Advertisement
Advertisement
Kolkata Durga Puja

‘আমি বাংলায় বলছি’… ‘ভাষা সন্ত্রাসে’র প্রতিবাদই কলকাতার এই পুজোর ভাবনা

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি বাংলায় গান গাই’-ই এই পুজোর মূল উদ্দীপনা।

Kolkata Durga Puja: theme of Chaltabagan Sarbojanin is ami Banglay bolchi
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:August 31, 2025 5:39 pm
  • Updated:August 31, 2025 5:48 pm   

সুলয়া সিংহ: ‘আমি বাংলায় গান গাই’… বাংলার মাঠ-ঘাট, জ্যোৎস্নামাখা আকাশ পেরিয়ে আরও বহু দূরে অথচ হৃদয়ের গহীনে বাসা বাঁধে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের এই গান। শিল্পী প্রয়াত হয়েছেন বছরের শুরুতে। কিন্তু একই রকমের অমলিন সেই গানের সুর ও কথা। আর সেই গানই এবার চালতাবাগান সর্বজনীনের দুর্গাপুজোর ভাবনা- ‘আমি বাংলায় বলছি’।

Advertisement

এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাঙালির আক্রান্ত হওয়া, বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশিদের ভাষা’ বলা নিয়ে বিতর্ক খবররের শিরোনামে। এমনই একটা সময়ে দাঁড়িয়ে চালতাবাগানের এমন পুজো ভাবনা কি প্রতিবাদস্বরূপ? সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলার সময় শিল্পী প্রদীপ্ত কর্মকার জানাচ্ছেন, ”ঠিক তা নয়। আসলে পুজোর থিম অনেক আগেই ঠিক হয়ে যায়। এবারের পুজো ভাবনা গত বছরের নভেম্বরেই মাথায় এসেছিল। এই পুজোটা হয় ডিএল রায় স্ট্রিটে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়েরর বাড়ি এখানে। উলটো দিকে স্বামীজির বাড়ি। কাছেই জোড়াসাঁকো। এগুলোই আমাদের বাংলা ভাষা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছিল। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। এই দুই বিষয়কে মেলাতে চয়েছি। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা অনেকে বাঙালি হয়েও যেন বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের প্রতি যে টান তা পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারছি না। কথা বলার সময় যে ভাষা উচ্চারণ করছি তা বাংলা নয়, কেমন বিজাতীয় ভাষা হয়ে উঠছে! অথচ বাংলা এমন একটা ভাষা, যাকে কেন্দ্র করে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। তাছাড়া সাহিত্য, কাব্যে বাংলার যে ব্যাপ্তি তাও অনেক ভাষার চেয়ে দীর্ঘ। এ সবই আমার মাথায় ছিল। আর তাই এটাই হয়ে উঠেছে এবারের পুজো ভাবনা।”

নিজস্ব চিত্র

মণ্ডপ পরিকল্পনাতেও রয়েছে নানা ধরনের ভাবনা। প্রদীপ্তর কথায়, ”আমি একদম শুরু থেকেই ধরছি। ইন্দো-আর্য ভাষা থেকে কীভাবে বিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষা এল তা একটা ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছি। বাংলা সাহিত্যের নানা যুগকেও তুলে ধরা হয়েছে। থাকছে ভাষা আন্দোলনের কথা। সব কিছুই আর্ট ফর্মে তুলে ধরা হবে। ভাস্কর্য, চিত্রকলা, কাঠের কাজ, লোহার কাজ এমনকী লাইভ পারফরম্যান্সও থাকছে।”

প্রতিমার রূপভাবনাতেও কাজ করেছে বাংলা ভাষা। তিনি বলছেন, ”ভাষা শেখায় মা। তাই মাতৃভাষার সঙ্গে মা-ও মিশে রয়েছে। আমাদের প্রতিমাতেও সেই মায়েরই আদল। মায়ের ছেলেমেয়েরা তাকিয়ে রয়েছে তাঁরই দিকে। যেন মা আমাদের নতুন করে ভাষাকে ভালোবাসার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। অর্থাৎ জগজ্জননী ও আমাদের জননী যেন মিশে গিয়েছে। বাংলাভাষা সেখানে হয়ে উঠেছে এক অমোঘ যোগসূত্র।”

কথা হচ্ছিল সাধারণ সম্পাদক মৌসম মুখার্জির সঙ্গেও। এই মুহূর্তে দেশে বাঙালির আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি যে মিশে গিয়েছে পুজো ভাবনার সঙ্গে তা মানছেন তিনি। বলছেন, ”এটা সত্যিই সমাপতন। আসলে বাংলা এমন ভাষা যে ভাষায় পৃথিবীর দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত লেখা হয়েছে। ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। অথচ সেই ভাষাভাষী মানুষ আক্রান্ত হতে হচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে এই পুজো ভাবনায় সেটাই উঠে আসাটা যেন অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠছে।” তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভোটার স্লিপে চিনা, ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাও ছিল। সেখানে লেখা ছিল ‘এই চিহ্নে ভোট দিন’। তাঁর কথায় উঠে এল প্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গও। মৌসম বলেন, ”প্রতুলবাবুর গানটাই আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। যখন এই থিম ভাবা হয়েছিল উনি জীবিত ছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস হয়ে গেল আমরা ওঁকে হারিয়েছি। আমাদের মণ্ডপে থাকবে প্রতুলবাবুর ছবি। লাইভে শোনা যাবে সেই বিখ্যাত গান। এটাই এবার আমাদের পুজোর থিম। ওঁকে স্মরণ করব আমরা।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ