স্টাফ রিপোর্টার: বিজেপির নব নির্বাচিত রাজ্য সভাপতির মুখে জ্যোতি বসুর সুখ্যাতি! ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যে বাম-কংগ্রেসের মহাজোটের আহ্বান করেছেন শমীক ভট্টাচার্য। কিন্তু পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিল রাজ্যে জোটসঙ্গী দুই বিরোধী দল। উল্টে সংবিধান লঙ্ঘন করে বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদকে উৎখাতের পাল্টা ডাক দিয়েছে দুই দলই। সিপিএমের তরফ থেকে এমনকী এও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন ‘বিজেপি অসভ্য বর্বরদের দল।’
পদে বসার পরপরই শমীকের সরাসরি আহ্বান ছিল, “দলীয় পতাকা ভুলে এখন এক থাকার লড়াই। যাঁরা জ্যোতি বসুকে শ্রদ্ধা করেন, তাঁদের সকলের একসঙ্গে থেকে লড়াই করার সময় এটা। একমাত্র লক্ষ্য যত মত তত পথ। হিন্দুত্ববাদ বা উগ্র হিন্দুত্ববাদ বলে কোনও শব্দ নেই। তৃণমূলের অপশাসনমুক্ত করাই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনের একমাত্র লক্ষ্য।” রবিবার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকীতে কলকাতার একাধিক মঞ্চ থেকে শমীকের ফের আহ্বান, “নিজের মতাদর্শ সরিয়ে রেখে শ্যামাপ্রসাদের প্রস্তাবে ভোট দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। এটা পশ্চিমবঙ্গ রক্ষার লড়াই। ইন্দিরা গান্ধীর হাতে সব অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। আজকের লড়াইটাও রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার লড়াই। জ্যোতি বসুকে সম্মান করলে তাঁর গড়া পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসুন।”
বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদের কথা মনে করিয়ে শমীকের বক্তব্য, “বাংলাদেশে ইন্দিরা গান্ধী লাইব্রেরির ৭০ হাজার বই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদে যে শিক্ষকের কাছে আগের দিন পড়েছেন, পর দিন তাঁকেই তলোয়ার নিয়ে আক্রমণ করা হল। এটা হচ্ছে মৌলবাদ, ধর্মান্ধ ইসলামি ফ্যাসিবাদ। গোটা পৃথিবীর জন্য অভিশাপ এই মৌলবাদ। মানবসভ্যতার ক্যানসার। এটা থেকে মুক্তি পেতে হবে। আর এই মুক্তির পথ একা কোনও রাজনৈতিক দল বের করতে পারবে না। এগিয়ে আসতে হবে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে।” ১৯৪৭-এর বাংলা ভাগের প্রসঙ্গে প্রয়াত আরেক সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর কথাও টানেন শমীক। বামপন্থীদের উদ্দেশে বলেন, “বামপন্থীদের মনে রাখতে হবে, সুভাষ চক্রবর্তী বলতেন, জ্যোতি বসু লিডার অফ দ্য লিডার্স। তাঁর দূরদর্শিতা ছিল। জানতেন, এমন পরিণতি হবে একদিন। তাই ১৯৪৭ সালে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ভোট দিয়েছিলেন। আজ সেই ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আনা হয়েছে পয়লা বৈশাখ।” তাঁর কথায়, “সেই বিধায়কদের শ্রদ্ধা জানাই, যাঁরা কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচিত হলেও, শ্যামাপ্রদের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। প্রণাম জানাই জ্যোতি বসু এবং রতনলাল ব্রহ্মকে, যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ তৈরি করেছিলেন। সেই ইতিহাস যাঁরা কলঙ্কিত করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।”
শমীকের এই প্রস্তাবই সরাসরি খারিজ করে দেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরি। বলেন, “কবে ইন্দিরা গান্ধীর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন? ভারতের একটা সাম্প্রদায়িক শক্তি, যারা দেশের সংবিধান পাল্টাতে যায়, হিন্দু রাষ্ট্র গঠন করে যারা দেশের ঐক্য, সাম্য, সমানাধিকার খতম করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেই সবার এক হওয়া দরকার। আর সেই কাজটা করে কংগ্রেস।” তাঁর কথায়, “বাংলায় বিজেপি হালে পানি পাচ্ছে না বলে বলছে, সব এক হও, হিন্দু মুসলিম এক হও। আমরা বলব, সবাই এক হয়ে বিজেপি তাড়াও।”
এদিন সিপিএমের স্যোশাল মিডিয়া পেজ থেকেও জ্যোতি বসুর বিজেপি দল নিয়ে করা মন্তব্য মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই মন্তব্য টেনেই সিপিএমের শতরূপ ঘোষের বক্তব্য, “জ্যোতি বসুর বাংলাকে জ্যোতি বসুর দলই রক্ষা করবে। তার জন্য বিজেপির ভাড়াটে লোক লাগবে কেন? শমীক ভট্টাচার্য শিক্ষিত-সজ্জন মানুষ। ভালো করে জানেন যে জ্যোতি বসু বলতেন, ‘বিজেপি অসভ্য-বর্বরদের দল।’ ফলে জ্যোতি বসুর পথে বাংলাকে রক্ষা করতে গেলে, তাঁর দেখানো অসাম্প্রদায়িক বাংলাকেই রক্ষা করতে হবে।” শমীকের উদ্দেশে এর সঙ্গেই শতরূপের সংযোজন, “উনি বাংলায় বিজেপির সভাপতি হওয়ার পর দুর্গাপুজোর ভাসান ও তাজিয়া একসঙ্গে দেখতে চেয়েছিলেন। আমিও বলব, সামনের বার আপনিও বামেদের ভোট দিন, আপনার দলের লোকেরাও দিক। বাংলায় বামফ্রন্ট সরকার এলে আপনার ভাসান ও তাজিয়া একসঙ্গে দেখার স্বপ্ন পূর্ণ হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.