হৃদয়ের গোলকধাঁধায় চলে নানা খেলা। হৃদস্পন্দন তার শক্তি। এই গতি যদি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠে তবে প্রাণসংশয়ও দেখা দিতে পারে। এখন অনেক উন্নত পদ্ধতিতে সুস্থ হয়ে ওঠা যায়, কষ্টও কম। কখন পেসমেকার, কখন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন দরকার জানালেন ইলেক্ট্রোফিজিওলজিস্ট ডা. দেবব্রত বেরা।
হার্ট শরীরের এমন একটা অঙ্গ যার অলিগলি দিয়ে প্রাণভ্রমরার চলাচল। একটু কিছু হলেই প্রাণপাত হওয়ার জোগাড়। তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন। এ ক্ষেত্রে খুব দ্রুত, ধীরে বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (Irregular Heartbeat) সমস্যার মূলে।
কোন লক্ষণে সতর্ক হবেন?
(১) ঘন ঘন বুক ধড়ফড় বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া।
(২) ব্ল্যাক আউট বা চোখে অন্ধকার দেখা।
(৩) কোনও চিকিৎসক যদি ইপি স্টাডি বা ইলেক্ট্রোফিজিওলজিস্টের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন, বুঝতে হবে হৃদস্পন্দনজনিত সমস্যা।
রোগ ধরা পড়ে কীভাবে?
ইসিজি, হল্টার এবং ইলেক্ট্রোফিজিওলজিক্যাল স্টাডির (ই.পি স্টাডি) মাধ্যমে হার্টের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম ঠিক রয়েছে কি না তার মূল্যায়ন করা হয়।
ই.পি স্টাডির পদ্ধতি
এটা একটা ইনভেসিভ প্রক্রিয়া। অনেকটা অ্যাঞ্জিওগ্রাফির মতো। কুঁচকির পাশ দিয়ে একটি চ্যানেলের মাধ্যমে সূক্ষ্ম তার হার্টে পৌঁছে, হার্টের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম পরীক্ষা করে দেখবে কোথাও কোনও অস্বাভাবিকতা আছে কি না। অর্থাৎ হার্টে কোথাও কোনও অতিরিক্ত সার্কিট আছে কি না বা কোনও জায়গায় অস্বাভাবিক ফায়ারিং হচ্ছে কি না-যার থেকে এই অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের সূত্রপাত। এই পদ্ধতিতে কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন নেই। খুব ছোট ফুটো করে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সমাধান রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন যখন আমরা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের (Irregular Heartbeat) কারণ খুঁজে পাই, তখন যে স্থান থেকে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের সূত্রপাত সেটাকে লেজারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। একেই বলে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন বা আরএফএ।
কাদের পেসমেকার দরকার?
যাঁদের হৃদস্পন্দন মাঝেমাঝে বেড়ে যায়, তাঁদের জন্য রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন (আরএফএ), আর যাঁদের হৃদস্পন্দন হঠাৎ করে কমে ২০ বা ৩০ হয়ে যায় (ব্র্যাডিকার্ডিয়া), চোখে অন্ধকার দেখেন, জ্ঞান হারান, তাঁদের ক্ষেত্রে ওষুধে কাজ না হলে পেসমেকার ইমপ্ল্যান্টের কথা ভাবা হয়।
পেসমেকারের ধরন জেনে ব্যবহার
সাধারণ পেসমেকার হৃদস্পন্দন কমতে দেয় না। কমে যাওয়া হৃদস্পন্দন বা ব্র্যাডিকার্ডিয়ার মোকাবিলায় পেসমেকার বসানো হয়। ট্যাকিকার্ডিয়াতে পেসমেকারের কোনও ভূমিকা নেই। এর জন্য অন্য একধরনের পেসমেকার/ডিভাইস ইমপ্ল্যান্ট করা হয়, যাকে বলা হয় ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিওভারটার ডিফিব্রিলেটর বা আইসিডি।
পেসমেকার ইমপ্ল্যান্ট কষ্টকর?
পেসমেকার বসানোর জন্য ১ ইঞ্চি মতো কাটতে হয়। সেখানে চামড়ার নিচে পেসমেকার রেখে তারগুলো হার্টের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। বলা যায় এটি একটি মাইক্রোসার্জারি। এ জন্য রোগীকে অজ্ঞান করতে লাগে না। লোকাল অ্যানেস্থেশিয়ার মাধ্যমে এই সার্জারি সম্পন্ন হয়।
কোন বয়সে কী চিকিৎসা?
(১) ইপি স্টাডি এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন সব বয়সেই দরকার পড়তে পারে। অনেক সময় শর্ট সার্কিটগুলো জন্মগত হয়। সাধারণত রোগীর বয়স তিন বছরের বেশি হলে বা রোগীর ওজন ২০ কেজির উপরে হলে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন করা যায়। আর বেশি বয়সে তো কোনও সমস্যা নেই।
(২) পেসমেকার সাধারণত একটু বয়সকালেই বসানো হয়। এ ছাড়া কিছু কিছু জন্মগত হার্টের অসুখের কারণে হৃদস্পন্দন কম হলে, কার্ডিওথোরাসিক সার্জন সার্জারির মাধ্যমে পেসমেকার প্রতিস্থাপন করেন।
পেসমেকার বসানোর পর লাইফস্টাইল
(১) প্রথম ৫ থেকে ৭ দিন বাঁ হাত বেশি
নাড়াচাড়া করা চলবে না।
(২) ৭ দিন পর থেকে স্বাভাবিক
জীবনযাপন করা যাবে। তেমন কোনও বিধিনিষেধ নেই।
(৩) শুধুমাত্র এমআরআই করতে গেলে আগে থেকে জানাতে হবে পেসমেকারের কথা।
পরামর্শ- 8420462109
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.