স্টুডিওতে কাজে ব্যস্ত শিল্পী মিন্টু পাল। নিজস্ব চিত্র
গৌতম ব্রহ্ম: তাঁর তৈরি ১০০ ফুটের শোয়ানো বুদ্ধমূর্তি দেখতে দেশ-দেশান্তর থেকে মানুষ ভিড় করে বিহারের বুদ্ধগয়ায়। দেশের বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তি তৈরির কারিগর মিন্টু পাল এবার নয়া নজির গড়লেন। কুমোরটুলিতে তাঁর তৈরি ১৮টি দুর্গাপ্রতিমা এবার বিদেশে পুজো পাবেন। কোনও অস্ট্রেলিয়া- পোল্যান্ড, কোনওটি আমেরিকা-কানাডায়। কোনওটি আবার মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইতে। এশিয়া তো রয়েছেই। কোনও একজন শিল্পীর গড়া এতগুলো দুর্গামূর্তির এক বছরে বিদেশে পাড়ির দৃষ্টান্ত নজিরবিহীন বলেই মনে করছে কুমোরটুলি। তবে এই প্রথম নয়, মিন্টুর তৈরি মূর্তির চাহিদা বিদেশে ক্রমবর্ধমান।
গতবার মিন্টুর ১৪টি প্রতিমা দেশের গণ্ডি পেরিয়েছিল। চারটি কালীঠাকুর ও লক্ষ্মী-সরস্বতী ধরলে সংখ্যাটি ছিল ২২। এবার দুর্গার সঙ্গে কালী, লক্ষ্মী-সরস্বতী মিলিয়ে মোট ২৬টি মূর্তি বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে বলে জানালেন মিন্টু পাল। এখনও পর্যন্ত ১৪টি ঠাকুর প্লেনে চেপেছে। আরও চারটি দুর্গামূর্তি পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায়। মিন্টু জানালেন পোল্যান্ড, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও স্পেনেও ঠাকুর যাবে। জানা গেল, নাওয়া খাওয়া ভুলে পাঁচটি ওয়ার্কশপে কাজ চলছে মিন্টুর। ১৮ জন মৃৎশিল্পীকে নিয়ে মিন্টুর টিম। লক্ষ্মীলাভের বহরও কম নয়। বিদেশে যাওয়া ফাইবার গ্লাসের প্রতিটি ঠাকুরের মূল্য দেড় লক্ষ থেকে তিন লক্ষের মধ্যে।
মিন্টু বলেন, “আসলে ঠাকুর নিয়ে যাওয়ার খরচ এত বেশি যে, দাম নাগালের মধ্যেই রাখতে হয়।” এবছর কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, সুইডেন, স্পেন, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দুবাইতে মিন্টুর গড়া ঠাকুর যাচ্ছে। আমেরিকার টেক্সাস, ফ্লোরিডা, নিউ জার্সিতে ইতিমধ্যেই কুমোরটুলি থেকে পাড়ি দিয়েছেন দশভুজা। তবে এবার মিন্টু পাল বেশি উত্তেজিত কালীঠাকুর নিয়ে। এই প্রথমবার ফাটা কেষ্ট-র পুজোর মূর্তি তৈরির বরাত পেয়েছেন মিন্টু। রথের দিন রীতি মেনে কালীমূর্তির কাঠামোপুজোও হয়ে গেল। এই উপলক্ষেই কুমোরটুলির ওয়ার্কশপে গিয়েছিলেন প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। মিন্টু পাল তাঁকে সবটা ঘুরিয়ে দেখান। অ্যালবামে দেখান তাঁর তৈরি সৃষ্টির ছবি। সবটা দেখে মুগ্ধ কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “অপূর্ব সব সৃষ্টি। চোখ জুড়িয়ে গেল।”
মিন্টু জানালেন, “অনেকদিন ধরেই ফাটা কেষ্টর পুজোর মূর্তি তৈরির স্বপ্ন দেখেছি। অবশেষে স্বপ্নপূরণ হল।’’ আগে এই মূর্তি তৈরি করতেন কালীপদ পাল। পরে ছেলে মাধব পালের হাতে ব্যাটন যায়। এবছর মিন্টু পাল। কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে মিন্টুর গড়া মূর্তিতে? ৫৯ বছরের শিল্পী জানালেন, “বলতে পারব না। তবে ১৮ জন সহায়ক থাকলেও ঠাকুরের মূর্তি এবং চোখ আমি নিজের হাতে তৈরি করি। তাই আলাদা একটা ঘরানা বোধহয় তৈরি হয়েছে।” শুধু ঘরানা নয়, আলাদা চাহিদা তৈরি হয়েছে মিন্টুর সৃষ্টির। সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার থেকে বিবেকানন্দ পার্ক, কুমোরটুলি পার্ক থেকে সল্টলেক এফডি ব্লক, শহরের অনেক নামী পুজোরই মূর্তি গড়ার দায়িত্ব এবার টিম-মিন্টুর। ৫১১ নম্বর রবীন্দ্রসরণির সেই আঁতুড়ঘরে রাতদিন এক করে চলছে মূর্তি গড়ার কাজ, সৃষ্টি সুখের উল্লাস। আর তো মাত্র তিন মাস বাকি!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.