নিরুফা খাতুন: বয়স তখন ১১ বছর। সেই ছোটবেলা থেকেই পরিবেশের সঙ্গে তাঁর অটুট সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ৬৭ বছরে এসেও নিরলসভাবে পরিবেশ রক্ষার কাজ করে চলছেন কলকাতার ‘ট্রিম্যান’ রমেশ চন্দ্রন। নিজের বাড়িতে গাছের চারা তৈরি করে শহরে বিলি করে চলছেন তিনি। অবহেলায় থাকা গাছেদের অভিভাবকও হয়ে উঠেছেন তিনি। দক্ষিণ ভারতের রমেশ। জন্মসূত্রে মালয়ালি। বর্তমানে কালিকাপুরে থাকেন। বছরের পর বছর ধরে এই কলকাতায় নীরবে তিনি সবুজ বিপ্লব চালিয়ে যাচ্ছেন।
২৫ বছর আগে সপরিবার কালিকাপুরে এসে ওঠেন তিনি। বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকে আম, কাঁঠাল-সহ বিভিন্ন ফলের বীজ সংগ্রহ করতেন। সেই বীজ দিয়ে বাড়িতে চারাগাছ তৈরি করতেন। সেই চারাগাছ এলাকায় রোপণ করতেন। ধীরে ধীরে তাঁর কাজের পরিধি বাড়তে থাকে। ফলের পাশাপাশি, ফুলের চারা তৈরি করেন। এছাড়া নিম, খেঁজুর, তুলসী-সহ এরিকা পামের মতো ঘর সাজানো গাছের চারাও তৈরি হচ্ছে তাঁর বাড়িতে। এই চারাগাছগুলি নিয়ে স্কুলে স্কুলে ঘুরে বেড়ান। স্কুলের ফাঁকা জায়গায় সেগুলি রোপণ করা হয়। শহরে ফাঁকা জায়গা পেলে বৃক্ষরোপণ করেন ট্রিম্যান। রমেশবাবু জানান, প্রথমদিকে নিজেই চারাগাছ নিয়ে শহরে ঘুরতাম। এখন আগের মতো ঘুরতে হয় না। এখন অনেকেই এই কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানেন। তাঁরা নিজেরাই এসে চারাগাছ নিয়ে যান।
কলকাতার পাশাপাশি নিউটাউন থেকেও বহু মানুষ চারাগাছ নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য কোনও টাকা নেওয়া হয় না। শিশুদেরও পরিবেশ রক্ষার পাঠ দিয়ে চলছেন প্রৌঢ়। কীভাবে বীজ থেকে চারাগাছ তৈরি করতে হয় শিশুদের তা শেখানো হচ্ছে। স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা প্রথম থেকে ট্রিম্যানের পাশে সব সময় ছিলেন। এখন তাঁর খুদে নাতিরা এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যোগ হয়েছে। তাঁরাও দাদুর সঙ্গে চারাগাছ তৈরি করছেন। তাঁর কথায়, পরিবেশকে বাঁচাতে হলে ছোটদের এই কাজে যুক্ত করা হবে। ছোট থেকে পরিবেশ নিয়ে সচেতন থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচানো যাবে।
বৃক্ষরোপণ করার সঙ্গে অনাথ, অবহেলিত গাছেদের জনকও তিনি। রাস্তায় কোথাও অবহেলায় পড়ে থাকা গাছ দেখলে তাকে দত্তক নিয়ে থাকেন ‘ট্রিম্যান’। তাকে জল, সার দিয়ে পরিচর্চা করে থাকেন। এভাবে শহরে একাধিক মৃতপ্রায় গাছকে তিনি বাঁচিয়ে তুলেছেন। এখন তার লক্ষ্য কলকাতায় তুলসী বাগান গড়ে তোলা। তার জন্য সাদার্ন অ্যাভিনিউতে একটি জায়গা চিহ্নিত করেছেন। অনুমতি পেলে তুলসি রোপণের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। সবুজায়ন করার পাশাপাশি প্লাস্টিকমুক্ত শহর গড়ে তোলাও এখন ট্রিম্যানের লক্ষ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.