অভিরূপ দাস: ধনুকের মতো মেরুদণ্ড। সোজা হয়ে তাকাতে পারত না বছর পনেরোর কিশোর আনিসুর রহমান (নাম পরিবর্তিত)। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান, ৬৫ ডিগ্রি কোণে মেরুদণ্ড বেঁকে গিয়েছে তার। মেরুদণ্ড সোজা করার অস্ত্রোপচার যেমন জটিল তেমন দুরূহ। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা আনিসুরের পরিবারের সামর্থ্য ছিল না বেসরকারি হাসপাতালে বিপুল খরচ করে এ অস্ত্রোপচার করার।
আনিসুরের বাঁকা ইড়া-পিঙ্গলার স্রোতকে সোজা করে দিল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের অস্থিশল্য বিভাগ। এনআরএস-এর অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কিরণকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সফল অস্ত্রোপচার হল আনিসুরের। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আনিসুরের যে সমস্যা ছিল, চিকিৎসা পরিভাষায় তার নাম স্কোলিওসিস। কিরণবাবু জানিয়েছেন, স্কোলিওসিস আক্রান্ত মেরুদণ্ডের ৩৩টি হাড়েই গঠনগত সমস্যা থাকে। মূলত বাড়ন্ত বয়সেই ছোটদের শরীরে এই সমস্যা দেখা যায়। যেমনটা হয়েছিল আনিসুরের। জন্ম থেকে এ অসুখ ছিল না আনিসুরের। ন’-দশ বছর বয়স থেকে টের পান অভিভাবকরা। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শিরদাঁড়া আরও বেঁকে যেতে থাকে। কিরণবাবু জানিয়েছেন, মেরুদণ্ড খুব বেশি বেঁকে গেলে অস্ত্রোপচার করা বাধ্যতামূলক। শিরদাঁড়া খুব বেশি বেঁকে গেলে নার্ভগুলোয় চাপ পড়ে। তা থেকে পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, হাঁটাচলায় সমস্যা তৈরি হয়।
কিরণবাবু আরও জানিয়েছেন, মেরুদণ্ড ৪০ ডিগ্রির উপর বেঁকে গেলেই তাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে ধরা হয়। এক্ষেত্রে ৬৫ ডিগ্রিতে বেঁকে ছিল। সেটাকে মেরামত করে ১৪ ডিগ্রিতে আনা হয়েছে। এ অস্ত্রোপচারে প্রথমে প্রোন পজিশন বা উপুড় করে শোয়ানো হয় রোগীকে। খুলে ফেলা হয় মেরুদণ্ড। মেরুদণ্ডের যে অংশ বাঁকা তা ধরে ধরে দু’পাশে স্ক্রু লাগানো হয়। ধাতব রড দিয়ে ধীরে ধীরে সোজা করা হয় মেরুদণ্ড। অস্ত্রোপচারের পর বাহাত্তর ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয় রোগীকে। সম্ভব হলে পরের দিন থেকেই রোগীকে হাঁটানো হয়। ডা. কিরণকুমার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ব্যথা সইতে পারলে অস্ত্রোপচারের পরের দিন থেকেই রোগীকে হাঁটানো হয়। মেরুদণ্ড সোজা করে লাগানো হয় টাইটানিয়াম স্ক্রু, এই স্ক্রু আর খুলতে হয় না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.