ফাইল ছবি
স্টাফ রিপোর্টার: বকেয়া ডিএ মেটানো নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশের পরিবর্তন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, তার কয়েকটি ক্ষেত্রে সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েই আবেদন করা হয়েছে। তবে একই সঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দিষ্ট করে দেওয়া সময়ের মধ্যেই বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘভাতা দেওয়ার বিষয়েও তোড়জোড় শুরু করেছে নবান্ন। প্রশাসনিক মহলের খবর, অন্তর্বর্তীকালীন যে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে, তার কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘মডিফিকেশন’ বা পরিবর্তন চাওয়া যেতেই পারে। তার সুযোগও রয়েছে আইনে। সেই অনুযায়ীই বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হতে চায় রাজ্য। ইতিমধ্যেই সেই আবেদন সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ে গিয়েছে। তবে এখন আদালতে গ্রীষ্মাবকাশ চলায় শুনানি হচ্ছে না। ছুটি শেষ হলে সুপ্রিম কোর্টে এই আবেদন ‘লিস্ট’ হবে। পরবর্তী কী নির্দেশ দেয় আদালত, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজ্য সরকার।
সুপ্রিম কোর্ট গত ১৬ মে নির্দেশ দিয়েছিল, ৪ সপ্তাহের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বকেয়া ২৫ শতাংশ ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার। সেই ‘ইনটেরিম অর্ডার’ খতিয়ে দেখার পর রাজ্য সরকার মনে করছে, তার কয়েকটি ধারার ক্ষেত্রে আরও বিশদ ব্যাখ্যা হলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন করায় অনেকটাই সুবিধা হবে। এর পরই অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে ‘মডিফিকেশন’ চেয়ে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার মনে করছে, মূল মামলা যেমন চলছে, তেমনই চলবে। অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশও ফের পর্যালোচনার জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে না। অর্থাৎ, রিভিউ পিটিশন দাখিল না করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে শুধু এই নির্দেশের কিছু পরিবর্তন বা মডিফিকেশন চেয়ে আবেদন করা যেতেই পারে। সেই হিসাবেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। কোন ভিত্তিতে, কতটা বকেয়ার উপর, নির্দিষ্ট কতদিনের বকেয়ার উপর এই ২৫ শতাংশের হিসাব হবে, এমন একাধিক প্রশ্নের উত্তর পেতেই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে মডিফিকেশন চাইছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কেউই মন্তব্য করতে রাজি না হলেও সূত্রের খবর, আইনজীবীদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও আইনের চুলচেরা বিশ্লেষণের পরই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে।
আইনজীবী মহলের একাংশের মত, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বা নির্দেশ, বিশেষ করে ডিএ প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আদালত চাইলে সংশোধন বা বাতিল করতেই পারে। তবে তা একাধিক বিষয়ের উপর নির্ভর করছে। একই সঙ্গে তাঁরা এও জানাচ্ছেন, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বা নির্দেশ সাধারণত অস্থায়ী এবং মূল মামলাটি বিচারাধীন থাকাকালীন একটি তাৎক্ষণিক বিষয় বা চাহিদা পূরণের জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে বলেই মনে করছে নবান্ন। তবে যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট গ্রীষ্মাবকাশের পর জুলাই মাসে খুলবে, তাই যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা পালন করা হবে বলে খবর। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ২৫ শতাংশ হিসাব করে কীভাবে বকেয়া ডিএ মেটানো হবে, তা নিয়েও প্রস্তুতি চলছে।
নবান্ন সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়সীমা শেষ হচ্ছে ১৫ জুন এবং বকেয়া ডিএ দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় ছয় সপ্তাহ শেষ হবে ৩০ জুন। তাই সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের আবেদন নিয়ে শুনানি কবে হবে, তা এখনই চূড়ান্ত না হওয়ায় আদালতের নির্দেশমতো ডিএ দেওয়ার প্রস্তুতি চালাচ্ছে নবান্ন। তবে ২৫ শতাংশের হিসাব রাজ্য সরকার আপাতত একটি নির্দিষ্ট সূত্র মেনে করছে বলেই খবর। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি কর্মী, প্রায় চার লক্ষের কাছাকাছি স্কুল শিক্ষক ছাড়াও পঞ্চায়েত, পুরসভা, পুরনিগম, সরকার পোষিত স্বশাসিত সংস্থার প্রায় এক লক্ষ কর্মী ধরলে প্রায় আট লক্ষেরও বেশি বকেয়া মহার্ঘভাতা পাবেন। এর সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সংখ্যা ধরলে সব মিলিয়ে সংখ্যা হবে প্রায় ১০ লক্ষ। এই বকেয়ার ক্ষেত্রে ‘রোপা রুল’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোপা ২০০৯ আসলে ২০০৮-এর ১ এপ্রিল থেকে লাগু হয়েছিল ২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮-এর ১ আগস্ট থেকে ২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যাঁরা বেতন পেয়েছেন বা এখনও কাজ করছেন তাঁরাই এই বকেয়া ডিএ পাবেন। সব মিলিয়ে ২০০৮ সালের নির্দিষ্ট সময় থেকে ৯ মাস এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১৪১ মাসের বকেয়া পাবেন (যখন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, সেই মাস থেকে হিসাব করে পাবেন)। তবে ২০১৯-এর পর পর যাঁরা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা যেহেতু রোপা ২০০৯-এর আওতায় চাকরি শুরু করেননি, তাই এই বকেয়া তাঁরা পাবেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.