সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বর্তেছে কেবল নারীর উপর। পুরুষ তার পিতৃতন্ত্রের অধিকার রক্ষায় কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছে এই পথ। কখনও বিষম অবহেলায়, কখনও বা নিজ নিরাপত্তা রক্ষায়। অথচ নারীকেই বেছে নেওয়া হয়েছে গর্ভ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র হোত্রী হিসেবে। কারণ আর কিছুই নয়! ভুগতে হলে নারীই ভোগ করুক সমস্ত কুফল, পুরুষ শুধুমাত্র সম্ভোগেই দায় সারে। ফলাফল নিয়ে তারা কবেই বা মাথা ঘামিয়েছে?
সম্প্রতি বিশিষ্ট নিউট্রিশনিস্ট রাশি চৌধুরী তাঁর ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বিষয়টি নিয়ে পুরুষদের বিদ্রুপ দেগেছেন। তাঁর মতে, অনাকাঙ্ক্ষিত জন্মনিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে পুরুষ নিজের সম্ভোগের আরামকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। বক্রোক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, পুরুষদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ (Male Birth Control Pill) এখনও পরীক্ষাধীন যেখানে কিনা মহিলারা কয়েক যুগ আগে থেকেই বিভিন্ন ঝুঁকি সত্ত্বেও দায়িত্বের সঙ্গে ওষুধ ব্যবহার করে আসছেন। পুরুষদের এই প্রাচীনপন্থী মানসিকতাকে তিনি হেয় করেছেন।
তিনি জানান, ১৯৬০-এর দশকেই মহিলাদের জন্য বিভিন্ন হরমোনাল গর্ভনিরোধক বড়ি বাজারে আসতে শুরু করে। ফলে, বিভিন্ন গর্ভনিরোধক (Birth Control) ব্যবস্থা অচিরেই মহিলাদের হাতের মুঠোয় চলে আসে। কিন্তু এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে জটিল শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে শুরু করেন তারা।
নারীর গর্ভনিরোধক ওষুধ ব্যবহারের কুফল
(১) গর্ভনিরোধক বড়িগুলিতে থাকা হরমোন, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি এমনকী মৃত্যুও হতে পারে।
(২) দীর্ঘকাল ধরে গর্ভনিরোধক ব্যবহার করলে স্তন ক্যানসার এবং জরায়ুমুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
(৩) হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মানসিক অস্থিরতা, উদ্বেগ ও মেজাজের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
(৪) এছাড়াও হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন, ওজন বৃদ্ধির মতো শারীরিক লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়।
View this post on Instagram
পুরুষদের ক্ষেত্রে মূলত কন্ডোম এবং ভ্যাসেকটমির মতো স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় টেস্টিসের শুক্রাণু উৎপাদন কমিয়ে পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন কৌশল তৈরির চেষ্টা চলছে। আজকাল পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন পুষ্টিবিদ রাশি চৌধুরী।
পুরুষদের নন-হরমোনাল মৌখিক জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ YCT-529 নিয়ে কাজ চলছে। ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা ও কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় YourChoice Therapeutics নামক একটি ওষুধ কোম্পানি এই ওষুধ তৈরির দায়িত্ব নিয়েছেন। ইতিমধ্যে মানব দেহে ‘ফেজ ১’ ক্লিনিকাল ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ওষুধের নিরাপত্তা ও সহ্য ক্ষমতা যাচাই করার জন্য এই পরীক্ষা চালোনো হয়। গবেষণায় কোনও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডে ‘ফেজ ২’ ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
YCT-529 এর একটি বড় সুবিধা হল এটি হরমোন মুক্ত। বর্তমানে মহিলাদের ব্যবহৃত বেশিরভাগ গর্ভনিরোধক বড়ি হরমোনাল হওয়ায় তা বিভিন্ন জটিল শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যদি YCT-529 মানবদেহে নিরাপদ এবং কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে এটি পুরুষদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। এর ফলে পরিবার পরিকল্পনার দায়িত্ব পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে নেওয়া সম্ভব হবে। পুরুষরাও তাদের প্রজনন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে আশা করা যায়। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন নিউট্রিশনিস্ট রাশি চৌধুরী। পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ বাজারে আসতে এত দেরি হল কেন? এ কি নিতান্তই অনীহা নয়? প্রাচীনপন্থী পুরুষেরা ভবিষ্যতে সত্যিই কি এই ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ ব্যবহার করতে চাইবেন? উত্তর সময় বলবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.