বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: পুজো মানেই হুল্লোড়, খাওয়া দাওয়া, আনন্দ, দল বেঁধে প্যান্ডেলে বসে আড্ডা, লাইন ঠেলে সারা রাত হপিং! অথচ কেউ কেউ চান নিরিবিলিতে নিছক ছুটি কাটাতে। হারিয়ে গিয়েই যেন আনন্দ খুঁজে নিতে চান তাঁরা। আপনিও কি সেই দলে? তাহলে এবার পুজোয় আপনার ঠিকানা হয়ে উঠুক জামুনি। নাম শোনেননি? অনুরাগ বসুর ‘বরফি’ মনে আছে? যে পাহাড়ে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, রণবীর কাপুরকে দেখেছিলেন, সেই পাহাড় অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। শুটিংয়ের সুবাদে ‘কুইন অব হিল’ দার্জিলিংয়ের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ হয়ে ওঠে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো জনপদ জামুনি। ঠিক যেমন, এক সময় ‘অনুসন্ধান’ ছবির শুটিংয়ের জন্য দার্জিলিংয়ের লালকুঠি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল।
পাহাড়ি নদী রঙ্গিতের কোলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সম্ভার একেবারে সাজানো। সেই গ্রামে ভিড় জমাতে চলেছেন বাঙালি পর্যটকদের একটা বড় অংশ, অন্তত সেখানকার হোমস্টের বুকিংয়ের রেকর্ড সে কথাই বলছে। দার্জিলিং শহর থেকে জামুনির দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। এক ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব! চা বাগান, জঙ্গল, খামার, নার্সারি এবং কমলালেবুর বাগানে ঘেরা নিরিবিলি গ্রাম জামুনি। গ্রামটি দার্জিলিং শহর থেকে বেশ কিছুটা নীচে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘুরে আসা যায় দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিমের পেলিং, নামচির মতো অনেক পর্যটন কেন্দ্র। জামুনি যেন সিকিমে ঢোকার ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’।
জামুনি থেকে সকালে বেরলে দুপুর দুটোর মধ্যে সিকিম থেকে ফিরে আসা যায়। জামুনির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে বিলাসিতার আয়োজনও নেহাত কম নেই। আছে একাধিক হোম স্টে। চাইলে পেয়ে যাবেন পাহাড়ের কোলে সুইমিং পুল যুক্ত হোটেলও। হোম স্টের ব্যালকনিতে যদি বসে থাকেন, তাহলে নজর টানবে রঙ্গিত নদীর উপরে সারি দিয়ে পতাকায় সাজানো সেই ঝুলন্ত লোহার সেতু! ঠিক যেখানে বসেছিলেন রণবীর কাপুর।
জামুনির একদিকে দার্জিলিং অন্যদিকে সিকিম। দুটোকে জুড়েছে ওই লোহার সেতু। পাখিদের কলতান ও পাহাড়ি রঙ্গিত নদীর জলোচ্ছ্বাসের শব্দে হারিয়ে যেতে চাইবে মন। এখানেই শেষ নয়, পাহাড়ের কোলে রয়েছে জামুনি উদ্যান। সেখানে শিবের শ্বেতপাথরের মূর্তি পর্যটকদের মুগ্ধ করে। পাবেন ঝুমচাষের মাঠ। রকমারি পাহাড়ি ফুল। ইচ্ছে হলে সহজে ঘুরে দেখা যায় বিজনবাড়ি, ঝেপি, সিংতাম বালুয়াবাসে অজয় এডওয়ার্ডের তৈরি স্কাইওয়াক। ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন অথবা উড়ানে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে ভাড়াগাড়িতে সড়কপথে চারটি রুটে জামুনিতে পৌঁছনো সম্ভব। রুটগুলো হল তিনধারিয়া-কার্শিয়াং রুট, দুধিয়া–মিরিক রুট, রোহিনী রুট ও পাঙ্খাবাড়ি রুট। এছাড়াও শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত সরকারি বাস পরিষেবা রয়েছে।
দার্জিলিং শহরে নেমে ভাড়ার ছোটগাড়িতে জামুনিতে যাতায়াত করা যায়। ওই রুটে পশ্চিম সিকিমগামী প্রচুর গাড়ি দিনভর যাতায়াত করে। জামুনিতে থাকার জায়গা বলতে হোম স্টে। কানট্রি সাইড হোমস্টের কর্ণধার ভূপাল ছেত্রী জানান, ”পর্যটকরা ওয়েবসাইটে সার্চ করে রুম বুক করছেন। মাথা পিছু এক রাতের ভাড়া ১ হাজার ৮০০ টাকা। এলাকায় চারটি হোম স্টে রয়েছে। অনেক পর্যটক গ্রামে পৌঁছে রুম বুক করে থাকেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.