Advertisement
Advertisement
Mamata Banerjee

শারদোৎসবের সূচনায় মুখ্যমন্ত্রী, সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে ৩০০০ পুজো উদ্বোধনে মমতা

রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর লেখা-সুর করা ১৭টি গানের অ্যালবামও রিলিজ হবে।

Mamata Banerjee breaks all-time record by inaugurating 3,000 durga pujas

ফাইল ছবি

Published by: Subhodeep Mullick
  • Posted:September 21, 2025 10:29 am
  • Updated:September 21, 2025 10:29 am   

স্টাফ রিপোর্টার: পুজোর মুখে আবহাওয়া কিছুটা বিগড়োল। তাই কিছুটা সতর্কতা নিয়ে বৃষ্টি মাথায় করেই শনিবার শারদোৎসবের সূচনা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে তিন হাজারের বেশি পুজো উদ্বোধন রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর, যা সম্ভবত সর্বকালের রেকর্ড। গলা সামান্য ফুলেছে। তা জানিয়ে সকলকে বৃষ্টি নিয়ে সতর্ক করে এবারের পুজোয় স্পষ্টভাবে বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বাংলার সম্পদকে আরও বেশি করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার কথা বলে দিলেন মমতা। তারই সঙ্গে বাঙালি অস্মিতায় শান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, “সকলের নিজস্ব ধর্ম, ভাষা, মত রয়েছে। একেকজনের একেক ভাষা। আমি চাই সকলেই তাঁদের নিজেদের মাতৃভাষাকে সম্মান করুন। আমার তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু বাংলা ভাষায় কথা বললে অত্যাচার করতে হবে, তাতে আমি একমত নই।”

Advertisement

শনিবার হাতিবাগান সর্বজনীন, টালা প্রত্যয় আর শ্রীভূমি স্পোর্টিং-এর দুর্গাপুজোর মণ্ডপের দ্বারোদঘাটন করেন মুখ্যমন্ত্রী। টালা প্রত্যয়ের এবার ১০০ বছর। ইউনেসকো ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে কলকাতার পুজোগুলোকে। পুজোয় তাদের প্রতিনিধিরা প্রতিবারই আসেন, সংযোগ রাখেন। ফলে দেশের তো বটেই, বিদেশি পর্যটকদের কাছেও পুজোর সময় সেরা ডেস্টিনেশন কলকাতা। সেই ভাবনা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “বিদেশের অতিথিদের যাঁরা আসবেন, বাংলার কৃষ্টি দিয়ে ঘেরা ধানের ছড়া তাঁদের দিও। যাঁকেই যা দেবে সেটা যেন বাংলায় তৈরি করা হয়। ধানের ছড়া হলে চাষিদের থেকে তা নিয়ে এসো।” মুখ্যমন্ত্রী এদিন প্রথমেই হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোর মণ্ডপের উদ্বোধন করেন। আজ থেকে মাতৃপ্রতিমার উদ্বোধন করবেন। তাঁর কথায়, “মহালয়ায় তর্পণ হবে। চণ্ডীপাঠ হবে। তার পরেই মাতৃপ্রতিমার উদ্বোধন করব।”

রবিবার মহালয়ার পুণ্যলগ্নে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র জাগোবাংলার উৎসব সংখ্যা প্রকাশিত হবে দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে। সেটি সেরে দক্ষিণ কলকাতার দু-তিনটি পুজো উদ্বোধনের পর মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ক্লাব চেতলা অগ্রণীর পুজোয় মাতৃপ্রতিমার চোখ আঁকবেন মুখ্যমন্ত্রী। ভার্চুয়াল মাধ্যমে উদ্বোধন করার কথা নাকতলা উদয়নের পুজোর। তার আগেই এদিন এবারের পুজোর মূল সুর বেঁধে দিলেন মমতা। বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের বিজেপিশাসিত রাজ্যে অত্যাচার নিয়েও নিজের অবস্থান মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমার এখানকার অনেক শ্রমিকই বাইরে কাজ করেন। কারণ তাঁরা দক্ষ, ট্যালেন্টেড। এ রাজ্যের ২২ লক্ষ শ্রমিক ভিনরাজ্যে কাজ করেন। তবে দেড় কোটি মানুষ বাইরে থেকে এখানে এসে কাজ করেন। আমি মনে করি আমাদের দেশ আমাদের এটা শিখিয়েছে।”

পুজোর উদ্বোধন চতুর্থীর মধ্যে সেরে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তর-দক্ষিণ কলকাতার ছোট-বড় পুজো মিলিয়ে প্রায় শতাধিক পুজোর উদ্বোধন রয়েছে। বাকি উদ্বোধন জেলায় জেলায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে। আজ মুখ্যমন্ত্রীর লেখা-সুর করা ১৭টি গানের অ্যালবামও রিলিজ হবে। সে কথা মনে করিয়ে শনিবার বারবার বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি, তার গান, বাংলার মাটির ফসলের মতো বাংলার একান্ত নিজের সম্পদকে রক্ষা করার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিযায়ী শ্রমিক-সহ মণ্ডপ-শিল্পীদের শ্রমকে স্মরণ করেও গান লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের গাওয়া সেই গানের কথা, ‘সেই মেধাই আসল মেধা, যে মানুষ তৈরি করে। সেই মেধাই আসল মেধা যে সমাজ তৈরি করে। অনেক মেধাই লুকিয়ে থাকে, আমাদের মাটির ঘরে। সেই মেধাই আসল মেধা যা অলীক সৃষ্টি করে’। শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের পুজোয় এই গানের কথা উল্লেখ করে মমতা ঐক্যের বার্তা দিয়ে বলেন, “প্রত্যেকের নিজস্বতা রয়েছে। সকলের মত পথ আলাদা। কিন্তু সকলে যখন সমবেত হন, তখন একটাই পথ থেকে। সেটা ঐক্যের। এই দেশ তাই শিখিয়েছে আমাদের। মেধা সকলের আছে। সমাজের প্রান্তিক স্তরে থাকা মানুষেরও মেধা আছে। তাঁকে সম্মান জানাতে হবে। এই যে বহুতল হয়, নকশা পেয়ে শ্রমিকরা গড়ে তোলেন। তৈরি হওয়ার পরে, তাঁকে কি ঢুকতে দেওয়া হয়, উদ্বোধনে তাঁদের কি ডাকা হয়?” তাঁর কথায়, “যেদিন ঐক্য থাকবে না, সেদিন দেশ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। তাই আমরা চাই, দেশ ভালো থাকুক, ঐক্যবদ্ধ থাকুক।”

টালা প্রত্যয়ের থিম ‘বীজ অঙ্গন’। মুখ্যমন্ত্রীরই ঠিক করে দেওয়া। সেখানে মণ্ডপ উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পুরনো বাংলা গানের কথা উল্লেখ করেন। কখনও আক্ষেপে, কখনও কিছুটা হালকা মেজাজে নিজের লেখা-সুর করা বাংলা গানের কথা মনে করিয়ে দেন। টালা প্রত্যয় চেয়েছিল তাদের জন্য একটি থিম সং যেন মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে দেন। মমতা বরাবর মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পুজোর থিম সং করেন। সে কথা মনে করিয়ে বলেন, “অরূপের পুজোয় থিম সং আমি করি। অরূপ চায় না ওর পুজোর থিম সং আমি করি বলে, আর কারওরটা করি। এটা ওর আবদার।” তবে ফসলের বীজ সংরক্ষণের যে বার্তা টালা প্রত্যয় দিয়েছে, সেই অনুসারী গান মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশিতব্য গানের অ্যালবামেই রয়েছে বলে দু-তিনটি গানের কথা এই মঞ্চেই বলে দেন। যেমন ‘ধনধান্যে ভরে’ গানটি। এছাড়াও রয়েছে, ‘আমার আঁখির উচ্ছ্বাসে আমি হাসি উচ্ছ্বাসে’। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আগে পুজোর সময় কত শিল্পী পুজোর গান করত। পুজো প্যান্ডেলে সেগুলো বাজত। কিন্তু এখন বাংলার কদর যদি আমরাই না করি, আমার মাতৃভাষা বাংলা। এটাই আমাদের মনের প্রত্যয়।” অরূপের পুজোর গান অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর অ্যালবামে এবার নেই। শিল্পী জিতের গাওয়া সেই গানটি দেরিতে আসায় তা সম্ভব হয়নি।

এদিকে শনিবার প্রবল বাজ পড়েছে রাজ্য-সহ কলকাতার নানা জায়গায়। ভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর পাড়াতেই একটি বাড়ির ছাদে বাজ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মণ্ডপের উদ্বোধনের আগে সেই বাড়িটিও দেখে আসেন মমতা। আজ ভরা কটাল। তাতে টানা বৃষ্টি আর ডিভিসির জল ছাড়ায় বন্যা হয়ে গিয়েছে। আবহাওয়াও এখনও বিগড়ে। যা নিয়ে একাধিকবার সকলকে সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বৃষ্টিতে না ভিজে শরীর সুস্থ রাখুন।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ