স্টাফ রিপোর্টার: ৫১,৩০০। ‘ক্রাই অফ আওয়ার মূর্তি এক্সপেন্স’-এর পাশে জ্বলজ্বল করছে টাকার অঙ্ক। অথচ, মূর্তির কারিগর বলছেন, তিনি মূর্তির জন্য এক পয়সাও নেননি। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্টের দাখিল করা অডিট রিপোর্টের এহেন ‘মিথ্যাচার’ মাথা তুলে দিনভর বিভ্রান্তি ছড়াল। সমাজমাধ্যম থেকে শুরু করে চায়ের ঠেক, সর্বত্র প্রশ্ন- কে ভুল? শিল্পী না জুনিয়র ডাক্তাররা। একই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, মূর্তির দাম ৫১,৩০০ টাকা। শিল্পী বলছেন, বিনামূল্যে দিয়েছে। এর একটা ব্যাখ্যা চাই তো? যেভাবে অভয়া নিয়ে রাজনীতি করছে বিরোধীরা তাতে তো প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অবশ্য চরম অস্বস্তিতে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের সদস্যরা। অনিকেত মাহাতো জানিয়েছেন, মূর্তি বসাতে, শেড-লাইট লাগাতে, অনুষ্ঠান করতে এই ৫১ হাজার খরচ হয়েছে। এই ব্যাখ্যায় বিভ্রান্তি কমেনি। উলটে বেড়েছে। কারণ, অডিট রিপোর্টে কালচারাল প্রোগ্রামের জন্য আলাদা টাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার, মৌলালি যুব কেন্দ্রে। অভয়াকে নিয়ে ডাকা নাগরিক কনভেনশনে শিল্পী অসিত সাঁই জানান, “আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা আমায় অনুভূতিপ্রবণ করে তুলেছিল। বাধ্য করেছিল ওই মূর্তি বানাতে। নিজের কাছেই ফাইবারের মূর্তিটি রেখে দিয়েছিলাম। দেখলাম জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন করছে। ওদের ওই মূর্তিটা বিনামূল্যে দিয়ে দিই।” তবু কেন নিজেদের ব্যালান্স শিটে জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্ট জানাল, আন্দোলনের জন্য এক কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা খরচের মধ্যে মূর্তির জন্য ৫১,৩০০ টাকা ধার্য করল? প্রোগ্রেসিভহেলথ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ডা. করবী বড়াল এই মিথ্যাচারের নিন্দা করেছেন। এখনও দু’কোটির বেশি টাকা বেঁচে রয়েছে অ্যাকাউন্টে। মিথ্যে ফাঁস হওয়ার পর, অর্থসাহায্য করেছিলেন এমন অনেকেই বলছেন, “আদৌ ওই টাকা আছে? নাকি সেটাও সাফ হয়ে গিয়েছে।”
চাপা গুঞ্জন আন্দোলনকারীদের মধ্যে। নাগরিক সমাজের অনেকেই সত্যজিৎ রায়ের জয় বাবা ফেলুনাথ সিনেমার সংলাপ ধার করে বলছেন, “যার একটা মিথ্যে ধরা পড়ে গিয়েছে তার ওপর আর বিশ্বাস রাখা যায় না।” আসলে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর পর কিউআর কোড দিয়ে, মোবাইল নম্বর শেয়ার করে রাশি-রাশি টাকা তুলতে শুরু করেন ফ্রন্টের নেতারা। চাপে পড়ে, গত এপ্রিলে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট প্রকাশ করে ব্যালান্স শিট। কিঞ্জল-দেবাশিসরা জানান, সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি অনুদান পেয়েছে ফ্রন্ট। তার মধ্যে এক কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। হাতে এখনও দু’কোটির বেশি টাকা। খরচের সে বহর দেখে অনেকেই চোখ কপালে তুলেছিলেন। সে সন্দেহ যে অমূলক নয়, তা অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ হয়ে গেল বৃহস্পতিবার মৌলালিতে অভয়ার সম্মেলনে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.