অভিরূপ দাস: ঘন ঘন মূর্ছা যেত বালক। গ্রামের লোক ভেবেছিল ভূতে ভর করে। মুখে মুখে তা রটে গিয়েছিল রামপুরহাটে বছর এগারোর অপূর্বদের (নাম পরিবর্তিত) গ্রামে। বন্ধুরা বন্ধ করেছিল মেলামেশা। পাড়া পড়শি এড়িয়ে চলতেন। সে কুসংস্কার কাটাল ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। হাসপাতালে শাপমুক্তি হল ১১ বছরের বালকের।
অপূর্বর মা-বাবা জানিয়েছে, প্রথমটায় আমরা ভেবেছিলাম বোধহয় মৃগী রোগ! খেলতে খেলতেও অজ্ঞান হয়ে যেত। গ্রামের অনেকে বলে ভূতে ভর করে। সন্দেহ হওয়ায় ওঝার কাছে নিয়ে যাই। কিন্তু লাভের লাভ হয়নি কিছুই। আসলে ভূত যে লুকিয়ে শিশুর হৃদয়ে!
ওই গ্রামেরই এক ব্যক্তি কার্ডিওলজিস্ট ডা. সৌম্যকান্তি দত্তর কাছে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করেছিল। তিনিই মুশকিল আসান হয়ে এগিয়ে আসেন। চিকিৎসকের কথায়,”সন্দেহ হওয়াতে ওই ব্যক্তিই প্রথম আমায় বলেন, গ্রামের একটি শিশু মাঝে মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যায়। সবাই ভাবছে ভূতে ধরছে। আমার মনে হয় অন্য কিছু!” শিশুটিকে নিয়ে আসতে বলেন চিকিৎসক। দেখা যায় দিব্যি হাসিখুশি। “অজ্ঞান হওয়ার সময় শরীরের প্যারামিটার কেমন থাকে? তা জানার প্রয়োজন ছিল। ওর বাড়ির লোকের কাছে একটা পালস অক্সিমিটার দিই। বলি অজ্ঞান হওয়ার সময় ওর হার্টরেট কেমন থাকে মেপে জানাবেন।” মিলে যায় সন্দেহ।
কিছুদিন পর বাড়ির লোক এসে জানায়, অজ্ঞান হওয়ার সময় অপূর্বর হার্টরেট মাত্র ৩০! শোনামাত্র শিশুটির ইসিজি করানো হয়। এরপর হাসপাতালে কড়া পর্যবেক্ষণে রেখে দেখা যায় ভূতের ভর আদতে হার্টের অসুখ। চিকিৎসা পরিভাষায় যা, ‘ইন্টারমিটেন্ট কমপ্লিট হার্ট ব্লক’। কি হয় এতে?
আমাদের হৃদয়ের চারটি প্রকোষ্ঠ। দু’টি অলিন্দ দু’টি নিলয়। অলিন্দ দু’টি রক্ত গ্রহণ করে এবং নিলয় দু’টি রক্ত পাম্প করে। ডান অলিন্দ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড রক্ত গ্রহণ করে এবং ডান নিলয়ে পাঠায়। ডান নিলয় সেই রক্ত ফুসফুসে পাঠায় অক্সিজেন গ্রহণের জন্য। এরপর, বাম অলিন্দ ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত গ্রহণ করে এবং বাম নিলয়ে পাঠায়। বাম নিলয় সেই রক্ত সারা শরীরে পাম্প করে। অলিন্দ নিলয়ের মধ্যে এই আর্ন্তসংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল শিশুটির।
চিকিৎসকদের কথায়, “এটা একধরণের আকস্মিক হৃদরোগ (সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট)। শিশুটির বয়স কম বলে বড়সড় কিছু হয়নি।” শিশুদের হার্টে সমস্যা বড় একটা দেখা যায় না। অনেকের ক্ষেত্রে তা জন্মগত। কারও শুরু হয় কোনও গুরুতর ভাইরাল অসুখের পড়ে। দেশে প্রবীণদের পেসমেকার সহজে মিললেও শিশুদের পেসমেকার এখনও সুলভ নয়। চিকিৎসকের কথায়, “শিশুদের বুকের খাচার আকারে পেসমেকার পাওয়া যায় না। বাচ্চার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আস্তে আস্তে বাড়বে সেইমতো আমরা পেসমেকারটা মডিফাই করেছি। যে পেসমেকারটা বসানো হয়েছে তার জীবনকাল ১৫ বছর।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.