ক্যানসার রোগীকে সুস্থ করে তুলতে রেডিওথেরাপির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমানে যা আরও উন্নতমানের হয়েছে। মারণ রোগকে বধ করছে আরও দ্রুত। আশার কথা শোনালেন অঙ্কোলজিস্ট ডা. কাকলি চৌধুরি।
ক্যানসারের মতো মারণ রোগকে বাগে আনতে হাতিয়ার রেডিওথেরাপি। এই নির্দিষ্ট চিকিৎসা আসলে ঠিক কীভাবে কাজ করে তা নিয়েই কথা বলা যাক। তা হলে বুঝতে সুবিধা হবে ক্যানসার নির্মূলে এর ভূমিকা। রেডিয়েশন (বিকিরণ রশ্মি, এক্স-রে)-এর সাহায্যে যখন ক্যানসার রোগের চিকিৎসা করা হয়, তাকে রেডিওথেরাপি বলা হয়। এক্স-রে তথা রঞ্জন রশ্মির আবিষ্কার হয় ১৮৯৫ সালে। তবে ক্যানসার নির্মূলে এই রশ্মির ব্যবহার শুরু হয় ১৮৯৬ সালে। পরবর্তীকালে তেজস্ক্রিয় পদার্থের আবিষ্কার এবং উন্নত যন্ত্রের উদ্ভাবন হওয়ায় ক্যানসার চিকিৎসার এক নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়। আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে যে চিকিৎসা পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল আজ তা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অত্যাধুনিক ক্যানসার চিকিৎসার এক অপরিহার্য অঙ্গ রূপে স্বীকৃত।
এখন আরও আধুনিক
বর্তমানে যে রেডিওথেরাপি মেশিন চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয় তা স্বয়ংক্রিয়। এই মেশিনের সাহায্যে রেডিয়েশন দেওয়া হলে রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা বেশি হয় এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম। এর কারণ ‘রে’ কেবলমাত্র সেই সব জায়গায় দেওয়া হয় যেখানে ক্যানসার আছে (Target area) এবং পার্শ্ববর্তী সুস্থ কোষে বা অঙ্গে এই প্রভাব পড়ে না। রেডিয়েশনের সময় ইমেজিং (CT scan, X-ray, Infra-rays)-এর মাধ্যমে আরও টার্গেটেড ভাবে হাইডোজ রেডিয়েশন দেওয়া হয় এবং অন্যান্য অঙ্গকে যথাসম্ভব বাঁচিয়ে দেওয়া হয়। আগে যে ক্ষেত্রে সার্জারি করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না, সেই সব ক্ষেত্রেও এখন কেবল রেডিয়েশনের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব হচ্ছে।
কোন কোন ক্যানসারে আশা দেখাচ্ছে?
ক্যানসারে আক্রান্তের পরিসংখ্যানের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে উপরে। এই রোগের চিকিৎসায় রেডিয়েশন যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে স্তন ক্যানসারে স্তন সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়ার বদলে কেবল টিউমার বাদ দেওয়া হয় (Breast) এবং তারপর রেডিয়েশন দেওয়া হয়। অঙ্গকে বাঁচিয়ে রেখেই এখন স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে। গলা ও মুখমণ্ডলের ক্যানসারের সংখ্যা আমাদের দেশে অনেক বেশি। বহু ক্ষেত্রেই এই ক্যানসারের সার্জারির ফলে মুখ বিকৃত হয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয়। যেমন স্বরযন্ত্র বাদ দিলে কথা বলা সম্ভব হয় না। অন্যান্য সার্জারির পরে খাবার খেতেও সমস্যা হয়। এ সব ক্ষেত্রে রেডিয়েশন (কেমোথেরাপি) দ্বারা চিকিৎসা করলে রোগ নিরাময় হয় অথচ কোন অঙ্গহানি বা অঙ্গ বিকৃতিও ঘটে না। ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও রেডিয়েশনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই পদ্ধতিতে নিরাময়ের হার অনেক বেশি। সার্ভিক্স বা জরায়ুর নিম্নভাগের ক্যানসারে চিকিৎসার অন্যতম পদ্ধতি রেডিওথেরাপি। কেবলমাত্র এই চিকিৎসার মাধ্যমে (সার্জারি না করে) সম্পূর্ণ রোগ নিরাময় সম্ভব। এছাড়া জরায়ু, মলদ্বার, ফুসফুস ইত্যাদি বহু জায়গায় ক্যানসারে রেডিয়েশন কার্যকর। রোগ যত দ্রুত চিহ্নিত করা যায়, রেডিয়েশনের ফল তত ভালো হয়। যেমন প্রাথমিক পর্যায়ের ফুসফুস ক্যানসারে কেবলমাত্র রেডিয়েশনে সেরে যায়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার কম
রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক কম। সার্জারি, কেমোথেরাপি ইত্যাদির তুলনায় এই চিকিৎসা অনেকটাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। বয়স্ক মানুষের (৮০ বছর বা তার বেশি) ক্ষেত্রেও এই চিকিৎসা করা সম্ভব। রেডিওথেরাপির এক বিশেষ পদ্ধতি হল, স্টেরিওট্যাকটিক (Stereotactic) রেডিওথেরাপি। এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যানসার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব। AI- এর ব্যবহারের ফলে রেডিওথেরাপি চিকিৎসার প্রভূত উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে।
ক্যানসার যদি শেষ পর্যায়ে ধরা পড়ে সে ক্ষেত্রেও রেডিওথেরাপির সাহায্যে রোগীর কষ্ট অনেকাংশে কমানো যায় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্ভব হয়। একে প্যালিয়েটিভ রেডিয়েশন বলা হয়। রেডিওথেরাপি বর্তমানে স্বল্প পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত এবং অত্যন্ত কার্যকরী একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা ক্যানসার নিরাময়ের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.