ফাইল ছবি
অর্ণব আইচ: লাগেজ ব্যাগের ভিতর কার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি ‘ফ্ল্যাপ ফাইল’। সেই ফাইলে কিছু কাগজের আড়ালে ফাইল ভরতি বিপুল পরিমাণ টাকা। লাগেজ ব্যাগে করে যে টাকা ‘পাচার’ হচ্ছে, তা বোঝার উপায়ই ছিল না। এভাবেই বিভিন্ন বেসরকারি কলেজ থেকে পাওয়া টাকা মহিষবাথানের অফিস থেকে পাচার হত মানিক ভট্টাচার্যর কাছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যর হাতে এভাবেই তিন বছরে পৌনে ২১ কোটি টাকা পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল। এমনই অভিযোগ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)।
ইডির দাবি, তাপস মণ্ডলের কর্মী গৌতম দাস মানিকের বিশেষ ‘লোক’-এর হাতে তুলে দিতেন ওই ফাইল ভরতি টাকা। ইডির জেরার মুখে এই কথা স্বীকার করেছেন গৌতম ওরফে বিশ্বব্রত নিজেও। তাঁর সঙ্গে তাপস পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্যর। গৌতম ইডিকে জানিয়েছেন, তাঁদের অফিস থেকে টাকা আনতে এক একবার মানিক এক একজন ‘পাচারকারী’কে পাঠাতেন। কখনও এক ব্যক্তিকে পাঠাতেন না। এই তথ্যগুলি মানিক ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে পেশ করা চার্জশিটেও উল্লেখ করেছে ইডি।
ইডির সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজগুলিতে অনলাইন ভরতি শেষ হয়ে যাওয়ার পর মানিক ভট্টাচার্য অফলাইনে ভরতির অনুমতি দেন। তার জন্য প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিতে বলা হয়। এই ব্যাপারে মানিক ভট্টাচার্য অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং আর্কাইভার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাপস মণ্ডলকে নির্দেশ দেন। সেইমতো তাপসের নির্দেশে তাঁর কর্মী গৌতম অফলাইনে ভরতি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের তালিকা ফাইলবন্দি করে তা মানিককে পাঠান। সেই তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে টাকা তুলে বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজগুলি তা পাঠিয়ে দিত সল্টলেকের মহিষবাথানে তাপস মণ্ডলের কলেজ তথা অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে। ইডির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সালের ব্যাচের ৩৫৩টি বেসরকারি কলেজের ৯ হাজার ৫৪৯ জন ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে ৪ কোটি ৭৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা তোলা হয়। এর পরের ব্যাচ ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের ৩২২টি কলেজের ১২ হাজার ৮২৪ জন ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে ৬ কোটি ৪১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ও ২০২০ থেকে ২০২২ সালের ব্যাচের ৩৬০টি কলেজের ১৯ হাজার ৯১ জন ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে ৯ কোটি ৫৪ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা তোলা হয়। মোট তোলা হয় ২০ কোটি ৭৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।
কলেজগুলির প্রতিনিধিরাই ওই বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে আসতেন সল্টলেকের মহিষবাথানের অফিসে। তাপস মণ্ডলের কর্মী গৌতমই ওই টাকা নিয়ে তার হিসাব রাখতেন। নির্দেশমতোই কার্ডবোর্ডের ‘ফ্ল্যাপ ফাইল’-এর ভিতর কাগজপত্রের আড়ালে তাঁকে লুকিয়ে রাখতে হত টাকা। সেই ফাইল লাগেজ ব্যাগের ভিতর রেখে পাচার করা হত। মানিক যে লোক পাঠাতেন, তাঁকেই সেই টাকা দেওয়া হত। এরকম মানিকের একাধিক ‘লোক’-এর সন্ধান মিলেছে। তারা মানিকের বিধানসভা এলাকার কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদেরও সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.