অর্ণব আইচ: যন্ত্রের মেমোরিতেই দশ হাজার রেকর্ড। তাই ধরা পড়ার বেশ কয়েকদিন পরও যদি কেউ দাবি করেন যে, তিনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাননি, সেই দাবি আর ধোপে টিঁকবে না। এবার যে আধুনিক ব্রিদ অ্যানালাইজারগুলি কিনতে চলেছে লালবাজার, তাতেই থাকছে নিজস্ব মেমোরি। উৎসবের মরশুমে বাড়তে পারে মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর প্রবণতা। বিশেষ করে রাতে পানশালা বা ক্লাব থেকে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে অনেকেই ফিরতে পারে বাড়ি। আর মদ্যপান করে গাড়ি চালালেই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাই পথ দুর্ঘটনায় রাশ টানতে এবার ৫০টি অত্যাধুনিক ব্রিদ অ্যানালাইজার কিনছে কলকাতা পুলিশ। সেগুলি তুলে দেওয়া হবে কলকাতার ২৬টি ট্রাফিক গার্ডের হাতে।
অনেক সময়ই দেখা যায়, জরিমানা এড়াতে অনেক মদ্যপ গাড়ি বা বাইক চালক কয়েকদিন পর দাবি তোলেন যে, তিনি সেদিন মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন না। তাই এই দাবি কেউ যাতে না করতে পারে, তার জন্য এই আধুনিক ব্রিদ অ্যানালাইজারে থাকছে নিজস্ব মেমোরি। ওই যন্ত্রের মেমোরিতে থাকছে দশ হাজার রেকর্ড, যাতে সময়, তারিখ, অ্যালকোহলের পরিমাণ, সবই উল্লেখ থাকছে। পরবর্তীকালে কোনও চালক যদি পুলিশকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করেন, তখন এই যন্ত্রই রেকর্ড হাজির করবে। এ ছাড়াও যন্ত্রের রেকর্ডে গাড়ির নম্বর, কোন আধিকারিক পরীক্ষা করছেন, এমনকী টাচ স্ক্রিনে সইয়েরও সুযোগ থাকবে। এই যন্ত্রের ডেটা বা তথ্যের কারচুপি কেউ যাতে করতে না পারেন, তার জন্য পাসওয়ার্ড লক-সহ ‘ডেটা প্রোটেকশনে’র ব্যবস্থা থাকবে। এর ফলে মদ্যপ চালকদের ধরা আরও সহজ হবে বলে দাবি লালবাজারের। জানা গিয়েছে, এই ৫০টি আধুনিক ব্রিদ অ্যানালাইজার কিনতে ২২ লাখ টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে। কোনও মদ্যপ চালক কিছুটা দূর থেকে ফুঁ দিলেও যাতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে স্ক্রিনে ফল ভেসে ওঠে, এবার পুলিশ সেই ব্যবস্থাই করছে।
পুজো শেষ হওয়ার পরও থাকছে উৎসবের রেশ। দিওয়ালি ও কালীপুজো থেকে ক্রিসমাস বা বর্ষবরণের উৎসবে মাতবে কলকাতা-সহ পুরো রাজ্য। উৎসবের দিনগুলি ছাড়াও শীতের আমেজ পড়তে শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেরই মদিরার প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। আর তার সঙ্গে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি বা বাইক চালানোর প্রবণতা বেড়ে চলে। রাতের শহরে এই কারণে যাতে পথ দুর্ঘটনা না হয়, তার জন্য শহরের বিভিন্ন রাস্তায় হবে নাকা চেকিং। আর কলকাতার ট্রাফিক গার্ডগুলির যে আধিকারিকরা নাকা চেকিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদের হাতে থাকবে এই আধুনিক ব্রিদ অ্যানালাইজার। এখন প্রত্যেকটি ট্রাফিক গার্ড, এমনকী, থানাগুলির হাতে ব্রিদ অ্যানালাইজার থাকলেও তা কিছুটা পুরনো মডেলের। তাই আরও নতুন মডেলের এই যন্ত্র আনছে পুলিশ। লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, এই ব্রিদ অ্যানালাইজারের ওজন ৩০০ গ্রামের বেশি নয়। তাই দীর্ঘ সময়ের জন্য এই যন্ত্রটিকে হাতে ধরে রাখতে সমস্যা হবে না। এই ব্রিদ অ্যানালাইজারের উপর দিকে থাকবে আধুনিক সেন্সর। অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, কোনও চালক মদ্যপান করে থাকলে তিনি জোরে ফুঁ দিতে চান না। আবার এতটা দূর থেকে ফুঁ দেওয়ার চেষ্টা করেন, যাতে সেন্সর বিশেষ টের না পায়। কিন্তু এই নতুন যন্ত্রে ভেঙে যাবে এই জারিজুরি। বেশ কিছুটা দূর থেকে ফুঁ দিলেও এই যন্ত্রটি দশ সেকেন্ড সময় নেবে অ্যালকোহলের পরিমাণ বুঝতে। তার পর ৩.২ ইঞ্চির এলসিডি ডিসপ্লে টাচ স্ক্রিনে ফুটে উঠবে অ্যালকোহলের পরিমাণ। চালক কত পরিমাণ মদ্যপান করেছেন, তা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.