Advertisement
Advertisement
Purulia

টিলা ও সবুজে ভরা বাংলার জোড়া ‘মিনি পহেলগাঁও’, যাবেন নাকি?

সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ামাত্রই জোড়া 'মিনি পহেলগাঁও'তে বাড়ছে পর্যটকের ভিড়।

Purulia's two spot is viral on social media
Published by: Sayani Sen
  • Posted:June 1, 2025 8:10 pm
  • Updated:June 1, 2025 8:14 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জঙ্গি হামলার পর পহেলগাঁওয়ের চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সৌন্দর্য যেন আরও বেশি করে ছড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই পহেলগাঁওয়ের বৈসরন ভ্যালি বা মিনি সুইজারল্যান্ডের সৌন্দর্য রয়েছে বাংলাতেও! যা এখন মুখে মুখে ‘মিনি পহেলগাঁও’। সোশাল সাইটে এমন জোড়া পহেলগাঁও ভাইরাল হতেই সেখানে পা পড়ছে পর্যটকদের। ওই দুই ল্যান্ডস্কেপে গিয়ে সৌন্দর্যে পহেলগাঁওয়ের তুলনা টানছেন তাঁরাও। আর এভাবেই সোশাল ওয়ালে ভরে গিয়েছে পুরুলিয়ার ওই জোড়া ‘মিনি পহেলগাঁও’। একটি পুরনো ঝালদার সোনাদাঁড়ি মাঠ। আরেকটি এই ভরা গ্রীষ্মে শুকিয়ে যাওয়া অযোধ্যা পাহাড়তলির বাঘমুণ্ডির টুরগা জলাধার।

ঝালদা স্টেশনের পাশ দিয়ে ওই পুর শহর থেকে প্রায় দেড় কিমি দূরে ওই পুরনো ঝালদার মাঠ। স্থানীয় ভাষায় যার নাম সোনাদাঁড়ি বা সোনাটাড় মাঠ। কথিত আছে, কোন এক সময় বালি খুঁড়ে দাঁড়ি ( পাহাড়ি ঝোরা থেকে আসা জল)তে পাওয়া যায় সোনা। তারপর থেকেই এমন নাম। আর এখন সেই দাঁড়ির পাশের মাঠ যেন এক টুকরো পহেলগাঁও-র বৈসরন ভ্যালি। এই মাঠের পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঝালদা এক ব্লকের ঝালদা-দরদা গ্রাম পঞ্চায়েতের মহাদেবপুর, কাঁদরা, কুলাজাঙ্গা, ডুরগি। এখানকার মানুষজন বরাবর বিকাল বেলায় এই মাঠে সময় কাটান। স্থানীয় ছেলেরা ফুটবল, ক্রিকেট যেমন খেলেন। তেমনি সকাল-বিকাল ওই এলাকার অ্যাথলিটরা দৌড়, ব্যায়াম বা শারীরিক কসরত করে থাকেন। চারদিকটা পাহাড় ঘেরা না হলেও অনেকটাই বিস্তৃত লম্বা টিলা। যা পাহাড়ের খাঁজে বরফ বা পাইন গাছ না থাকলেও তৃণভূমি বা সবুজ ভ্যালি মনে করিয়ে দেয় সন্ত্রাস কবলিত সৌন্দর্যের ওই পহেলগাঁও। তবে ওই গ্রামগুলির বাসিন্দারা নন।

Purulia
পুরুলিয়ার পুরনো ঝালদার সোনাদাঁড়ি মাঠ বা বেহড়াতল

এই সবুজ উপত্যকাকে পহেলগাঁও হিসাবে এক্সপ্লোর করেন ঝালদারই এক ব্লগার তথা বধূ। এই ভিডিও করেই তিনি সোশাল সাইট প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয় হয়ে যান। এই সবুজ মাঠেই একটি বহড়া গাছ থাকায় এলাকার মানুষজন বেহড়াতলও বলে থাকেন। কিন্তু পাহাড়ে ঘেরা এই সবুজ মাঠ যে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম খুললেই ভেসে উঠবে তা কে জানতো! তবে এখানে সারাক্ষণই ময়ূরের ডাক শোনা যায়। কপাল ভালো থাকলে বিকাল বেলায় সবুজ মাঠেও তাদের দেখা যাবে।

মহাদেবপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, “আমাদের এই গ্রামাঞ্চলের মানুষজন ভূস্বর্গ কাশ্মীরের পহেলগাঁও দেখেননি। তাই সেখানকার অপরূপ সৌন্দর্যের বিষয় জানেন না। এপ্রিলের নৃশংস জঙ্গি হামলা পহেলগাঁওয়ের চেহারাকে সামনে এনে দেয়। কিন্তু তখনও ভাবিনি আমাদের এই বেহড়াতল বা সোনাদাঁড়ি মাঠ অনেকটাই পহেলগাঁওয়ের মতো। আমাদের ঝালদার একজন মহিলা এই সবুজ মাঠটিকে মিনি পহেলগাঁও হিসাবে তুলে ধরেন। তারপর মনে হয় সত্যিই তো! এ যেন একটুকরো পহেলগাঁওয়ের ওই ভ্যালি।” পুরনো ঝালদার বাসিন্দা জিতু প্রামাণিক বলেন, “এই সবুজ মাঠ ভাইরাল হওয়ার পর পর্যটকরা এখানে আসছেন। প্রতিদিনই নিত্যনতুন ইউটিউবার বা যারা ভ্রমণ সংক্রান্ত ব্লগার তারা এসে ভিড় জমাচ্ছেন। ভালো লাগছে বেশ। আমরা চাই এই এলাকা জঙ্গলমহলের এই জেলার পর্যটনে যুক্ত হোক।”

Purulia
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়তলির টুরগা জলাধার

পুরনো ঝালদার মতোই আরেক মিনি পহেলগাঁও অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে টুরগা জলাধারে। প্রখর দাবদাহে জল শুকিয়ে যাওয়ায় সবুজ মাঠে ভিড় লেগেই থাকছে। পাশ দিয়ে জলাধারের স্রোত। চারপাশ সবুজে ঘেরা ঘন জঙ্গল। শান্ত এই পাহাড়তলিতে নানান পাখির ডাক। সেই সঙ্গে হাতিদের জল পান করার ঠিকানা। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। পাহাড়ের কোলে এমনই সবুজ শীতল ল্যান্ডস্ক্যাপ। তাই পর্যটকরা যেমন সেলফি তুলছেন। তেমনই চলছে ফটোশুট। পাহাড়ের কোলে এই ছবিকে পহেলগাঁও হিসাবে নিজের ভিডিওতে তুলে ধরেছিলেন শিক্ষক তথা প্রকৃতিপ্রেমী জনার্দন মাহাতো।

Purulia
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়তলির টুরগা জলাধারে বাড়ছে পর্যটকের ভিড়

তাঁর কথায়, “পুরুলিয়াতেও এক টুকরো পহেলগাঁও আছে। এখানে বেড়াতে আসুন। শান্ত নিরিবিলি অরণ্যে আপনাকে শান্তি এনে দেবেই।” তা হয়তো দিতে পারেনি ভূস্বর্গ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ের ওই বৈসরন ভ্যালি। তুষারাবৃত পাহাড়, পাইন বন, ভেলপুরি না থাক। পুরুলিয়ার এই মিনি পহেলগাঁওয়ের সবুজ উপত্যকায় নেই রক্তের দাগ। তাই পহেলগাঁওয়ের বিকল্প খুঁজতে অন্ধ্রপ্রদেশের আরাকু ভ্যালি, হিমাচল প্রদেশের খাজিয়ার, উত্তরাখন্ডের চোপতার সঙ্গে উঠে আসছে পুরুলিয়ার এই জোড়া ল্যান্ডস্কেপও!

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement