সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গালভরা নাম, দাম আর রূপ। সেইসঙ্গে অবশ্যই চরিত্র অনুযায়ী প্রভুভক্তি, ভালোবাসা। যাঁরা চারপেয়ে প্রেমী, তাঁদের বেশিরভাগই পোষ্য হিসেবে চান নামীদামি ব্রিডের কুকুরদের। কিন্তু জানেন কি, আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত আর ভালোবাসার হয়ে উঠতে পারে অভিজাত শ্রেণির ল্যাব, গোল্ডেন রিট্রিভার কিংবা জার্মান শেফার্ডের মতো কোনও সারমেয় নয়, বরং ‘ইন্ডিয়ান পারিয়া’রা। ভাবছেন তারা আবার কারা? একেবারে সহজ কথায় বলতে গেলে, আপনার বাড়ির আশপাশে সর্বদা ঘুরে বেড়ানো লালু, কালু, ভুলুরা অর্থাৎ রাস্তার কুকুরের দল। ভালোবাসার কাঙাল ওরা! মানুষের একটু ভালোবাসা পেলে ওরা ফিরিয়ে দেয় শতগুণ। এর নেপথ্যে অবশ্য বেশ কিছু কারণও খুঁজে বের করেছেন গবেষকরা।
আসলে শত অবহেলায় রাস্তায় জন্ম তো। তাই মায়ের পেট থেকে বেরিয়েই রাস্তার কুকুরছানারা বুঝে যায়, ওদের বাঁচতে হবে নিজের জোরে। জীবনে যা কিছু প্রতিবন্ধকতা, তার সবটাই কাটিয়ে উঠতে হবে একা। ছোটবেলায় হয়ত পাশে থাকে মা। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই মা-ও চায়, ছানারা দ্রুত স্বাবলম্বী হয়ে উঠুক। প্রকৃতির এই রুটিনে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য রাস্তার সারমেয়দের যত সক্রিয়তা। সে আপনার পিছু পিছু ছোটা হোক কিংবা আপনার দরজায় এসে ল্যাজ নাড়া অথবা খাবারের জন্য ‘বন্ধু’দের সঙ্গে মারামারি, সবই সেই অস্তিত্বের সংগ্রাম। আর সেটাই তাদের এত শক্তপোক্ত করে গড়ে তোলে। তীব্র রোদ, ভরা বর্ষা অথবা প্রবল ঠান্ডা থেকে ঠিক নিজেদের বাঁচিয়ে নেওয়ার কৌশল আয়ত্ব করে নেয় তারা। এমনটি বোধহয় নামীদামি কুকুরদের ক্ষেত্রে হয় না। কারণ, তারা প্রভুভক্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রভুর উপর প্রভূত নির্ভরশীল।
সকালে বড়জোর একটা বিস্কুট আর রাতে টুকরো রুটি। গ্রীষ্মে একবাটি জল। ব্যস, এতেই আপনার বশ্যতা স্বীকার করে নেবে রাস্তার কুকুররা। খাবারের জন্য দিনরাত কত না পরিশ্রম করতে হয়! যদি এটুকুই কেউ ভালোবেসে দেয়, তাহলে তাদের আর পায় কে? আহ্লাদে আটখানা হয়ে আপনার পায়ে পায়েই ঘুরবে সারাদিন। আপনাকে একবেলা না দেখলে মুখ ভার হয়ে যায় ওদেরও। তারপরই দেখতে পেলে চোখ দুটো আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। চারপেয়েদের মনস্তত্ত্ব বুঝতে না পারলেও ওটুকু আবেগ ঠিক আপনার মন গলিয়ে দেবে। তাই তো বলা হয়, ওদের জন্য খরচ কম, প্রাপ্তি ঢের।
আপনি রোজ খেতে দেন বলে লালু, কালুরা যে স্রেফ দিনটা হইহল্লা করে কাটিয়ে দেয়, তা কিন্তু মোটেই নয়। হয়ত খাবারের জন্য লড়াইটা করে না। কিন্তু দিনভর ওদের অনেক কাজ থাকে। তার প্রথম কাজ, গোটা পাড়ায় নজরদারি চালানো। বেপাড়ার কাউকে ঢুকতে দেখলেই ঘেউঘেউ ডাকে একেবারে পুলিশের মতো জেরা! নবাগত যে সন্দেহজনক নয়, তা বোঝার পর তবেই ছাড়পত্র মেলে। তখন ওই ব্যক্তি গলি দিয়ে নিশ্চিন্তে হেঁটে যেতে পারেন। পাড়ার বাচ্চাদের সঙ্গেও তাদের বিস্তর ভাব! ছোটরা প্রাথমিকভাবে কুকুরদের ভয় পেলেও পরে ঠিক বন্ধুত্ব হয়ে যায়। দেখা যায়, একসঙ্গে তারা খেলা করছে। এ কী কম? মোটেই নয়। রাতদুপুরে পাড়া পাহারা দেওয়ার কাজও করে ‘ইন্ডিয়ান পারিয়া’রা। চিলচিৎকারে চোর-ডাকাত ঘেঁষার উপায় থাকে না।
তাই তো সমাজকর্মী থেকে শুরু করে পশুপ্রেমীরা প্রায়শয়ই আবেদন করেন, পাড়ার কুকুর, বেড়ালদের মোটেও হেলাফেলা নয়। বরং ওরাই আপনার অসময়ের বন্ধু। জার্মান শেফার্ড, ল্যাব বা গোল্ডেন রিট্রিভাররাও কি এতটাই আপনার দেখভাল করেন?
কুকুরপ্রেমী বা মালিকরা হয়ত জোর দিয়ে ‘হ্যাঁ’ বলবেন। তা বলুন। কিন্তু একবার ‘ইন্ডিয়ান পারিয়া’কে কাছে টেনে দেখুন। ভালোবাসার মূল্য বুঝতে পারবেন মর্মে মর্মে। সেই মহাভারতের সময় থেকে মানুষের অনুগামী কুকুর। যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে সেই যে মহাপ্রস্থানের পথে হেঁটেছিল, মহাকাব্যিক সেই চরিত্র যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে নিজেদের মধ্যে আত্তীকরণ করে ফেলেছে তারা। মানুষকে ছেড়ে যাওয়া তাদের পক্ষে বাস্তবিকই অসম্ভব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.