Advertisement
Advertisement

Breaking News

Howrah

পড়ন্ত বিকেলে বারান্দায় একদল রোদ্দুর, হাওড়া মহিলা থানায় বসছে পাঠশালার আসর

সোম থেকে শনি এমনই দৃশ্য দেখা যায় হাওড়ার মহিলা থানায়।

Pathshala session is being held at the Howrah Women's Police Station

হাওড়া মহিলা থানার বারান্দায় পড়ুয়াদের সঙ্গে পুলিশ দিদি। নিজস্ব ছবি।

Published by: Gopi Krishna Samanta
  • Posted:June 9, 2025 10:16 am
  • Updated:June 9, 2025 10:18 am  

অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: বিকেলবেলা বারান্দায় একঝলক রোদ্দুর। কেউ বড়, কেউ ছোট, কেউ বা একেবারে খুদে। ভাবছেন, রোদ্দুরের আবার বয়স হয় নাকি! হ্যাঁ, ঠিক তাই। তবে, এই রোদ্দুর সূর্যের আলোকছটা নয়, এ হল শিক্ষার আলোর ছটা। সপ্তাহে সোম থেকে শনি এমনই দৃশ‌্য দেখা যায় হাওড়ার মহিলা থানায়। ৬ দিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ মহিলা থানায় গেলে দেখা যাবে, বারান্দায় মেঝেতে সার দিয়ে বসে কচিকাঁচারা। আর, তাদের পড়াচ্ছেন পুলিশ আধিকারিকরা। মূলত, রামকৃষ্ণপুর গঙ্গার ঘাট ও হাওড়া স্টেশন চত্বরে ঘুরে বেড়ানো গরিব শিশুদের থানায় নিয়ে এসে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন ‘পুলিশ দিদিরা’। পুলিশ দিদিরাই এই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘বারান্দায় রোদ্দুর’।

Advertisement

কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ কাজ করছে হাওড়ার মহিলা থানা। ৩ বছর থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ৫৪ জন ছেলেমেয়েকে নিয়ে এখন নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন মহিলা থানার এসআই, এএসআই, কনস্টেবল ও সিভিক ভলান্টিয়াররা। অ, আ, ক, খ থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষার যাবতীয় পাঠ দেওয়া হচ্ছে থানার এই পাঠশালায়। রাস্তার ধারে থাকা যে সমস্ত শিশু স্কুলে যায় না, স্কুলছুট, ভিক্ষাজীবী বা নেশা করে, তাদেরই ধরে এনে থানায় পড়াশোনা শেখান পুলিশ দিদিরা। তাঁরা মনে করেন, শিক্ষার আলো পেলে এরা আর এসব কিছুই করবে না। শুধু পড়াশোনাই নয়, শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়মিত আসছেন চিকিৎসকরা। পাশাপশি চলছে সংস্কৃতিচর্চাও। নানা বিশেষ দিনে শিশুদের নিয়ে প্রভাতফেরি করা হচ্ছে। করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মহিলা থানার বারান্দায় শিশুরা ঠিকমতো পড়াশোনা করছে কি না তা মাঝে মাঝেই দেখতে আসছেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী।

হাওড়া সিটি পুলিশের এক আধিকারিক জানান, গরিব শিশুরা যাতে পড়াশোনা করতে পারে তার ব্যবস্থা করা, শিশুশ্রম থেকে তাদের বিরত করা, নাবালিকাদের ভালো স্পর্শ, খারাপ স্পর্শ কোনটা, তা শেখানো ও রাস্তার ধারে থাকা শিশুরা যাতে কোনওভাবে অপরাধ জগতে পৌঁছতে না পারে, তাদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে যায়–সেই লক্ষ্যেই থানার বারান্দায় বসে শিশুদের শিক্ষাদানের এহেন উদ্যোগ। এছাড়া অনেক নাবালিকাকেই কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তা রুখতেও এই ধরনের শিক্ষাদানের উদ্যোগ পুলিশের।

বছরখানেক আগে কয়েকজন মাত্র শিশুকে মহিলা থানায় ধরে এনে পড়াশোনা শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই উদ্যোগই বর্তমানে নিয়মিত পাঠশালায় রূপান্তরিত হয়েছে। হাতেগোনা ছাত্রছাত্রী থেকে এখন সংখ‌্যাটা বেড়ে হয়েছে ৫৪। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটে বাজলেই স্কুলের মতো নিয়ম করে থানার বারান্দায় মেঝেতে এসে বইখাতা নিয়ে এসে বসে পড়ছে তারা। স্কুলের মতো তাদের নির্দিষ্ট ড্রেসও রয়েছে। লাল রঙের জামা। আর তাতে লেখা রয়েছে ‘বারান্দায় রোদ্দুর’। একে একে পুলিশ আধিকারিকরা এসে এই শিশুদের বোর্ডে লিখে পড়াচ্ছেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। ইদানীং বহু সংস্থা এই শিশুদের পড়াশোনার জন্য বইখাতাও দিচ্ছে। পড়াশোনার শেষে থানা থেকে রোজ রাতের খাবারও নিয়ে যাচ্ছে শিশুরা। শিশুদের নিয়মিত এই খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার। নিয়মকরে রবিবার ছুটিও থাকছে।

এক পুলিশ আধিকারিক জানালেন, ‘‘গরিব শিশুগুলির মধ্যে শিক্ষার আলো জ্বলুক। রোদ্দুরের মতো জ্বলজ্বল করুক তারা। আমরা এটাই চাই। তাই এই পাঠশালার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বারান্দায় রোদ্দুর’।’’

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement