও ভালো করে/ আলো শুষে নেওয়ার সুযোগ দাও তাকে/ তার গালের টোলের ভেতর রাখো এক দানা গম/ তারপর তাকে হাসতে দাও ক্ষুধার্তদের জন্য/ আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলে/ এক মুঠো লবণ দিয়ে/ একটি গান দিয়ে/ একটি সমুদ্র দিয়ে/ কিন্তু মাছেদের ছিল ভিন্ন মত/ আমরা কেবলই উপযুক্ত/ ডুবে যাওয়ার জন্য/ ধরে রাখো এক টুকরো রুটি/ কারণ খড়কুটো ভেসে থাকবে না বেশিক্ষণ।’

আরবি ভাষায় এই কবিতা এবার দর্শনার্থীরা শুনতে পাবেন মণ্ডপের ভিতরে প্রবেশ করলেই। দেখতে পাবেন কবিতাটির বাংলা তর্জমাও। যা থাকবে মণ্ডপের ভিতরে। এভাবেই দেবীর আবাহনের সুরে মিশে যাবে নিরন্ন মানুষের প্রার্থনাও। তেতাল্লিশের মন্বন্তরকে স্পর্শ করবে গাজার বিষাদ।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ