সুব্রত বিশ্বাস: বুকে, পিঠে ব্যান্ডেজ করা। বড় বড় শ্বাস নিয়ে শ্বাসকষ্ট দূর করার আপ্রাণ চেষ্টা। মাঝে মধ্যেই ব্যাগ খুলে কী যেন দেখছেন গুয়াহাটির বাসিন্দা রাজীব দাস। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের একেবারে পিছনের অসংরক্ষিত কামরাতেই সপরিবারে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা রাজীব দাস, গণেশ বিশ্বাসরা এখনও নিজেদের ‘পুনর্জন্মে’র কথা বিশ্বাসই করতে পারছেন না। বুঝে উঠতে পারছেন না কীভাবে দুর্ঘটনা এড়ালেন তাঁরা।
দুর্ঘটনার ২০ ঘণ্টা পর হাওড়া স্টেশনে এসে যেন সম্বিত ফিরে পেলেন। রাজীবের কথায়, “রাখে হরি তো মারে কে?’’ বারবার সেই হরিকেই স্মরণ করতে ব্যাগে রাখা নারায়ণের ফটোতেই মাথা ঠেকিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন তিনি। রাজীব জানিয়েছে, ট্রেনটির একেবারে শেষ অসংরক্ষিত কামরার পিছনেই ছিলেন তারা। ঠিক আগের অসংরক্ষিত কামরার উপর আছড়ে পড়েছিল দুরন্ত গতির করমণ্ডলের ছিটকে পড়া বগিগুলি। শেষের কামরাটি মাঝামাঝি অংশ থেকে সামনের দিকের অংশটি দুমড়ে মুচড়ে গেলেও পিছনের দিকে থাকা রাজীব ও তাঁর সতীর্থরা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। তাঁর দাবি, জানলা ভেঙে তাদের বের করার সময় মনে হয়েছিল কামরাতে কেউ আর বেঁচে নেই। সবই যেন রক্ত মাংসের দলা। একটু আগে যে শরীরে প্রাণ ছিল এখন তা নিস্তেজ। হাওড়া স্টেশনে এসে বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার শিউরে উঠছিলেন তিনি।
এস-থ্রির যাত্রী পূরবী সাহা ভুবনেশ্বর থেকে ফিরছিলেন। সঙ্গে মেয়ে-জামাই ও পাঁচ মাসের নাতি। সেই কামরাটি প্রচণ্ড ক্ষতির মুখে না পড়লেও প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে অল্পবিস্তর আঘাত পেয়েছেন। পূরবীদেবীর কথায়, প্রচণ্ড ঝাঁকুনির পর পাশের গাড়িটিতে আগুনের ঝলক দেখে চমকে উঠি। মনে হচ্ছিল শেষ হতে চলেছি। কিন্তু বেঁচে যাই বাবা লোকানাথের কৃপায়।
এত বড় দুর্ঘটনার পর রেলের তৎপরতা ছিল না বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদেরই। তবে স্থানীয়দের সহযোগিতায় করমণ্ডলের আহতরা অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছেন বলে জানান যাত্রীদের অনেকেই। এস থ্রি কামরায় চেন্নাই যাচ্ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের রাজেশ শেখ সহ ন’জন পরিযায়ী শ্রমিকের দল। দুর্ঘটনার পর সর্বস্ব খোয়া গেলেও স্থানীয় অটো চালকারাই তাদের বিনা ভাড়ায় নিয়ে আসে বালাসোর স্টেশনে। তারপর ডাউনের দুর্ঘটনাগ্রস্ত হামসফর ধরে ফিরে আসেন হাওড়াতেই। হাওড়া স্টেশনে তদারকিতে আসেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, জেলা শাসক, পুলিশ কমিশনার, এসডিও, এসআরপি ও রেলের আধিকারিকরা। আহতদের প্রাথমিকভাবে ফল, দুধ, জল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় রাজ্যের তরফ থেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.