সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বছর ঘুরে আবার উমা এল ঘরে। কেবল পাড়ার মণ্ডপে হইচই অথবা সারারাত প্যান্ডেলে ঘোরাই নয়, বাঙালিমাত্রই ব্যস্ত নিজের নিজের মতো করে দেবীদর্শনে। মা দুর্গা যেন বহুরূপে ধরা দেন ভক্তহৃদয়ে। তেমনই এক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত হয়েছিল IEM 3D প্রিন্টিং ল্যাব। যার ফলস্বরূপ থ্রিডি পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে দুর্গা প্রতিমা। রংচঙে এই একচালার মূর্তিতে দেবী-সহ রয়েছেন তাঁর চার পুত্র-কন্যা। রয়েছে তাঁদের বাহনেরা, এমনকি মহিষাসুরও। এ যেন দুর্গাপুজোয় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যে চিরাচরিত প্রতিমার রূপ দেখতে পাওয়া যায়, তারই ক্ষুদ্র সংস্করণ।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই একচালার প্রতিমা আদতে জৈববিয়োজ্য। অর্থাৎ, একদিকে যেমন এর সৃষ্টিতে প্রকৃতির কোনওরকম ক্ষতি হয়নি, তেমনই এটি বিনষ্ট হলেও প্রকৃতির ভারসাম্য অক্ষুণ্ণ থাকবে। বর্তমানে বারেবারে প্রশ্ন উঠেছে পরিবেশ দূষণ নিয়ে, যার সমাধান আজও অধরা বললে ভুল হয় না। বিশেষত, দুর্গাপুজোর সমাপ্তিতে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য জলাধারগুলিতে জমা হয়, তা থেকে ক্ষতি হয় পরিবেশের। এ নিয়ে নানা আইন রয়েছে। এমনকি প্রতিমা সজ্জায় প্লাস্টিক, থার্মোকল, জরি, চুমকির ব্যবহার একেবারে কমিয়ে ফেলা যায়, সে বিষয়েও নিয়ম জারি করা হয়েছে।
IEM 3D প্রিন্টিং ল্যাবের তৈরি এই জৈববিয়োজ্য প্রতিমাটি যে সত্যিই আলোচনার দাবি রাখে, তা বলাই বাহুল্য। প্রযুক্তির সঙ্গে ঐতিহ্য যে কি অবলীলায় সহাবস্থান করতে পারে, এ প্রতিমা তারই নজির বহন করে। সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকর্মীদের গণ্ডি পেরিয়ে, আপামর উদ্ভাবক, শিক্ষাবিদ ও সামাজিক সংস্থাগুলির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই সৃষ্টি। IEM 3D প্রিন্টিং ল্যাবের কর্মকর্তাদের মতে, এই ‘দুর্গা প্রজেক্ট’ নেহাতই -এর সাফল্যের উদ্দেশে নেওয়া প্রথম ধাপ। এর হাত ধরেই এক ছাতার তলায় আনা যাবে স্বাস্থ্যসেবা, শিল্পশৈলী, রোবটিক্স ও প্রযুক্তিগত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বহুবিধ ক্ষেত্রকে। নানা ধরনের শিল্পক্ষেত্র, যার মধ্যে অন্যতম হল ডিম্বস্ফোটন সংক্রান্ত উদ্ভাবনকে নতুনভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে এই আঞ্চলিক স্তরের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন।
PLA-এর সংস্পর্শে এসেই যে প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে স্থায়ী উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে, সে বিষয়ে সচেতন হয়েছেন, এমনটা জানান IEM 3D প্রিন্টিং ল্যাবের কর্মকর্তারা। ডাঃ চক্রবর্তীর ভাষায়, “কল্পনার সঙ্গে যদি সঠিক পরিকাঠামো ও পরিচালনাকে একত্র করা যায়, তবেই তা ব্যবহার্য বাস্তবে রূপ নেয়।” বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার মেলবন্ধন ঘটিয়ে অনন্য হয়ে ওঠে এই প্রজেক্ট। জানান দেয় যে, যেকোনও উদ্ভাবনের পিছনে মূল লক্ষ্য হিসেবে মানব অগ্রগতির পাশাপাশি থাকা উচিত পরিবেশরক্ষা ও সংস্কৃতির বাহক হয়ে ওঠার সদিচ্ছা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.