বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি : ‘বর্ষায় বনবাস’-এটাই ছিল ট্যাগ লাইন। তিন বছর ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে ধারাবাহিক প্রচারের সুফল এবার মিলতে শুরু করেছে। ভরা বর্ষায় রূপসী ডুয়ার্সের সৌন্দর্য পরখ করতে পাড়ি জমাতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। স্বভাবতই পালটাতে শুরু করেছে লাটাগুড়ি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার ছবি।
সাধারণত ১৫ জুন জঙ্গল বন্ধ হতে ডুয়ার্সের পর্যটনকেন্দ্রগুলো শুনশান হয়ে যায়। এতদিন এটাই ছিল পরিচিত ছবি। রিসর্ট, হোমস্টেগুলো ভুতুড়ে বাড়ির মতো ফাঁকা পড়ে থাকত। সেখানকার কর্মী-সহ পর্যটন নির্ভর পরিবারগুলোর বেহাল দশা হত। বিকল্প কাজের খোঁজে তারা ছুটতেন। ওই সংকট কাটিয়ে উঠতে ‘বর্ষায় বনবাস’ ট্যাগ লাইনে ২০২১ সাল থেকে প্রচারে নামে ‘লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’। সংস্থার সম্পাদক দিব্যেন্দু দে বলেন, “আমরা প্রচারে তুলে ধরেছি শীতকাল নয়। ডুয়ার্সের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে বর্ষায় আসুন। দেরিতে হলেও এবার সাড়া মিলতে শুরু করেছে। সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও পর্যটক আসছে।” তিনি জানান, শীতে অনেকেই জঙ্গলে আসেন ঠিকই কিন্তু সবুজ ডুয়ার্সকে দেখার সুযোগ মেলে না। বেশ রুক্ষ ছবি থাকে। এছাড়াও ওই সময় ভ্রমণের খরচ অনেক বেশি থাকে। কিন্তু বর্ষায় অনেক কম খরচে অনেক বেশি অনন্দ উপভোগের সুযোগ মিলছে।
রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের দাবি যে অমূলক নয় সেটা পর্যটকরাও বুঝতে পারছেন। ঢেউয়ের ফেনায় সাদা হয়ে ওঠা উত্তাল মূর্তি, ডায়না নদী দেখে উচ্ছ্বাসে ভেসেছেন দমদমের মতিঝিল এলাকার বাসিন্দা সুখেন্দু ঘোষ। তিনি বলেন, “এতদিন গল্পে পড়েছি, খবরে দেখেছি। এবার চোখে দেখা হলো সুন্দরী নদীগুলো। যেন সবুজ গালিচার উপর দিয়ে ওরা বইছে।”
রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা জানান, এখন হাতি দেখতে জঙ্গলে যেতে হয় না। কারণ, বর্ষায় প্রতিদিন লোকালয়ে বুনো হাতির দল ঘুরে বেড়ায়। তাই রিসর্টে বসে বুনোদের ছবি তুলতে পারছেন পর্যটকরা। শুধু কি তাই! বর্ষায় অর্কিডের ফুলে ভরে থাকে ডুয়ার্স। এই সময় পাট কেটে জলে ভাসানো, ধান বোনার কাজ চলে। সেটাও অদ্ভুত সুন্দর। আশপাশের গ্রামের পথে পা বাড়াতে নদী নালায় জাল পেতে ছেলেদের কুচোমাছ ধরা, সবুজে সবুজ চা বাগান মিলে যায় সহজে। মুর্শিদাবাদের লালগোলার বাসিন্দা উত্তম মজুমদার ও তার স্ত্রী শিখাদেবী এতো সবুজ দেখে রীতিমতো আত্মহারা। পেশায় শিক্ষক উত্তমবাবু বলেন, “শীতেও ডুয়ার্সে এসেছি। কিন্তু বর্ষার ডুয়ার্সের তুলনা হয় না। ঠান্ডা আবহাওয়া। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘুরছি। এই ট্রিপের কথা অনেকদিন মনে থাকবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.